করোনা সনদ ছাড়াই বাংলাদেশে অবাদে যাতায়ত করছে ভারতীয় ট্রাকচালকরা

- আপডেট সময় : ০৪:০১:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মে ২০২১ ১৯৮ বার পড়া হয়েছে
‘বন্দরে প্রবেশের পর পণ্য দ্রুত খালাস না হওয়ায় তাদের দিনের পর দিন থাকতে হচ্ছে, ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীরা। এতে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের’
কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়লো ৬ জুন পর্যন্ত। কার্যত কঠোর বিধিনিষেধ বলা হলেও গণপরিবহন, ট্রেন ও লঞ্চসহ সকল ধরণের যানবাহন চালু রয়েছে। করোনা রুখতেদ কঠোর বিধিনিষেধ বা লতডাউন বলতে যা বোঝায় তার তেমন কোন উপস্থিতি লক্ষ্যা করা যাচ্ছে না।
ভারতীয় ট্রাকচালকদের অবাদ যাতায়ত
এদিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। মারা গিয়েছে একাধিক ব্যক্তি। পাসপোর্ট ধারী যাত্রীদের ভারতে যাতায়তের কঠোরভাবে মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। প্রত্যেক যাত্রীর করা হচ্ছে অ্যান্টিজেন টেস্ট, নেওয়া হচ্ছে করোনার স্যাম্পল। অথচ ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা শত শত ট্রাকচালক ও খালাসিদের স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। শুধু লোক দেখানো স্প্রে করেই বন্দরে প্রবেশ করছে তারা। আর এসব ট্রাকচালক ও খালাসিদের আনা হয়নি করোনা টেস্টের আওতায়।
বন্দরে প্রবেশের পর পণ্য দ্রুত খালাস না হওয়ায় তাদের দিনের পর দিন থাকতে হচ্ছে, ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীরা। এতে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।
হিলি পানামা পোর্টের তথ্যমতে, বন্দর অভ্যন্তরে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে খালাসের অপেক্ষায় আছে ২ শতাধিক ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক। আর এসব ট্রাকের চালক ও খালাসিরা মাস্ক ছাড়া অবাধে চলাচল করছে বন্দর অভ্যন্তরে।
হিলি সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, আমরা করোনা নেগেটিভ সনদ ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে অটুট আছি। জিরো পয়েন্ট থেকে আমরা জীবণুনাশক স্প্রে করছি তাদের। যাতে করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায়।
হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত জানান, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেও করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে যেনো ভারতীয় ট্রাক চালকরা দেশে প্রবেশ করে। এ জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বারবার তাগাদা দিচ্ছি। তারা সোমবার থেকে করোনার নেগেটিভ সনদ দিয়ে চালকদের দেশে পাঠাবে বলে কথা দিয়েছেন। সোমবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমদানি-রপ্তানি চলবে।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর রামেকে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড মৃত্যু
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল পর্যন্ত গেল ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের বিশেষ করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউতে মারা যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী এ তা নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতাল পরিচালক জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১২ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৮ জন রোগীর করোনা পজিটিভ। বাকি চারজনের ছিল করোনা উপসর্গ। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাতজন রয়েছেন, বাকিরা অন্য জেলার।
এ নিয়ে গত ছয় দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে মোট ৫১ জন। যার মধ্যে শনাক্ত রোগী মারা গেছে ২৩ জন।
হাসপাতাল পরিচালক আরও জানান, রবিবার পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসিইউতে ২০৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী ৭৫ জন। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯৩ জন, রাজশাহীর ৮৪ জন, নাটোরের ১০ জন, নওগাঁর ৭ জন, পাবনার ৩ জন ও কুষ্টিয়ার ৩ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন মোট ১৫ জন করোনা রোগী।
সাত জেলায় কড়া লকডাউনের সুপারিশ
দেশে করোনার সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসতেই ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। এরইমধ্যে সাত জেলাকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখেছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে ওই জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ফলে সীমান্তবর্তী সাত জেলাে রবিবার এ বিষয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সাত জেলা হচ্ছে, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা। এছাড়া নোয়াখালী ও কক্সবাজারের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত সোমবার রাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন দেওয়া হয়েছে। যা এখনো চলছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় পুরো দেশে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন পেলে রোববারই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়েছিল। সর্বশেষ ওই বিধিনিষেধে বন্ধ থাকা সব দূরপাল্লার গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি পেয়েছিল। এরপর থেকে আন্তজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন (বাস, ট্রেন ও লঞ্চ) চলছে।
এছাড়াও হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানসমূহে আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়। চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে।