পেঁয়াজ বীজ চাষের জীবন্ত কিংবদন্তী শাহিদা বেগম
- আপডেট সময় : ১১:৩৪:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মার্চ ২০২১ ২১৫ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক, ঢাকা
প্রায় ১৮ বছর ধরে চাষ করছেন পেঁয়াজ বীজ। পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজ চাষ করে পেয়েছেন বহু পুরস্কার। হয়েছেন দেশের সেরা নারী কৃষক। বীজ বিক্রি করে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। তিনি হচ্ছেন ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষি শাহিদা বেগম। জেলা সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে তার বাড়ি। শাহিদা বেগম পেঁয়াজের বীজ চাষ করে শুধু আত্মনির্ভরশীল নয় বরং অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন। গত বছর ২০০ মণ পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করে পেয়েছেন ৪ কোটি টাকা। এছাড়াও ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার স্থানীয় কৃষক তো বটেই, পুরো বাংলাদেশে বীজ সরবরাহ করেন তিনি। কারণ তার দেওয়া বীজে ভেজাল নাই।
শাহিদা বেগমের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজে সহায়তা করেন তার স্বামী বক্তার উদ্দিন খানও। যিনি পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, তিনি চাকরি করেন সোনালী ব্যাংকে। শাহিদা বেগম নিজেই গড়ে তুলেছেন পেঁয়াজের বীজের কারখানা। সেখান থেকেই বীজ প্যাকেটজাত করা এবং ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। তার তৈরি করা বীজ ক্রেতাদের কাছে পরিচিত ‘খান বীজ’ নামে। তার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ হলো তাহেরপুরী, সুখ সাগর, নাসিক কিং, বারী-১, বারী-৪, বারী-৫ জাতের।
আরেক কৃষক সুমন জোমাদ্দার বলেন, ‘শাহিদা বেগম শুধু পরিবর্তন করেননি, পেঁয়াজ চাষে তার সফলতা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে দেশে। আমরা তার দেখাদেখি এখন অধিক পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজের চাষ শুরু করেছি। আগে ছিল টিনের ঘর, এখন আমার বাড়িতে বিল্ডিং হয়েছে। এভাবে যদি পেঁয়াজ বীজের চাষ করতে পারি আমরা তাহলে সামনের দিনে পেঁয়াজের কোনও ঘাটতি থাকবে না দেশে।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা বীজ ব্যবসায়ী রইচ মেম্বার বলেন, ‘আমি এই বীজের ব্যবসা করছি অনেক বছর। ফরিদপুর থেকেই বীজ কিনে নিয়ে ব্যবসা করতাম। তখন এমন বিপ্লব দেখিনি। শাহিদা বেগম বীজ চাষে আসার পর থেকে এই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। সারাদেশে তার মতো এতবড় পেঁয়াজ বীজ চাষি নেই। যে কিনা একাই এক’শ থেকে দেড়শো বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি পেঁয়াজ বীজ চাষ করতে। সেখানে সর্বোচ্চ একজন কৃষক চাষ করে দশ বিঘা বা বিশ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ। কিন্তু একজন নারী পেঁয়াজ বীজ চাষি এক’শ থেকে দেড়শো বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ যা সারাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বের কোথাও নেই।’
শাহিদা বেগম জানান, কৃষক পরিবারের বউ হওয়ার কারণে আগে থেকেই নানা কৃষিকাজের সঙ্গে পরিচয় ছিল তার। তার শ্বশুর মূলত পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু কখনোই আসলে বেশি পরিসরে চাষ করা হয়নি। তিনি নিজেও অনেকটা শখের বশেই এই চাষ শুরু করেন। আশপাশের কেউ কেউ খুব কম করে পেঁয়াজের বীজ চাষ করতো। আমারো মনে হলো আমি করে দেখি, তাই করলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘বীজ বিক্রি করে দেখলাম যে আমি ভারোই লাভবান। পরের বছর আরও জমি বাড়াই। ৩২ মণ বীজ উঠলো। এভাবেই আমার ওঠা। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। গত বছর ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছিলাম। ঘরে তুলেছিলাম ২০০ মণ বীজ। আর এবার মোট ৩৫ একরের ওপরে জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছি। অনেক শ্রম দিতে হয়, কষ্ট করতে হয়। পেঁয়াজের বীজের অনেক যত্ন করতে হয়।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. হজরত আলী বলেন, সত্যি বলছি পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজের চাষে শাহিদা বেগম একটি নাম নয়, শুধু একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে অসামান্য সাফল্য অর্জনকারী নারী উদ্যোক্তা শাহিদা বেগম। এ ধরনের লাখ লাখ শাহিদার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে আজকের বাংলাদেশ। শাহিদা বেগম জেলার জন্য গর্বের।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর জেলায় চলতি বছরে ১ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ১ হাজার ২৬ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। যার মধ্যে দেশের মোট চাহিদার পেঁয়াজ বীজের ৪ ভাগের একভাগ বীজ থেকে আসে শাহিদা বেগমের উৎপাদিত খান বীজ থেকে।