পাঠ্যপুস্তকে শেরেবাংলা, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিব
- আপডেট সময় : ০৮:৪০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫ ৭৪ বার পড়া হয়েছে
নতুন শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় শ্রেণির একটি পাঠ্যবইয়ে চার নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নতুন একটি অধ্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে প্রত্যেকের ছবিসহ তাঁদের সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যবইয়েও ইতিহাস-সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে থাকা আমাদের জাতির পিতা অধ্যায়টি এবারের পাঠ্যবইয়ে নেই। বাংলা ও ইংরেজি বইয়েও পরিবর্তন এসেছে।
বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। এই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতিও পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য এনসিটিবি ৪১ জন বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে। এতে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।
পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনের বিষয়ে কয়েক দিন আগে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এবার বাংলা-ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধে অন্য নায়কদের আগে অবহেলা করা হয়েছে। এবার তাঁদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর অতিবন্দনা পরিহার করা হয়েছে।
বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা যেভাবে
পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের নতুন বইয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক অধ্যায়ের প্রথম অংশে প্রথমে রয়েছে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এরপর আছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছবি। পুরোনো বইয়ে একই স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় এই চার নেতার ছবি ছিল।
নতুন পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি নতুনভাবে রাখা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির নতুন এই বইয়ে একই অধ্যায়ের পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে, …পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল অপারেশন সার্চলাইট। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
একই বিষয়ের পুরোনো বইয়ে এই অংশে ছিল, …পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণের নাম দিয়েছিল অপারেশন সার্চলাইট। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।…
চতুর্থ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়েও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি রয়েছে। এই বইয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক লেখায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবির পাশাপাশি মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার ছবি স্থান পেয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে আমরা তোমাদের ভুলব না শীর্ষক প্রবন্ধে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর থেকে শুরু করে এ বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবিও যুক্ত করা হয়েছে এতে। তবে ছাপা বইয়ের এই অংশে থাকা কয়েকজন শহীদের নামের সঙ্গে নাহিয়ান নামে একজনের নামও ছাপা হয়েছে। তবে ভুলটি ধরা পড়ায় এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণে সংশোধন করে নাফিসা নামটি যুক্ত করা হয়েছে।
বিনা মূল্যের পাঠ্যবইয়ে এবার যুক্ত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি। আর এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ দেওয়া হয়েছে।
আগের মতো চিরন্তন বাণী বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় আছে। যেমন প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে (আমার বাংলা বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই অভ্যুত্থানের একটি গ্রাফিতির পাশাপাশি আগের মতো বড়োদের সম্মান করো, বাণীটি রয়েছে।