Stay inside the world : পৃথিবী থাক পৃথিবীর অন্দরে

- আপডেট সময় : ১০:১৮:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২ ২৪৯ বার পড়া হয়েছে
ছবি সংগ্রহ
‘কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন – এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি,নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার। তারপর হবো ইতিহাস ইতিহাস ঐতিহ্য সৃষ্টি রহস্যময়তা এবং আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী। কেউ বলে পাঁচ হাজার কোটি, কেউ বা বলে আরও বেশি। সূর্যের সংসারের তৃতীয় পান্ডব অর্জুন এই বিশ্ব। এখন পর্যন্ত গল্প কথায় যাই বলা হউক না কেনো,পৃথিবী ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি অন্য কোনো গ্রহ ‘
শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস। (পশ্চিম বঙ্গ) ভারত
অচিন্তনীয় বলে আসলে কি কিছু হয়? এমন সব বোকা বোকা প্রশ্নের উত্তরে কথা না বলা নদীটি সুর করে বয়ে চলে। নদী কথা বলে না।পাহাড় হাঁটে না। কেননা, এরা কেউই প্রাণী নয়। প্রাণী না হয়েও, এরা প্রাণের জন্মের সার্থকতা নিয়ে কাজ করে। এ ভাবনা কি অচিন্তনীয় নয়? অচিন্ত এই পৃথিবী। পৃথিবী ও তার গর্ভজাত যা কিছু সম্পদ, তা আজ আলোচনার ঝড় তুলবে। তার আগে বৈদিক আর্য ভারতীয় ফসলের মাঠ ভরিয়ে দিয়ে গেছেন, যে সমস্ত গুনীজনেরা স্মরণ করি তাদেরকে।বন-জঙ্গল,তুষারশুভ্র হিমালয়ের বুকে দিনের পর দিন যারা জীবনের পরম সত্যের অন্বেষণ করে প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন- “জগৎ মিথ্যা, ব্রহ্ম সত্য – স্মরণ করি তাদেরকে পুনরায়। অনিত্যতার সত্য মেনে নিয়েও আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে চলি মৃত্যু নামক এক সসীমতার দিকে। সসীম কেনো? কারণ জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা রবে!!
মহা বিস্ময়কর এই বিশ্বে আমি থাকবো না? থাকবো না তো,যাবো কোথায়? যেতে আমাকে হবেই।আর,এখানেই আমার সীমাবদ্ধতা। কিন্তু, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ তো আশ! কিশের আশ বা আশা? আশা এই যে, আমি নামক ব্যক্তিসত্তার জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী থাকবে।সেই পৃথিবী হবে জীবনকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য এক অনিন্দ্য সুন্দর সৌরজগতের প্রাণময় বাসযোগ্য গ্রহ। ‘বাস’-এর প্রশ্নে আসে- বাস্তুতন্ত্রের প্রসঙ্গ, যে বিষয়ে বিজ্ঞানে অনেক অনেক কথা বলা আছে, যা নিয়ে বলে এই নিবন্ধ অতিকথনের ভারে নাই বা ভারি হোলো! Give and Take. দাও এবং নাও-এর পৃথিবীতে এ সত্য আমাদেরকে এক বৈশ্বিক শিক্ষকের দ্বারপ্রান্তে হাজির করায়। “ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা “- বলেছেন পরমহংসদেব। দেওয়া এবং পাল্টা নেওয়ার মধ্যে থাকে এক আত্মমর্যাদাবোধ। আমাদের শিক্ষা তো এই যে, হাত পাতলে হাত উপুর করতে হয়। আবার যে দাতা, সেও তো কখনো কখনো গ্রহীতা! একতরফা ভাবে সে যে কেবলই দিয়ে যাবে, তা হয়না। কথায় আছে, দিতে দিতে রাজভান্ডারও ফুরিয়ে যায়।
বাসযোগ্য ভূমির কথা উত্থাপিত হয়েছে আগেই। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন – এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি,নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার। তারপর হবো ইতিহাস। প্রসঙ্গ – ইতিহাস ঐতিহ্য সৃষ্টি রহস্যময়তা এবং আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী। কেউ বলে পাঁচ হাজার কোটি, কেউ বা বলে আরও বেশি। সূর্যের সংসারের তৃতীয় পান্ডব অর্জুন এই বিশ্ব। এখন পর্যন্ত গল্প কথায় যাই বলা হউক না কেনো,পৃথিবী ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি অন্য কোনো গ্রহে। কেবল মানুষই নয়, জীবজগতের সমস্ত প্রাণের সম্মিলিত জোট এর সুর সরস্বতীর যে বীণার তারে ঝংকৃত হয়, তার নাম মহা পৃথিবী। আমরা পরস্পরকে দিই এবং পরস্পরের থেকে হাত পেতে নিই- এটাই আমাদের পারস্পরিক অঙ্গিকার। আর এমন এক ইঙ্গিত ধর্মিতার বাতাবরণে হাজার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ প্রাণ বাহক এই পৃথিবী চলছে এবং আমরাও চলেছি চলেছি… জন্ম মৃত্যু সমার্থক হলেও জীবনের লক্ষ্মণ হোলো এই যে, “থাকতে কেউ মুল্য বোঝেননা “।

যেমন মানুষের সাথে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্যতার গাণিতিক সূত্রাবলী সাধারণত বইএর পাতায় থাকলেও চোখ বুঝে ধ্যানস্থ অবস্থায় বজ্র বিদ্যুৎ এর যুগের পলায়নপর মানুষের ভয় আমরা ইচ্ছে করলেই দেখতে পাই। চক্ষু মুদে দেখি – সমুদ্রের জল কলরোল, ঝর্নার কুলুকুলু ধ্বনি, অরণ্যের ভিতর গাছের পাতার শিরশিরানি ও পাতার ফাঁকে ফাঁকে সৌরালোকের উপস্থিতি।এ-সবই আমাদেরকে অস্তিত্বের কথা স্মরণ করায়। BY the people, And the people, For the people -গনতন্ত্রের মূল কথা। আর প্রাণের মূল কি? প্রাণের মূল হোলো- অস্তিত্বের দ্বারা, এবং অস্তিত্ব, অস্তিত্বের জন্য। আমরা ব্যাখ্যা করে দেখি আমাদের প্রজন্মের সৃষ্টির আদিপর্বের ধারাভাষ্যে এক অস্তিত্ব থেকে অন্য অস্তিত্বের সৃষ্টি এবং সেই সৃষ্টির জন্য অনবরত সৃষ্টি ও কেবলই সৃষ্টি। কবি কাজি নজরুলের ‘সৃষ্টি’ সুখের উল্লাসে হয়- যেমন সত্যি, তেমন, এও সত্যি যে, সৃষ্টির আনন্দে থাকা মানবসভ্যতা ভুলে যায় গঠনমূলক সৃষ্টির মধ্যেই নিহিত আছে প্রিয় পৃথিবীর দীর্ঘ আয়ুকাল। স্টকহোমে ১৯৭২এর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো।
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে আমাদের পৃথিবীতে আমাদের বাস্তুতন্ত্রের প্রগারতার কথা। প্রাণময় বাসযোগ্যতার কারণে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলতঃ বাসযোগ্য ভূমির জন্য অরণ্য, জলাভূমি, পাহাড়ের গায়ে নির্বিচারে হাত পরেছে। ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে চলেছে প্রকৃতির বুকে অন্যান্য জীববৈচিত্র্য। ১৯৭২এর জাতিসংঘের কনফারেন্সে অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসাত্মক পৃথিবীর আগামীর গতিপ্রকৃতি দেখে অন দি হিউম্যান এনভায়রনমেন্টে আলোচিত হয়েছিলো Only one earth নিয়ে। সবেমাত্র কোভিড কাল কাটিয়ে উঠলো পৃথিবী। এসময়ে মানুষ দেখতে পেয়েছে, সুদীর্ঘকালের লকডাউনের নিস্তব্ধতায় পাখিদের কলতান সহ মৌমাছির গুঞ্জন, প্রজাপতির ডানায় ভর করা প্রকৃতির অপরূপতা। এসবই পৃথিবীর ভালো থাকার সদর্থক দিক।
তার আগে,অর্থাৎ কোভিড পূর্বকালে মানব সভ্যতার ক্রমাগত উর্ধগামিতার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মানুষ দেখেছে প্রকৃতির ভয়ালদর্শন রূপ।উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছে এই সভ্য মানুষ- ই যে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার অস্বাভাবিকতা সহ অ্যামাজনের অরণ্যের ও অস্ট্রেলিয়ার সাভানা বনাঞ্চলের দাবানলের ভয়ংকর ফল। এছাড়াও আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগীরণ সহ পাহাড়ি ধস,উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে মেরু অঞ্চলের বরফের গলনাঙ্কের বাড়তি চাপের ফলে সমুদ্রের জলস্তরের স্ফীতি এবং সেই কারণেই ঝড়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক দিক। বিশ্বের ১৫০ টি দেশ মিলিত হয়েছে eco friendly / sustainable development, অর্থাৎ পার্থিব সম্পদের সুরক্ষার জন্য ইউনাইটেড নেশনের মাধ্যমে একটি UNO তৈরি করে আ-বিশ্বের স্থায়িত্বের কর্মসূচি তৈরি করা। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। চলুক এসব বিশ্বব্যাপী সর্ব সম্মিলিত ক্রমধারা। আর, আমরা ব্যাক্তি মানুষ বরং নিজ নিজ বুদ্ধি চেতনার দ্বারা সচেতনভাবে বাসযোগ্য এই ভূমির স্থায়িত্বের জন্য প্রকৃতির ওপর নির্বিচার হত্যালীলা বন্ধের উদ্দেশ্যে নবীন মন্ত্র উচ্চারণ করি –” কেবলমাত্র পৃথিবী থাক পৃথিবীর অন্দরে।”
শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস, লেখক ও সাংবাদকর্মী