স্বাস্থ্যবিধিকে সঙ্গী করে ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন তো?

- আপডেট সময় : ১০:২১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ ২৩৩ বার পড়া হয়েছে
ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে লম্বা যানজটের অতি পরিচিত চিত্র (পুরানো ছবি) সংগ্রহ
“গোটা দুনিয়া কাবু করা অজানা-অচেনা ভাইরাসটি নানা রূপে মানবজাতিকে আক্রমণ করে চলেছে। কবে নিস্তার পাবে এমন কোন নির্দিষ্ট বার্তা নেই কারো কাছে। যেমনটি ছিলো না এই মাহামারি আগমণের বার্তা”
ঈদের ঘরমুখো মানুষের স্রোত বইতে শুরু করবে বুধবার রাত থেকেই। প্রতিটি মহাসড়ক তথা জাতীয় সড়কে মাইলের পর মাইল যানবাহনের জট লেগে যাবে। হাজারো কষ্টকে পায়ে ঠেলে নাড়ির টানে ছুটে চলার শক্তিই আলাদা। স্বজনরা যে পথ চেয়ে তাকিয়ে আছেন। ঐতো আমার খোকা, কারো ভাই-বাবা আসছেন। সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ করার আনন্দ চির অম্লান। যুগ যুগ ধরে বাংলায় কেন, গোটা দুনিয়ায় চলে আসছে উৎসব পার্বন।

ইতিহাস বলছে ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ঈদ উপলক্ষে গ্রামে ছুটে যান। সেদিক থেকে দ্বিতীয় সারিতে বাংলাদেশ। ঈদ উপলক্ষে কমপক্ষে কোটি লোকের বেশি রাজধানী ছেড়ে যান। ঈদের ছুটিতে ব্যস্ততম ঢাকা ফাঁকা নগরীতে পরিণত হয়। স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কমপক্ষে দিন পনেরো দিন।
দুয়ারে ঈদ!
সময় অতিমারির। তারপরও বাঙালির জীবনে ঘুরে ফিরেই উৎসব আসে। আর সপ্তাহখানেক পরই ঈদুল আযাহা। মুসলিম সম্প্রদায়ের ত্যাগের উৎসব। এদিনে রীতি অনুযায়ী পশু কোরবানীর দিয়ে সৃস্টিকর্তার সন্তুষ্টি আদায়ের নির্দেশনা পূর্ণ করা হয়ে থাকে।
একারণে ঢাকাসহ সারাদেশে বসবে কোরবাণীর পশুর হাট। তাতে বাড়বে ক্রেতাবিক্রেতার সমাগম, পশুর রক্ষাবেক্ষণ সব মিলিয়ে সাত দিনের এক মহাযজ্ঞ চলবে দেশজুড়ে। এ অবস্থায় অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা চলবে না।
সবার আগে স্বাস্থ্যবিধি
গোটা দুনিয়া কাবু করা অজানা-অচেনা ভাইরাসটি নানা রূপে মানবজাতিকে আক্রমণ করে চলেছে। কবে নিস্তার পাবে এমন কোন নির্দিষ্ট বার্তা নেই কারো কাছে। যেমনটি ছিলো না এই মাহামারি আগমণের বার্তা। হঠাৎ চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে আজ গোটা বিশ্বকে গ্রাস করে
ঈদে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলবে ট্রেন
নেওয়া ভাইটির নাম কভিড-১৯। যার কাছে জিম্মী দুনিয়ার মানুষ। এ অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে ভরসা হচ্ছে টিকা করণ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। নিয়ম মাফিক অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা। আপনি যেখানেই যাবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করবেন। কারণ, একমাত্র স্বাস্থ্যবিধির মান্যতাই কভিড থেকে রক্ষার অন্যতম উপায়।
কভিড ও গণপরিবহ
প্রথম এবং প্রথম নিজেকে মানতে হবে, নিজের মঙ্গলের জন্য করণীয় কি? তারপর সিদ্ধান্ত। আপনি কি এবারের ঈদে বাড়ি না গিয়ে থাকতে পারবেন না? যদি তা না হয়, তবে অবশ্যই গোটা পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথাটি প্রথম বিবেচনায় নিয়েই ঘরের বাইরে পা রাখুন। চলার পথে কারো অবহেলা মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে। যেহেতু এই বিরাসটির বিস্তার মানুষ থেকে মানুষে। সে বিষয়টি কঠোরভাবে পালন করতেই হবে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা এই মুহূর্তে কারো জানা নেই।
স্বাভাবিক সময়ের ঈদ যাত্রা : পুরানো ছবি
ঈদে সকল গণপরিবহন চলবে
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সাতদিন সবধরণে গণপরিবহন চলাচল করবে। যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা রয়েছে। এই সময়টিতে দূরপাল্লার বাস এবং লঞ্চে সবচেয়ে ভিড় হবার কথা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি খুবই কঠিন। কারণ, জলপথে যারা যাতায়ত করে থাকেন, তাদের বিশাল একটা অংশ স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা করেন না।
গতবারের ঈদেও এমনি পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। অথচ দেশে প্রতিদিন প্রায় গড় ১১ হাজার মানুষ কভিড আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় জলপথে যাত্রীসেবার বিষয়টি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব না হলে এর পরিণতি খুব একটা মঙ্গলজনক নাও হতে পারে।
নৌপথে স্ভাবিক সময়ের ঈদ যাত্রা পুরানো ছবি
ঈদের পর কি সংক্রমণ উর্ধমুখি হবে?
হবে বললে ভুল হবে না। কারণ, যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করি। গত ঈদের চিত্রটি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। কিন্তু আমরা তা করি না। ফলে ভোগান্তি বেড়ে যায়। বাড়ে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ও দীর্ঘ হয় সংক্রমণ। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঈদকে কেন্দ্র করে গাদাগাদি করে অগুতি মানুষ যাতায়াত করে। এরপর জুন-জুলাই মাসে দেখা
ট্রেনের টিকিটের জন্য ভীড় পুরানো ছবি
যায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা। এ জন্য ঈদযাত্রাকে দায়ী করা হয়। কারণ দূরপাল্লার পরিবহন, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ থাকার পরও মানুষের ঈদযাত্রা ঠেকানো যায়নি। অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যানে বিকল্প পথে গাদাগাদি করে গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন হাজারো মানুষ। এরপর তৃণমুলেও দেখা দেয় গোষ্ঠী সংক্রমণ।
ঈদুল ফিতরের চিত্র কি বোঝায়?
চলতি বছর মে মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাতায়াতকে কেন্দ্র করে সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা করে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, জুন মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও বাড়বে। ঈদযাত্রা ঠেকাতে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে চালু রাখা হয়েছিল আন্তঃজেলা পরিবহন ব্যবস্থা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার মানুষ গ্রামে আসা-যাওয়া করেন। এর মধ্যেই মে মাসের মধ্যভাগ থেকে করোনার ডেলটা ধরণ আশঙ্কাহারে ছড়িয়ে পড়ে।
গত ঈদে ফেরিতে পারাপারের দৃশ্য
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাই সত্য
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণ করে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও বাড়তে থাকে। গত ১৩ দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১ হাজার করে শনাক্ত এবং শ’দুয়েকের ওপরে আনাকাঙ্খিত মৃত্যু হচ্ছে। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই আসছে ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা। এর মধ্যেই সাতদিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা এলো।
ফেরিতে পারাপার পুরানো ছবি
এ অবস্থায় মানবস্রোত নামবে গ্রামের পথে। ঈদ শেষে ফের ঢাকামুখো মানবস্রোত। সবমিলিযে ঈদের পরের পরিস্থিতির অপেক্ষায় থাকতে হবে। যদি সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের ঘোষণা রয়েছে।