দু’দেশের বন্ধুত্ব রক্তের অক্ষরে লেখা’ শেখ হাসিনা

- আপডেট সময় : ০৩:৪৮:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ৩০৬ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড কানায়কানায় ভর্তি। উৎসুক জনতার ঠাই মিলছিলোনা ব্রিগেডে। উপচে পড়া ভিড়ে আশপাশের সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। ব্রিগেডের ইতিহাসে আর কোন দিন এমনি জনতার উপস্থিতি হবে কিনা সন্দেহ। সেদিন লাখো জনতার উপস্থিতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এসময় পাশে ছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনায়কের এটা ছিল তিনদিনের কলকাতা সফর। সেদিন তিনি উত্তাল জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরদিন অটুট থাকবে।’ তার অগ্নিঝরা ভাষণে উপস্থিত জনতা আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শনিবার বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রক কলকাতায় প্যারেড গ্রাউন্ডে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ভারতের জনগণ, সরকার, সশস্ত্রবাহিনী, বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি বঙ্গবন্ধু গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং আসামের জনগণের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ উপলক্ষ্যে শুক্রবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের বন্ধুত্ব রক্তের অক্ষরে লেখা। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ কলকাতায় অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদান চিরস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশের প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারত যেমন আশ্রয়-খাদ্য-রসদসহ সবরকম সহায়তা দিয়েছে, তেমনি হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। সে কারণে আমাদের দু’দেশের বন্ধুত্ব রক্তের অক্ষরে লেখা।
করোনাভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলাতেও ভারতের পক্ষ থেকে বিশ লাখ ভ্যাকসিন উপহার সেই বন্ধুত্বেরই স্মারক। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বিখ্যাত ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালির ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রক ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহায়তায় মহান দিবসটি উপলক্ষ্যে সেই ঐতিহ্যবাহী প্যারেড গ্রাউন্ডে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসকে সঙ্গে নিয়ে যে স্মরণসভা আয়োজন করেছে, তা একটি মাইলফলক উদ্যোগ। হাসিনা আরও বলেন, ছাত্রজীবনে জাতির পিতার কলকাতায় অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্ববহ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শহরের ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) থেকে বঙ্গবন্ধু উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
এ সময়েই তিনি জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং শুদ্ধ রাজনীতির চর্চা ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের অনন্য সম্মিলনে ধর্মনিরপেক্ষতা কীভাবে সমাজজীবনকে বদলে দিতে পারে, তা তিনি কলকাতা শহরে ছাত্রাবস্থাতেই রপ্ত করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিমবঙ্গেই প্রায় ৭২ লাখ বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন গোটা কলকাতা হয়ে উঠেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের মিলনমেলা।
ভারত সরকারের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরাগী নেতৃবৃন্দ কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। সে সময় কলকাতার কবি-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীসহ সবাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন। শেখ হাসিনা প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের মাহেদ্রক্ষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তার আত্মার শান্তি কামনা করেন। সে সঙ্গে তিনি গভীর কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের একাত্মতা ও আত্মত্যাগ।