ঢাকা ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনবিআর বিলুপ্ত করে দুই বিভাগ, রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়বে না

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ ৭৫ বার পড়া হয়েছে

এনবিআর বিলুপ্ত করে দুই বিভাগ, রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়বে না

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

৫৩ বছরের এনবিআর ভেঙে গেল। এনবিআর বিলুপ্তিতে কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সব দেশেই এমন আলাদা বিভাগ রয়েছে। এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেই এমন পদক্ষে নিয়েছে সরকার। তাতে করে রাজস্ব আদায়ে কোন রকমের প্রভাব পড়বে না। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের স্বার্থ সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষিত রেখেই এটা করা হয়েছে। পলিসি একটা বিভাগ হবে, এটা অত্যান্ত ছোট একটা বিভাগ।

এনবিআর যেভাবে আছে, কতোগুলো টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী তেমনই থাকছে। আন্তর্জাতিক চর্চা হল নীতি বিভাগ আর প্রয়োগ বিভাগ এক থাকে না। এনবিআরের রাজস্ব বিভাগ ও নীতি বিভাগে পৃথক হওয়ায় প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেউদ্দিন আহমেদ বলেন, নীতি বিভাগ একটু পেশাদার লোক দিয়ে কাজ করতে হয়। অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, দেশের জিডিপি এগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। এনবিআর সেটাকে প্রয়োগ করবে। এনবিআরের যদি পলিসি নিয়েও কাজ করতে হয়, তাহলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টও থাকে।

আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এমনটি করা হলেও এক্ষেত্রে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। সুচিন্তিতভাবে এটা করা হয়েছে। এনবিআরের সদস্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণদের সঙ্গে আলাপ করে এটা করা হয়েছে। রাজস্ব আদায় সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন যে পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা গতবারের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। হতাশ হওয়ার কিছু নাই। রাজস্ব আদায় গতবারের চেয়ে কম হবে না। মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

আসন্ন বাজেট সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে বড় ঘাটতি থাকবে না। প্রকল্প, এডিপি বাস্তবায়ন এসব করা হবে বাস্তবতার ভিত্তিতে। ব্যাংক থেকে ধার করে, টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে না। কিছুটা ঘাটতি থাকবে, সেটা পূরণ করতে আমরা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি, সে ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি সফল। বিশ্বের সব দেশেই রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগ পৃথক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেমাবার রাতে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সংস্থাটি ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করেই বহুল আলোচিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।

পতিত আওয়ামী লীগের সরকার আমলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট রেখে গিয়েছিলেন। সেখানে সম্ভাব্য ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। মাহমুদ আলীর বাজেটে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে মিতব্যয়ী সাধনের দর্শন ছিল। সেই বাজেট ঘোষণার দুই মাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অগাস্টে যে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের হাল ধরেছে তাদেরকেও আগের সরকারের অর্থ কঠোর মিতব্যয়ী হওয়া নীতি আরও শক্তভাবে সামনে এগিয়ে নেয়।

আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট বর্তমান বাজেটের চেয়ে আকারে ছোট হবে কি না? এমন প্রশ্নের সরাসারি উত্তর না দিয়ে বলেন, অর্থ উপদেষ্টা বাজেট কেমন হবে সেটা সময় হলেই জানতে পারবেন। মোটামুটি বাজেটটাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের গ্যাপ বা ঘাটতি রেখে আমরা করবো না। বাস্তবসম্মত এডিপি বাস্তবায়ন করবো। ধার করে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো না।

আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এমনটি করা হলেও এক্ষেত্রে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সুচিন্তিতভাবে এটা করা হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১২টি ক্রয়প্রস্তাব উত্থাপন হওয়ার পর ১০টি অনুমোদন করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গানভর সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে টিসিবির জন্য প্রতি লিটার ১৬১ টাকা দরে এক কোটি ১০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান অয়েল ক্রয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

এনবিআর বিলুপ্ত করে দুই বিভাগ, রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়বে না

আপডেট সময় : ০৯:০৮:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

৫৩ বছরের এনবিআর ভেঙে গেল। এনবিআর বিলুপ্তিতে কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সব দেশেই এমন আলাদা বিভাগ রয়েছে। এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেই এমন পদক্ষে নিয়েছে সরকার। তাতে করে রাজস্ব আদায়ে কোন রকমের প্রভাব পড়বে না। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের স্বার্থ সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষিত রেখেই এটা করা হয়েছে। পলিসি একটা বিভাগ হবে, এটা অত্যান্ত ছোট একটা বিভাগ।

এনবিআর যেভাবে আছে, কতোগুলো টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী তেমনই থাকছে। আন্তর্জাতিক চর্চা হল নীতি বিভাগ আর প্রয়োগ বিভাগ এক থাকে না। এনবিআরের রাজস্ব বিভাগ ও নীতি বিভাগে পৃথক হওয়ায় প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেউদ্দিন আহমেদ বলেন, নীতি বিভাগ একটু পেশাদার লোক দিয়ে কাজ করতে হয়। অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, দেশের জিডিপি এগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। এনবিআর সেটাকে প্রয়োগ করবে। এনবিআরের যদি পলিসি নিয়েও কাজ করতে হয়, তাহলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টও থাকে।

আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এমনটি করা হলেও এক্ষেত্রে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। সুচিন্তিতভাবে এটা করা হয়েছে। এনবিআরের সদস্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণদের সঙ্গে আলাপ করে এটা করা হয়েছে। রাজস্ব আদায় সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন যে পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা গতবারের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। হতাশ হওয়ার কিছু নাই। রাজস্ব আদায় গতবারের চেয়ে কম হবে না। মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

আসন্ন বাজেট সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে বড় ঘাটতি থাকবে না। প্রকল্প, এডিপি বাস্তবায়ন এসব করা হবে বাস্তবতার ভিত্তিতে। ব্যাংক থেকে ধার করে, টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে না। কিছুটা ঘাটতি থাকবে, সেটা পূরণ করতে আমরা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি, সে ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি সফল। বিশ্বের সব দেশেই রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগ পৃথক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেমাবার রাতে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সংস্থাটি ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করেই বহুল আলোচিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।

পতিত আওয়ামী লীগের সরকার আমলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট রেখে গিয়েছিলেন। সেখানে সম্ভাব্য ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। মাহমুদ আলীর বাজেটে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে মিতব্যয়ী সাধনের দর্শন ছিল। সেই বাজেট ঘোষণার দুই মাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অগাস্টে যে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের হাল ধরেছে তাদেরকেও আগের সরকারের অর্থ কঠোর মিতব্যয়ী হওয়া নীতি আরও শক্তভাবে সামনে এগিয়ে নেয়।

আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট বর্তমান বাজেটের চেয়ে আকারে ছোট হবে কি না? এমন প্রশ্নের সরাসারি উত্তর না দিয়ে বলেন, অর্থ উপদেষ্টা বাজেট কেমন হবে সেটা সময় হলেই জানতে পারবেন। মোটামুটি বাজেটটাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের গ্যাপ বা ঘাটতি রেখে আমরা করবো না। বাস্তবসম্মত এডিপি বাস্তবায়ন করবো। ধার করে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো না।

আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এমনটি করা হলেও এক্ষেত্রে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সুচিন্তিতভাবে এটা করা হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১২টি ক্রয়প্রস্তাব উত্থাপন হওয়ার পর ১০টি অনুমোদন করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গানভর সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে টিসিবির জন্য প্রতি লিটার ১৬১ টাকা দরে এক কোটি ১০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান অয়েল ক্রয়।