ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এবারের বইমেলা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে
- আপডেট সময় : ১০:০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১ ২৬২ বার পড়া হয়েছে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ ইংরেজি অনুবাদ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি : পিআইডি
এই জায়গাটি একাধিক কারণে ঐতিহাসিক। এখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত কুখ্যাত পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী এখানেই আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করেছিল। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখার পর জনসমুদ্রে ভেসে এখানেই এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন গণনায়ক, পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের মিত্রবন্ধু ‘ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দরা গান্ধি’ সফরে এসে এই জায়গাটিতে তার নামে করা ইন্দিরা মঞ্চে বক্তব্য রেখেছিলেন।
ঋদ্ধিমান, ঢাকা
হাজারো বাধা ডিঙ্গিয়ে অবশেষে ২৮দিনের অমর একুশে বইমেলার যাত্রা শুরু হলো। মহামারিকালে এই বিশাল আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানিয়েছেন, প্রকাশক-লেখক-পাঠকসহ সকল স্তরের মানুষ। বাংলাএকাডেমি কর্তৃপক্ষ করোনার বিষয়টি মাথায় রেখে বিশাল পরিবেশে মেলার আয়োজন করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে করে খোলামেলা পরিবেশে বইপ্রেমীরা ঘুরে ঘুরে বই দেখা ও কেনার সুযোগ পাবেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলায় প্রবেশের জন্য নারী-পুরুষের আলাদা প্রবেশপথ রয়েছে। সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে গেলে আর্চওয়ের সামনে প্রথমে তাপমাত্রা মাপা হয়। আর্চওয়ে পেরিয়ে যাওয়ার পর রাখা হয়েছে হ্যান্ডস্যানিটাইজার। দণ্ডায়মান যন্ত্রে পা দিয়ে চাপ দিলে বিশুদ্ধকরণ তরল চলে আসবে হাতে। জীবাণুমুক্ত হয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল পরিসর, প্রচুর ফাঁকা জায়গা রেখে স্টল বিন্যাস করা হয়েছে। অনেক বছর পর এ রকম অবস্থা আবার দেখা গেল। বইমেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা, নির্ধারিত ফেব্রুয়ারি মাসে মেলা শুরু না হয়ে দেড় মাস পর মেলা শুরু হওয়া, এসবেরই একটা ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।
স্বাধীনতাস্তম্ভ ঘিরে মেলা
মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবারের মেলার আয়োজন স্বাধীনতাস্তম্ভকে ঘিরে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অমর একুশের স্মৃতিবাহী বইমেলা এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাধীনতার মাস মার্চে এসে। সেই জায়গায় হচ্ছে মেলা, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল মাতৃভাষা রক্ষার প্রতিবাদ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চে যেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। ’ সেই ঐতিহাসিক ভাষণ আজ বিশ্ব হ্যারিটেজ।
এই জায়গাটি একাধিক কারণে ঐতিহাসিক। এখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত কুখ্যাত পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী এখানেই আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করেছিল। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখার পর জনসমুদ্রে ভেসে এখানেই এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন গণনায়ক, পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের মিত্রবন্ধু ‘ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দরা গান্ধি’ সফরে এসে এই জায়গাটিতে তার নামে করা ইন্দিরা মঞ্চে বক্তব্য রেখেছিলেন।
ইতিহাসের দুই মাহেন্দ্রক্ষণ স্মরণে, ঐতিহাসিক স্থানে, মহামারির দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আয়োজিত এবারে মেলা নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে সাজানো হয়েছে বই মেলা। এটিও ইতিহাসের অংম হয়ে থাকবে।
সন্ধ্যার পর মেলা প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হলো মনোরম এক পরিবেশের। স্বাধীনতাস্তম্ভের ভেতর থেকে প্রস্ফুটিত বর্ণিল আলোর বিচ্ছুরণ স্বচ্ছ পানিতে পড়ে এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করে, যা উপভোগের সুযোগ আগে কথনও বইপ্রেমীদের হয়নি। স্তম্ভের জলাধারের উত্তর পাশে রয়েছে প্যাভিলিয়নগুলোকে। পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এক থেকে তিন ইউনিটের স্টলগুলোকে।
মেলার রীতি অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই তথ্য কেন্দ্র থেকে মেলায় আসা নতুন বইয়ের খবর প্রচার করা হতো। এবারে মেলার প্রথম দিন প্রকাশিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটির ইংরেজি সংস্করণ। গত বারের মেলায় এসেছিলো শেখ মুজিবুর রহমান লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বাংলা সংস্করণ। এবার প্রকাশিত হলো ইংরেজি সংস্করণ। ‘নিউ চায়না ১৯৫২’। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইটির অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাসিনা ও রেহানা অ-রূপকথার দুই বোন
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তাঁর দুই মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি দু’বোনের সাহসী ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থে। বইটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। মূল্য ৩৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধসমগ্র
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গল্প ও উপন্যাসের সংকলন তিন খণ্ডে মেলায় এনেছে ‘সময়’। প্রতিটি খণ্ডের দাম এক হাজার টাকা।
দেশ পরিচয়
এই গ্রন্থে শাশ্বত বাংলার বা অভিন্ন বঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে একসময়ের পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলাদেশকে নিয়ে আলোচনা করেছেন মুনতাসীর মামুন।