ঢাকা ০৫:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আশ্বিনের অবিরাম বর্ষেণ ভাসলো ঢাকা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:১৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০ ৪৯৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভয়েস রিপোর্টা
অনেকটা অপরিকল্পিভাবে এগিয়ে চলা ঢাকায় বৃষ্টির জল দ্রুত নিষ্কার পথ রুদ্ধ হবার কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। বছর জুড়েই রাজধানীতে নানা রকম উন্নয়ন কর্মকান্ড চলতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক সঙ্গে কাজ করার বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল পরামর্শ দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়েছেন। কারণ, ওগুলো এখন আর কেউ আমলে নিচ্ছেন না। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, রাজধানীর উন্নয়নে বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাজ একসঙ্গে না হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এক সঙ্গে বাজেট না পাওয়া। খোড়াখুঁড়ির পর কর্পোরেশন একটি রাস্তা মেরামত শেষ করে যাবার কিছুদিন পরই অপর এক সেবা সংস্থা এসে খোড়াখুঁড়ি শুরু করে। অর্থাৎ সমন্বয়হীনতার বড়ই অভাব। যার মাসুল গুণতে হয় সাধারণ মানুষকে। বর্তমানে ঢাকায় মেট্রোরেলের উন্নয়নের কাজ চলছে। পাশাপাশি শহরজুড়েই রাস্তা কেটে ড্রেনেজের কাজ চলছে। কোথাও শেষ হয়েছে। কিন্তু শেষ হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো মরামত সম্পন্ন না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। গত কয়েক দিনের মুসুলধারা বৃষ্টি রাজধানীর প্রায় সখর রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোথা কোথা হাঁটু ভাঙ্গা জল। নিষ্কাশন ব্যবস্থা পথ রুদ্ধ। রাধানীর জল দ্রুত নিষ্কাশনের যে পথগুলো রয়েছে, তা দখল হয়ে সেখানে রীতিমত স্থাপনা নির্মাণ হয়ে গেছে। এই রাজধানীতে খাল ছিলো, বর্তমান প্রজন্মকে তা বলা হলে তারা হাসে। অনেকে হয়তো মনে মনে আহম্মকও বলে।

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে রাজধানীর চারিদিকের নদীগুলোতে জলে উচ্চ বেড়ে গেছে। দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবণতির দিকে। ফলে নদীর জল বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় রাজধানীতে ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। যার খেসারত দিতে হবে সাধারণ নগরবাসিন্দাদের। টানা বৃষ্টির কারণে আবারও ডুবেছে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়ক ও অলিগলি। ফলে স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বছর জুড়ে সড়কে বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি চললেও জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন হয়নি। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই নাকাল হয় নগরবাসী। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে সেসব এলাকায় উন্মুক্ত জায়গা বা মাটির অস্তিত্ব নেই। সে কারণেই জল সহজে মাটি শোষণ করে নিতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যদি জল মাটি শোষণের সক্ষমতার পাশাপাশি খাল ও ড্রেনগুলো সচল থাকতো তাহলে এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদের মতে সেবা সংস্থার মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবেই প্রতি বছর রাজধানীবাসীকে জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমে যখন পানি উঠে তখনি এসব বিষয়ে কথা উঠে। এর আগে ওয়াসা কী করে সেটি সিটি করপোরেশন জানে না, আবার সিটি করপোরেশন কী করে সেটি ওয়াসা জানে না। এমন সমন্বয়ের অভাবেই সমস্যা নাজুক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।ট হচ্ছে। সোমবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। এতে গাবতলী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়ক, শান্তিনগর, বাড্ডা, মিরপুর, কাওরান বাজার, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, নয়া পল্টস, ফকিরেরপুল, রাজার বাগ, মালিবাগ, কাঠালবাগান, নীলক্ষেত, আজিমপুর, বংশাল, নাজিমউদ্দিন রোডসহ রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার মূল কারণ নিয়ে ২০১৭ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এতে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকায় ৪৩টি খাল ছিল। এসব খালের মধ্যে ২৬টি ঢাকা ওয়াসা ও আটটি ঢাকা জেলা প্রশাসন রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আর ৯টি খাল বক্স-কালভার্ট, রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইনে পরিণত করা হয়েছে। এসব খালের অধিকাংশ স্থানে প্রভাবশালীরা দখল করে বহুতল ভবন, দোকানপাট ও ময়লা-অবর্জনা ফেলে ভরাট করে রেখেছে। ফলে খালে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিলীন হয়ে গেছে খালের অস্তিত্ব। এতগুলো খাল থাকার পরেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেসব খালের অস্তিত্ব এখনো কোনো রকম টিকে আছে সেগুলোতে নেই য় থাপোনিপ্রবাহ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগর জুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

আশ্বিনের অবিরাম বর্ষেণ ভাসলো ঢাকা

আপডেট সময় : ০৫:১৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০

ভয়েস রিপোর্টা
অনেকটা অপরিকল্পিভাবে এগিয়ে চলা ঢাকায় বৃষ্টির জল দ্রুত নিষ্কার পথ রুদ্ধ হবার কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। বছর জুড়েই রাজধানীতে নানা রকম উন্নয়ন কর্মকান্ড চলতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক সঙ্গে কাজ করার বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল পরামর্শ দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়েছেন। কারণ, ওগুলো এখন আর কেউ আমলে নিচ্ছেন না। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, রাজধানীর উন্নয়নে বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাজ একসঙ্গে না হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এক সঙ্গে বাজেট না পাওয়া। খোড়াখুঁড়ির পর কর্পোরেশন একটি রাস্তা মেরামত শেষ করে যাবার কিছুদিন পরই অপর এক সেবা সংস্থা এসে খোড়াখুঁড়ি শুরু করে। অর্থাৎ সমন্বয়হীনতার বড়ই অভাব। যার মাসুল গুণতে হয় সাধারণ মানুষকে। বর্তমানে ঢাকায় মেট্রোরেলের উন্নয়নের কাজ চলছে। পাশাপাশি শহরজুড়েই রাস্তা কেটে ড্রেনেজের কাজ চলছে। কোথাও শেষ হয়েছে। কিন্তু শেষ হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো মরামত সম্পন্ন না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। গত কয়েক দিনের মুসুলধারা বৃষ্টি রাজধানীর প্রায় সখর রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোথা কোথা হাঁটু ভাঙ্গা জল। নিষ্কাশন ব্যবস্থা পথ রুদ্ধ। রাধানীর জল দ্রুত নিষ্কাশনের যে পথগুলো রয়েছে, তা দখল হয়ে সেখানে রীতিমত স্থাপনা নির্মাণ হয়ে গেছে। এই রাজধানীতে খাল ছিলো, বর্তমান প্রজন্মকে তা বলা হলে তারা হাসে। অনেকে হয়তো মনে মনে আহম্মকও বলে।

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে রাজধানীর চারিদিকের নদীগুলোতে জলে উচ্চ বেড়ে গেছে। দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবণতির দিকে। ফলে নদীর জল বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় রাজধানীতে ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। যার খেসারত দিতে হবে সাধারণ নগরবাসিন্দাদের। টানা বৃষ্টির কারণে আবারও ডুবেছে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়ক ও অলিগলি। ফলে স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বছর জুড়ে সড়কে বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি চললেও জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন হয়নি। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই নাকাল হয় নগরবাসী। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে সেসব এলাকায় উন্মুক্ত জায়গা বা মাটির অস্তিত্ব নেই। সে কারণেই জল সহজে মাটি শোষণ করে নিতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যদি জল মাটি শোষণের সক্ষমতার পাশাপাশি খাল ও ড্রেনগুলো সচল থাকতো তাহলে এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদের মতে সেবা সংস্থার মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবেই প্রতি বছর রাজধানীবাসীকে জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমে যখন পানি উঠে তখনি এসব বিষয়ে কথা উঠে। এর আগে ওয়াসা কী করে সেটি সিটি করপোরেশন জানে না, আবার সিটি করপোরেশন কী করে সেটি ওয়াসা জানে না। এমন সমন্বয়ের অভাবেই সমস্যা নাজুক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।ট হচ্ছে। সোমবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। এতে গাবতলী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়ক, শান্তিনগর, বাড্ডা, মিরপুর, কাওরান বাজার, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, নয়া পল্টস, ফকিরেরপুল, রাজার বাগ, মালিবাগ, কাঠালবাগান, নীলক্ষেত, আজিমপুর, বংশাল, নাজিমউদ্দিন রোডসহ রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার মূল কারণ নিয়ে ২০১৭ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এতে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকায় ৪৩টি খাল ছিল। এসব খালের মধ্যে ২৬টি ঢাকা ওয়াসা ও আটটি ঢাকা জেলা প্রশাসন রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আর ৯টি খাল বক্স-কালভার্ট, রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইনে পরিণত করা হয়েছে। এসব খালের অধিকাংশ স্থানে প্রভাবশালীরা দখল করে বহুতল ভবন, দোকানপাট ও ময়লা-অবর্জনা ফেলে ভরাট করে রেখেছে। ফলে খালে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিলীন হয়ে গেছে খালের অস্তিত্ব। এতগুলো খাল থাকার পরেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেসব খালের অস্তিত্ব এখনো কোনো রকম টিকে আছে সেগুলোতে নেই য় থাপোনিপ্রবাহ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগর জুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাক।