করোনা লাগামহীন সংক্রম ঠেকাতে আটগাট বেঁধে নেমেছে সরকার। এবারে ব্যতিক্রম এক লকডাউন দেখবে ঢাকা। চলবে না ইঞ্জিন চালিত কোন যান। পুলিশের পাশাপাশি জনসচেতনায় থাকবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও আনসার।
কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া রাস্তায় বেরুলেই গ্রেফতার করা হবে। এমন সাফ বার্তা দিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।
করোনার ব্যাপকতা কতটা চূড়ায় পৌছালে মানুষের জন্য গ্রেফতার বার্তা আসে? সংক্রমণের লাগাম টানতে তাই বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এসময় যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে পা রাখলেই গ্রেফতার! এদিন ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকা সিল হয়ে যাবে।
বুধবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত জারি করা প্রজ্ঞাপনে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকেই কঠোর লকডাউন। চলবে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে।
মানুষকে রক্ষায় কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে হাসিনা সরকার। অবশ্য গত সোমবার থেকেই শপিংমল, দোকানপাঠ ও মার্কেট বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন তথা রেল, আন্তঃজেলা গণপরিবহন, লঞ্চ এবং অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল। সচল রয়েছে আমদানি-রপ্তানি এবং পণ্যপরিবহন।
লকডাউন চলাকালীন মানবিক সহায়তায় ২৩ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীর মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রক এ বরাদ্দ প্রদান করেছে। বরাদ্দের শর্তানুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ বরাদ্দকৃত অর্থ ইউনিয়ন কেন্দ্রিক উপ-বরাদ্দ প্রদান করবেন।
৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদেরকে এই বরাদ্দ থেকে খাদ্য সহায়তা যেমন চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু ইত্যাদি প্রদান করতে হবে।
বন্ধর তালিকায় থাকছে সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত অফিস। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচল রাখা হবে শিল্পকারখানার চাকা। জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ সৎকার) ছাড়া কেউ কোনোভাবে ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেফতারের কথা। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে।
কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে বিধি নিষেধ কার্যকর করার জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় বৃহস্পতিবার থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয়ভাবে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবেন।
আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা (কৃষিপণ্য-উপকরণ-খাদ্যশস্য-খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, করোনা টিকাদান, রাজস্ব আদায় কার্যাবলি, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট,
সংবাদমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি, ফার্মাসিউটিক্যালসহ জরুরি পণ্য-সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করা যাবে।
কাঁচাবাজার-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি অনলাইন অর্ডার সরবরাহ করা যাবে।
চালু থাকবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট । বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন। লকডাউনের খবরে গত সোমবার থেকেই হাজারো ভোগান্তিকে সঙ্গী করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।