ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষ ধর্মের জন্য নয়-সাইয়্যদি সাইফুদ্দীন আহমদ
বিশ্বের সুফিবাদের পাঁচটি প্রধান কেন্দ্রের একটি হচ্ছে ভারত। অপর চারটির মধ্যে পারস্য (মধ্য এশিয়াসহ), বাগদাদ, সিরিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা। সুফি সাধকেরা ভারতে সুফিবাদের গুপ্তরহস্যমূলক দীক্ষা প্রচার করতে থাকেন যা খুব সহজেই সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ভারতের আধ্যাত্মিক সত্য সন্ধানীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এসব এখন ইতিহাস।
তবে বাংলাদেশে সুফিবাদের ইতিহাস বা প্রসার মোটামুটি ভারতীয় উপমহাদেশের মতোই। পবিত্র কোরআন এবং হাদিস শরীফকে অনুরসণ করেই বাংলাদেশের সুফি মতবাদের প্রচার ও চর্চা প্রতিষ্ঠিত। গবেষণায় বলা হয়েছে, সুফিবাদ এমন এক বিষয় যাকে ইসলামের আধ্যাত্মিক-তাপসদের মরমীবাদ বলা হয়ে থাকে। কোন সম্প্রদায় নয়, সূফিবাদ হচ্ছে, ইসলামিক শিক্ষা যা মানুষের স্বীয় অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনাই হচ্ছে এর মুখ্য বিষয়।
সুফিবাদের দর্শন হচ্ছে, আপন নফসের সঙ্গে, নিজ প্রাণ, জীবাত্মা এবং শয়তানের সঙ্গে জিহাদ করে নিজেকে জড় জগৎ থেকে মুক্তি রাখা। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হল এই মতবাদের মর্মকথা। সুফিবাদে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টা। আল-গাজ্জালির মতে, আল্লাহর ব্যতীত অপর মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে পবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহুতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সুফিবাদ।
বাংলাদেশে সূফিবাদ প্রচার ও চর্চার প্রধানতম স্থান হচ্ছে, পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামের মাউজভান্ডার শরীফ। মাইজভান্ডার শরীফের বর্তমান ধর্মীয় গুরু তথা প্রধান হচ্ছেন, জ্ঞানতাপস ‘সাইয়্যিদ সাউফুদ্দীন আহমদ’। সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর একটি বাণী হচ্ছে, ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষ ধর্মের জন্য নয়,’ (Religion for People, People are not for Religion )।
মাইজভান্ডার শষরীফে সম্প্রতি এক ৫৫তম খোশরোজ শরীফ ও মইনীয়া যুব ফোরামের ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জঙ্গিবাদ, মাদক এবং যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে গণশপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজারো যুব ও তরুণ উদ্দেশ্যে মইনীয়া যুব ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যিদ সাউফুদ্দীন আহমদ বলেন, তারুণ্যের শক্তিই সকল ক্ষেত্রে জাতিকে হতাশা ও অনৈতিকতার হাত থেকে রক্ষা সক্ষম। ঘুষ, দুর্নীতিসহ সমাজের সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণআন্দোলন-সংগ্রামে তরুণরাই সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন। সেই তরুণরাই আজ সীমাহীন অবক্ষয়ে নিমজ্জিত ও পথভ্রান্ত। ফলে তারুণ্যের ক্ষয় ও পশ্চাদগামিতা দেখে আমরা আজ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
দেশের যুব সমাজের উদ্দেশ্যে সাইয়্যিদ সাউফুদ্দীন আহমদ আরও বলেন, তোমাদের মেধা, সৃজনশীলতা ও সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করে দেশকে কাঙ্খিত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে। কীর্তিমান ওলী-মনীষীদের জীবনাদর্শের আলোকে তোমাদের গড়ে ওঠতে হবে। তাহলেই দেশ-জাতির কাঙ্খিত উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে। মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে মইনীয়া যুব ফোরামের কর্মীদের প্রতি নিবেদীত হবার ডাক দেন এই আধ্যাত্মিক নেতা।
তাঁর বাণী হচ্ছে, তাসাউফ বা সূফিবাদ তথা সূফি দর্শনই ইসলামের মূল নির্যাস। এটি ইসলামী শরীয়তের মৌলিক বিষয়ও বটে। তাসাউফবিহীন ইসলাম অপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে প্রিয় নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহ তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছালামার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। তাই আত্মার পরিশুদ্ধি বা তাসাউফ সম্পর্কিত বিষয়াদি শরীয়তের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ।