উন্নত সমাজ গঠনে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে : ড. হাছান মাহমুদ

- আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ এপ্রিল ২০২১ ২৩৯ বার পড়া হয়েছে

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
উন্নত সমাজ গঠনে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। গণমাধ্যম যখন সঠিকভাবে কাজ না করে, তখন বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ড. হাছান বলেন, আজকের পৃথিবীটা এমন হয়ে গিয়েছে যে, মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মানুষ এখন অন্যকে নিয়ে ভাবছে না। এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়েও নয়। মানুষ শুধু ছুটে চলছে, কার আগে কে যাবে। কাকে টপকিয়ে, ল্যাং মেরে ওপরে যাবে, সেটা নিয়েই ছুটে চলেছে। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
শুক্রবার পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের ‘সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ও রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিগারুল ইসলাম জিগারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল, চন্দ্রঘোনা খ্রিস্ট্রিয়ান ও কুষ্ঠ হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি অনেকের কাছে একটি ব্রত। বহু সাংবাদিক আছেন, যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করলে সচিব হয়ে অবসরে যেতে পারতেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ভালো ছেলেরা সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে সাংবাদিকতাকে ভালোবেসে এই পেশায় আসেন। সাংবাদিকতার নামে গুটি কয়েক অপসাংবাদিকের ব্যক্তিগত দুর্নাম যাতে সামগ্রিক সাংবাদিক সমাজকে কলঙ্কিত করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই, শুধু বস্তুগত উন্নয়ন নয়। বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে গত ১০০ বছরে ইউরোপের দেশগুলো অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু সেখানে মানবিকতা হারিয়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষত্রে সেখানে মূল্যবোধ হারিয়েছে। সেখানে পারিবারিক মূল্যবোধ, বন্ধন হারিয়েছে। ইউরোপের সমাজে শতকরা ৩০-৫০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আমরা সেই সমাজ চাই না। আমরা চাই, এমন একটি সমাজ, যেখানে বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র উন্নত হবে, একটি উন্নত সমাজও হবে। যেখানে মানবিকতা, মূল্যবোধ, দেশাত্মবোধ ও মমত্ববোধ থাকবে।
সাংবাদিকদের যোগ্যতা নির্ধারণের ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আমি যখন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নানা প্রোগ্রামে যাই, তখন অনেকে বলেন সাংবাদিকতায় প্রবেশের জন্য একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এর বিপক্ষে। কারণ, পৃথিবীতে বহু মানুষ আছেন, যাদের কোনও ডিগ্রি ছিল না। অথচ তারা জ্ঞানী। কবিগুরু, কাজী নজরুল মেট্রিক পাস করেননি। বিলগেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বার ফেল করে আউট হয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের জ্ঞান পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। তাদের জ্ঞান নিয়ে গবেষণা হয়, পিএইচডি ডিগ্রি হয়।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, অনেক সাংবাদিক আছেন, যিনি মাত্র মেট্রিক পাস, কিন্তু তিনি অনেক ভালো লেখেন। আবার অনেক সাংবাদিক আছেন, যিনি মাস্টার্স পাস হয়েও ভালো রিপোর্ট লিখতে পারেন না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে ডিগ্রি নির্ধারণের বিপক্ষে। সারা দেশের সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে একটি স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যাতে যে কেউ সাংবাদিকতায় ঢুকে যেতে না পারেন। একটা অনলাইন খুলেই অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন। তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু সাংবাদিকতা নয়, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকদেরকে রাষ্ট্রের ও সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি আমরা যাতে উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি, সেটির ব্যাপারেও লিখতে হবে। একইসঙ্গে যিনি কথা বলতে পারেন না, যার ভাষা হারিয়ে গেছে, তার জন্যও লিখতে হবে।