পদ্মা পারে মানব স্রোত, অথৈ জলে ভেসে গেছে স্বাস্থ্যবিধি!

- আপডেট সময় : ১২:৫২:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১ ১৯০ বার পড়া হয়েছে
ছবি সংগ্রহ
‘ঈদ পরবর্তী কভিড সংক্রমণ নিয়ে মহাভাবনায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা’
করোনার সংক্রমণ আর কতটা ঊর্ধগতি হলে চৈতন্য ফিরবে মানুষের? আর কতটা সতর্ক বার্তা এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে? আর কত লকডাউন হলে পর বুঝবে মানুষ, না এবারে ফিরতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার ও দৈহিক দূরত্বে?
পশুর হাটে, বাজারে, রাস্তায়, পাড়া-মহল্লায় কোথাও মেলেনি এর জবাব! কতটা হতভাগা হলে পরে একটি সমাজের এই পরিণতি দেখতে হয়? তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এবারের ঈদ যাত্রা। ঘাটে ঘাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বাস, লঞ্চ, ফেরিঘাট আর জাতীয় সড়কের হাল দেখতে গিয়ে যে কোন সমাজসচেতন মানুষ বাকরুদ্ধ হবারই কথা।

তারপরও এটাই এখনকার পরিচিত দৃশ্য! পদ্মা পারে মানবস্রোত। স্বাস্থ্যবিধি ভেসে গিয়েছে প্রমত্তা পদ্মার অথৈ জলরাশিতে। ঈদের পর এর পরিণতি কি হবে, সেই ভাবনায় ঘুম হারাম জনস্বাস্থ্য বিশেষ বিশেজ্ঞদের।
এই চিত্র অর্থনৈতিক উদীয়মান বাংলাদেশের। অর্থনীতির যে পরিমাণ উন্নয়ন ঘটেছে, সেই ভাবে মানুষের মধ্যে সচেতনতার উন্নয়ন অনেকটা পিছনে বলে মনে করছেন সচেতন সমাজ।
রাত পোহালেই ঈদ! যে করেই ঘরে ফিরতে হবে। মঙ্গলবার সূর্য ওঠার আগে থেকেই ঢাকার অদূরে শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল! বর্তমান কভিড বিশ্বে এই দৃশ্য হতাশার সামিল। ফেরি-লঞ্চে ওঠা নিয়ে উপচে পড়া মানুষের প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে দৈহিক দূরত্ব অতীত!
করোনা অতিমারির মধ্যেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই পদ্মা পারি দিচ্ছেন মানুষ। শিমূলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কথা থাকলেও মানছে না কোন নির্দেশনা। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই ঝুঁকিতে চলাচল করছে লঞ্চগুলো।
সকাল থেকেই লঞ্চঘাটে পা রাখার জায়গা নেই। ঠিক একই অবস্থা ফেরিঘাটেও। গাদাগাদি করে মানুষ লঞ্চে ও ফেরিতে যাচ্ছেন। হাজারো মোটরবাইকের বহর।
প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে নিজ বাড়ি যাচ্ছেন। পদ্মায় প্রচন্ড স্রোত। এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে
ছোট লঞ্চগুলো। লঞ্চ মালিকরা মুনাফার লোভে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ইতিপূর্বে একাধিক দূর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণ ভাসিয়ে নিয়েছে পদ্মা। কিন্তু তারপর পরও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিআইডব্লিটিসি সূত্রের খবর, মুুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলা বাজার নৌরুটে ১৬টি ফেরি এবং ৮৬টি লঞ্চর চলাচল করছে। মানুষের চাপ সামাল দিতে এসব লঞ্চ ও ফেরি হিমশিম খাচ্ছে।
প্রচন্ড স্রোতে ফেরি চলছে ধীরগতিতে। দুইটি নতুন ফেরি যুক্ত করেও যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে দেওয়া যাচ্ছেনা। ভরাবর্ষায় পূর্ণ যৌবন ফিরে পেয়েছে পদ্মা। ভয়ঙ্কর রূপ পদ্মার। স্রোত ও জল বৃদ্ধির কারণে তিন-চার কিলোমিটার ঘুরে চলছে ফেরি। একারণে সময় ও জ্বালানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। শিমুলিয়া ঘাটে পারাপরের অপেক্ষায় যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন ও মোটরবাইকের দীর্ঘ লাইন।
বিআইডব্লিউটিসির সহ-মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ আলী জানান, উত্তাল পদ্ময় ফেরি চলছে ধীর লয়ে। অতিরিক্ত স্রোতে কয়েকটি ফেরি চলতে পারছে না। একারণে ফেরির ট্রিপ কমছে। শিমুলিয়া
ঘটেই পণ্যবাহী ট্রাকসহ কয়েক কিলোমিটার যানবাহন। ফেরিঘাটে মানুষের পারাপার এবং যানবাহন ব্যবস্থাপনায় বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসাইন সংবাদমাধ্যমকে জানান, স্বাস্থ্যবিধি পালন ও হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে ও ফেরিতে উঠতে গিয়ে কেউ দুর্ঘটনার শিকার না হন, তা সামাল দিতে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।