ঢাকা ০৮:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হিন্দি সিনেমা জগতে এক লম্বা সফরের সমাপ্তি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুলাই ২০২১ ২৪৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দিলীপ কুমার ছবি: ইন্টারনেট

বর্ষীয়ান ভারতীয় অভিনেতা দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। তার বাবার নাম ছিলো মোহাম্মদ সারোয়ার খান। যিনি একজন ফল ব্যবসায়ী ছিলেন। কৈশোরে মুম্বাই থেকে পুনে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান।

এর কিছুদিন পর আবারও মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) ফিরে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন তিনি। ব্যবসার কাজেই একসময় ইউসুফ খানের পরিচয় হয় সে সময়কার প্রখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে, যিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বোম্বে টকিজ’ এর মালিকের সঙ্গে।


১৯৪৩ সালে ইউসুফ খান চাকরি খুঁজতে যান ‘বোম্বে টকিজ’। কিন্তু সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাকে অভিনেতার হওয়ার প্রস্তাব দেন। তার সিনেমার নাম বদলে দিলীপ কুমার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিজের আত্মজীবনীতে এ বিষয় নিয়ে লিখেছেন অভিনেতা। তিনি জানান, প্রথমে দেবিকা রানিই তাকে নাম বদলানোর পরামর্শ দেন।

বলিউডে তার অভিষেকের আগে এমন একটি নাম তাকে নিতে বলেন যে নামে দর্শক তাকে চিনবে। স্ক্রিনে তার রোম্যান্টিক আন্দাজের সঙ্গে মিলিয়ে ‘দিলীপ কুমার’ নামটি তিনিই পছন্দ করেন।

সায়রা বানুকে বিয়ের সময় দিলীপকুমারের বয়স ছিল ৪৪ বছর। সায়রা বানু ছিলেন ঠিক অর্ধেক অর্থাৎ মাত্র ২২ বছর। পরে সায়রা বানু একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই দিলীপকুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন।


নাম পরিবর্তন করার পেছনে একটি প্রধান কারণ ছিলো বাবা-মায়ের হাত থেকে বাঁচা। দিলীপ কুমার নিজের আত্মজীবনীতে লেখেন, তার বাবা অভিনয় পেশার একেবারে বিরোধী ছিলেন। এসব ‘নাটক’ মনে হত তার। উপরন্তু বন্ধুপুত্র রাজ কাপুর অভিনয়ে পা রাখায় আরও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন তিনি।

মাসানি তাকে নিয়ে গেলেন বম্বে টকিজ-এ। প্রথম দিকে ইউসুফ ছবির গল্প বাছাই এবং চিত্রনাট্য লেখার কাজে সাহায্য করতেন। খুব ভাল জানতেন উর্দু। ফলে নিজের কাজে সুনাম অর্জন করতে সমস্যা হল না।


এক সাক্ষাৎকারে দিলীপ কুমার জানিয়েছিলেন, বাবা-মায়ের হাত থেকে বাঁচার জন্যই এই কাণ্ড করেছিলেন তিনি। তবে পরে অবশ্য বাবা মেনে নিয়েছিলেন ছেলের পছন্দ। শিগগিরই অভিনয় ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন দিলীপ কুমার।

১৯৪৪ সালে মুক্তি পায় দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাটা’। প্রথম দিকে দিলীপ কুমারের কয়েকটি ছবি ব্যবসা সফল ছিলো না। পরিচালক-প্রযোজক অনুরোধ করেন দিলীপকুমারকে। তিনি যেন কথা বলেন মধুবালার বাবার সঙ্গে। দিলীপ কুমারের অভিযোগ ছিল, মধুবালার বাবা তাকে অপমান করেছেন।

১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ‘মুঘল এ আজম’ দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জোয়ার ভাটা’, ‘আন’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘আন্দাজ’, ‘মুঘল ই আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘ক্রান্তি’, ‘কর্মা’, ‘শক্তি’, ‘সওদাগর’, ‘মশাল’ সহ ৫০-এর বেশি বলিউড ছবিতে কাজ করেছেন এ কিংবদন্তি অভিনেতা।

অন্য দিকে মধুবালার বক্তব্য ছিল, দিলীপকুমারের কাছে অপমানিত হয়েছেন তার বাবা আতাউল্লাহ খান। তিনি তার বাবার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারেননি। মধুবালার কথায় আতাউল্লাহর কাছে ক্ষমা চাননি দিলীপকুমার। চাপানউতোরের জেরে ভেঙে যায় দিলীপকুমার-মধুবালা প্রেম।

তপন সিনহা পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সাগিনা মাহাতো‘তে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন। এই কালজয়ী ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন স্ত্রী সায়রা বানু। আটবার তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জয় করেছেন। হিন্দি সিনেমা জগতের সবচেয়ে বড় সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে‘ পুরস্কারেও তাকে সম্মানিত করা হয়। ২০১৫ সালে সরকার দিলীপ কুমারকে দেশের দ্বিতীয় বড় সম্মান ‘পদ্মভূষণ’- এ সম্মানিত করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

হিন্দি সিনেমা জগতে এক লম্বা সফরের সমাপ্তি

আপডেট সময় : ১১:৫১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুলাই ২০২১

দিলীপ কুমার ছবি: ইন্টারনেট

বর্ষীয়ান ভারতীয় অভিনেতা দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। তার বাবার নাম ছিলো মোহাম্মদ সারোয়ার খান। যিনি একজন ফল ব্যবসায়ী ছিলেন। কৈশোরে মুম্বাই থেকে পুনে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান।

এর কিছুদিন পর আবারও মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) ফিরে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন তিনি। ব্যবসার কাজেই একসময় ইউসুফ খানের পরিচয় হয় সে সময়কার প্রখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে, যিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বোম্বে টকিজ’ এর মালিকের সঙ্গে।


১৯৪৩ সালে ইউসুফ খান চাকরি খুঁজতে যান ‘বোম্বে টকিজ’। কিন্তু সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাকে অভিনেতার হওয়ার প্রস্তাব দেন। তার সিনেমার নাম বদলে দিলীপ কুমার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিজের আত্মজীবনীতে এ বিষয় নিয়ে লিখেছেন অভিনেতা। তিনি জানান, প্রথমে দেবিকা রানিই তাকে নাম বদলানোর পরামর্শ দেন।

বলিউডে তার অভিষেকের আগে এমন একটি নাম তাকে নিতে বলেন যে নামে দর্শক তাকে চিনবে। স্ক্রিনে তার রোম্যান্টিক আন্দাজের সঙ্গে মিলিয়ে ‘দিলীপ কুমার’ নামটি তিনিই পছন্দ করেন।

সায়রা বানুকে বিয়ের সময় দিলীপকুমারের বয়স ছিল ৪৪ বছর। সায়রা বানু ছিলেন ঠিক অর্ধেক অর্থাৎ মাত্র ২২ বছর। পরে সায়রা বানু একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই দিলীপকুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন।


নাম পরিবর্তন করার পেছনে একটি প্রধান কারণ ছিলো বাবা-মায়ের হাত থেকে বাঁচা। দিলীপ কুমার নিজের আত্মজীবনীতে লেখেন, তার বাবা অভিনয় পেশার একেবারে বিরোধী ছিলেন। এসব ‘নাটক’ মনে হত তার। উপরন্তু বন্ধুপুত্র রাজ কাপুর অভিনয়ে পা রাখায় আরও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন তিনি।

মাসানি তাকে নিয়ে গেলেন বম্বে টকিজ-এ। প্রথম দিকে ইউসুফ ছবির গল্প বাছাই এবং চিত্রনাট্য লেখার কাজে সাহায্য করতেন। খুব ভাল জানতেন উর্দু। ফলে নিজের কাজে সুনাম অর্জন করতে সমস্যা হল না।


এক সাক্ষাৎকারে দিলীপ কুমার জানিয়েছিলেন, বাবা-মায়ের হাত থেকে বাঁচার জন্যই এই কাণ্ড করেছিলেন তিনি। তবে পরে অবশ্য বাবা মেনে নিয়েছিলেন ছেলের পছন্দ। শিগগিরই অভিনয় ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন দিলীপ কুমার।

১৯৪৪ সালে মুক্তি পায় দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাটা’। প্রথম দিকে দিলীপ কুমারের কয়েকটি ছবি ব্যবসা সফল ছিলো না। পরিচালক-প্রযোজক অনুরোধ করেন দিলীপকুমারকে। তিনি যেন কথা বলেন মধুবালার বাবার সঙ্গে। দিলীপ কুমারের অভিযোগ ছিল, মধুবালার বাবা তাকে অপমান করেছেন।

১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ‘মুঘল এ আজম’ দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জোয়ার ভাটা’, ‘আন’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘আন্দাজ’, ‘মুঘল ই আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘ক্রান্তি’, ‘কর্মা’, ‘শক্তি’, ‘সওদাগর’, ‘মশাল’ সহ ৫০-এর বেশি বলিউড ছবিতে কাজ করেছেন এ কিংবদন্তি অভিনেতা।

অন্য দিকে মধুবালার বক্তব্য ছিল, দিলীপকুমারের কাছে অপমানিত হয়েছেন তার বাবা আতাউল্লাহ খান। তিনি তার বাবার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারেননি। মধুবালার কথায় আতাউল্লাহর কাছে ক্ষমা চাননি দিলীপকুমার। চাপানউতোরের জেরে ভেঙে যায় দিলীপকুমার-মধুবালা প্রেম।

তপন সিনহা পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সাগিনা মাহাতো‘তে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন। এই কালজয়ী ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন স্ত্রী সায়রা বানু। আটবার তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জয় করেছেন। হিন্দি সিনেমা জগতের সবচেয়ে বড় সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে‘ পুরস্কারেও তাকে সম্মানিত করা হয়। ২০১৫ সালে সরকার দিলীপ কুমারকে দেশের দ্বিতীয় বড় সম্মান ‘পদ্মভূষণ’- এ সম্মানিত করে।