ঢাকা ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম ‘নভেম্বর’

ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ
  • আপডেট সময় : ০৯:১০:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১ ৩৬১ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

(ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ’র লেখার আলাদা একটা আমেজ আছে।  লেখা পড়ে মনে হয়, নিজের-আশপাশের মানুষের কথাই আমরা বলছি। শীত নিয়ে লেখার আবেদনটিও সেরকমের। চাওয়া হয়েছিলো শীতের লেখা, পাঠালেনও তাই। তবে বলা যায়, লেখক বাড়তি সংযোজন করেছেন একটি কবিতা। আশা করা যায় পাঠকদের ভালো লাগবে) 

ভোর রাতে পায়ের কাছে চাদরটা টেনে মুড়ি দিলে একটু আরাম লাগছে। সকালের রোদের মধ্যে একটা মিষ্টি আভাস। বেলা পড়ছে তাড়াতাড়ি। সাড়ে চারটে বাজতেই মিট মিটে সূয্যি মামা ঝুপ করে নেমে পড়ছে দিগন্ত রেখায়। শহরের বুকে চলা ফেরা করা মানুষ গুলোর গায়ে হালকা শীত পোশাক। কেউ বা হাফ হাতা সোয়েটার। গলায় মাফলার । কারো গায়ে হালকা চাদর। তবে কি শীত এসে গেলো?

ধপ্ করে পরে যাওয়া পারদ সেইরকমই কোনো একটা আভাস নিয়ে আসছে বাংলার বুকে।ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো প্রজাপতি কিংবা সুরেলা কন্ঠের পাখির ডাক শহরের বুকে শীতের গান গেয়ে স্নিগ্ধ হিমের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে।

মনের ইতিউতি উকি দিচ্ছে বেড়িয়ে পড়ি কোথাও।বনভোজন আর শীতের মেলা শীতের প্রধান আনন্দ তার সঙ্গে দোকানে দোকানে শীত পোশাক আর নানা রঙিন সরঞ্জাম মন কাড়ছে। ভিড় লেগে আছে ক্রেতাদের।চলছে পছন্দ মতন কেনা বেচা।

চায়ের দোকান গুলোতে সকাল বিকাল মেতে উঠছে জমাটি আড্ডা ।গরম চুমুকে চলছে নিখাদ গল্প আড্ডার আসর কোথাও বা টুকরো যাপন। ছোট ছোট প্রেমের সংলাপ চলছে শহরের ইতি উতি কফিশপ গুলিতে।ঠোঁট পুড়লেও মন ভালো হয়ে যাচ্ছে।প্রেমের উষ্ণতা ভরিয়ে দিয়ে সেই ক্ষত গুলিকে।

কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে হিমেল সন্ধ্যায় বেজে উঠল মঙ্গল শঙ্খ। আজ আকাশ প্রদীপ দেওয়ার শেষ দিন।তার পর ওনাদের সঙ্গে আবার একবছরের মত আমাদের যোগাযোগ ছিন্ন থাকবে।  অঘ্রান মাস পড়লেই নন্দিনীর বিয়ে।কেনাকাটা চলছে জোর কদমে।ওদিকে সুপ্রিয়ও দিন গুনছে  কবে ঘরে নিয়ে আসবে তার ছোট্ট বেলার বান্ধবীকে নব বধূ রূপে।বাঙালির ঘরে ঘরে হৈমন্তীকার এলো জ্বেলে গেছেন মা জগদ্ধাত্রী।আজ থেকে শুরু হবে ইতু পুজো।রত্না তারই তোড়জোড় করছে।

“বাজার থেকে পারলে একটু বলেন গুড় এনো…কাল মেয়েটার জন্মদিন একটু গুড়ের পায়েস যদি করতে পারি।”সুজাতার মা ওর বাবাকে বললেন।শীত মানেই নলেন গুড়ের পায়েস।সুগন্ধ ছড়ানো মার আহ্লাদে জড়ানো হাতের অমূল্য পায়েস।সঙ্গে নাড়ু ,পাটিসাপটা,হরেকরকম পিঠে।মেয়ের জন্মদিনের বাজার করতে গিয়ে মনে পড়লো অমলেন্দুর।আর মিলেও গেলো সহজেই।আমলকীর ডালে ডালে শীতের হাওয়ার নাচন লাগতেই বাজার মেতে উঠেছে পাটালি আর নলেন গুড়ের গন্ধে।বেশ কিছুটা সংগ্রহ করা গেলো।

শীতের ছুটিতে এবার আমরা কোথায় যাবে? গিন্নি শুধোলেন কত্তাকে।”আগে ছেলের স্কুলের ডাইরিটা দেখো  আর বল কবে থেকে ছুটি পড়ছে।শীতের দেশে যেতে চাইলে সঙ্গে শীত পোশাক নিতে হবে” ভালো মত কত্তা উত্তর দিলেন।পরের মাসেই বড়দিন।আর মাত্র কয়েকটা দিন।বুবুন দের কনভেন্ট স্কুল তাই শীতের ছুটি পড়ার আগে ওদের বড়ো অনুষ্ঠান হয়।তার জন্যেও প্রস্তুতি নিতে হয় অনেক আগে থেকেই। আনন্দও হয় খুব ওদের।

ইংরেজি বছরের নভেম্বর মাস শীতের আবেশ বয়ে আনে। ষড়  ঋতুর রঙে রঙিন আমাদের এই দেশ।ঋতু পরিবর্তনের বর্ণময় আবেগ ভরে রাখে বঙ্গ প্রকৃতিকে তা শহর হোক বা গ্রাম।কুয়াশা ঘেরা,শিশির ভেজা নগ্ন প্রকৃতির এক অসাধারন রূপ আর স্নিগ্ধতা আছে।সে কখনো ভয় পায় না রূপ হারানোর।সৃষ্টি থেকে বিনাশের প্রতি পর্যায়ে সে আপন অনুভূতিকে খুঁজে নিয়ে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।শীতের বৈরাগ্য বা ঔদাসীন্য তার মধ্যে অন্যরকম চাঞ্চল্য আনে।শুষ্কতা ,রিক্ততার আর দিগন্তব্যাপী বিষাদের সুর বসন্তের বাণী বয়ে আনে।এ ধরনীতে কোনোটাই শেষ নয় সব কিছুর মধ্যে শুরুর উপাখ্যান লুকিয়ে থাকে।বাদ প্রতিবাদ আর সম্বাদের মত।

শেষ করবো একটা অনুবাদ দিয়ে:

বিবর্ণ পাতার কথা আমি অনেক বলেছি;

বহুদিন আমি হাওয়ার হাহাকার শুনেছি;

এবং ভারী মেঘের মধ্যে দিয়ে দেখেছি কর্ষণ;

শরতের আকর্ষণের জন্য আমার বিষণ্ণ মন।

শরৎ এলেই কবিরা গান গায়:

বছর অবশ্যই শেষ হবে;  সব ফুল মারা যাবে;

এই গোছাগুলি এবং গলিত কোয়েল জড়ো করা হয়;

খড়ের মধ্যে দৌড়ে, কিন্তু লার্ক পালিয়ে যায়!

তবুও, শরৎ বড়দিনের উল্লাসের সূচনা করে,

চির শ্যামল-বেরি এবং আইভি-গাছ:

তারা পুরানো বছরের উত্তরাধিকারী জন্য একটি জপমালা প্রস্তুত করে;

এই অপেক্ষমাণ শোকেরা আমার জন্য গান গায় না!

আমি শরতের অরণ্যের গভীরে মিষ্টি শান্তি খুঁজে যাই,

যেখানে জির্ণ ফার্ন এবং রুক্ষ শ্যাওলা জন্মায়;

নগ্ন, নীরব গাছ আমাকে শিখিয়ে যায়,

সৌন্দর্য হারানো সবসময় ক্ষতি নয়!

November

Elizabeth Stoddard

Much have I spoken of the faded leaf;

Long have I listened to the wailing wind,

And watched it ploughing through the heavy clouds;

For autumn charms my melancholy mind.

When autumn comes, the poets sing a dirge:

The year must perish; all the flowers are dead;

The sheaves are gathered; and the mottled quail

Runs in the stubble, but the lark has fled!

Still, autumn ushers in the Christmas cheer,

The holly-berries and the ivy-tree:

They weave a chaplet for the Old Year’s heir;

These waiting mourners do not sing for me!

I find sweet peace in depths of autumn woods,

Where grow the ragged ferns and roughened moss;

The naked, silent trees have taught me this,—

The loss of beauty is not always loss!

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

শিরোনাম ‘নভেম্বর’

আপডেট সময় : ০৯:১০:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১

(ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ’র লেখার আলাদা একটা আমেজ আছে।  লেখা পড়ে মনে হয়, নিজের-আশপাশের মানুষের কথাই আমরা বলছি। শীত নিয়ে লেখার আবেদনটিও সেরকমের। চাওয়া হয়েছিলো শীতের লেখা, পাঠালেনও তাই। তবে বলা যায়, লেখক বাড়তি সংযোজন করেছেন একটি কবিতা। আশা করা যায় পাঠকদের ভালো লাগবে) 

ভোর রাতে পায়ের কাছে চাদরটা টেনে মুড়ি দিলে একটু আরাম লাগছে। সকালের রোদের মধ্যে একটা মিষ্টি আভাস। বেলা পড়ছে তাড়াতাড়ি। সাড়ে চারটে বাজতেই মিট মিটে সূয্যি মামা ঝুপ করে নেমে পড়ছে দিগন্ত রেখায়। শহরের বুকে চলা ফেরা করা মানুষ গুলোর গায়ে হালকা শীত পোশাক। কেউ বা হাফ হাতা সোয়েটার। গলায় মাফলার । কারো গায়ে হালকা চাদর। তবে কি শীত এসে গেলো?

ধপ্ করে পরে যাওয়া পারদ সেইরকমই কোনো একটা আভাস নিয়ে আসছে বাংলার বুকে।ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো প্রজাপতি কিংবা সুরেলা কন্ঠের পাখির ডাক শহরের বুকে শীতের গান গেয়ে স্নিগ্ধ হিমের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে।

মনের ইতিউতি উকি দিচ্ছে বেড়িয়ে পড়ি কোথাও।বনভোজন আর শীতের মেলা শীতের প্রধান আনন্দ তার সঙ্গে দোকানে দোকানে শীত পোশাক আর নানা রঙিন সরঞ্জাম মন কাড়ছে। ভিড় লেগে আছে ক্রেতাদের।চলছে পছন্দ মতন কেনা বেচা।

চায়ের দোকান গুলোতে সকাল বিকাল মেতে উঠছে জমাটি আড্ডা ।গরম চুমুকে চলছে নিখাদ গল্প আড্ডার আসর কোথাও বা টুকরো যাপন। ছোট ছোট প্রেমের সংলাপ চলছে শহরের ইতি উতি কফিশপ গুলিতে।ঠোঁট পুড়লেও মন ভালো হয়ে যাচ্ছে।প্রেমের উষ্ণতা ভরিয়ে দিয়ে সেই ক্ষত গুলিকে।

কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে হিমেল সন্ধ্যায় বেজে উঠল মঙ্গল শঙ্খ। আজ আকাশ প্রদীপ দেওয়ার শেষ দিন।তার পর ওনাদের সঙ্গে আবার একবছরের মত আমাদের যোগাযোগ ছিন্ন থাকবে।  অঘ্রান মাস পড়লেই নন্দিনীর বিয়ে।কেনাকাটা চলছে জোর কদমে।ওদিকে সুপ্রিয়ও দিন গুনছে  কবে ঘরে নিয়ে আসবে তার ছোট্ট বেলার বান্ধবীকে নব বধূ রূপে।বাঙালির ঘরে ঘরে হৈমন্তীকার এলো জ্বেলে গেছেন মা জগদ্ধাত্রী।আজ থেকে শুরু হবে ইতু পুজো।রত্না তারই তোড়জোড় করছে।

“বাজার থেকে পারলে একটু বলেন গুড় এনো…কাল মেয়েটার জন্মদিন একটু গুড়ের পায়েস যদি করতে পারি।”সুজাতার মা ওর বাবাকে বললেন।শীত মানেই নলেন গুড়ের পায়েস।সুগন্ধ ছড়ানো মার আহ্লাদে জড়ানো হাতের অমূল্য পায়েস।সঙ্গে নাড়ু ,পাটিসাপটা,হরেকরকম পিঠে।মেয়ের জন্মদিনের বাজার করতে গিয়ে মনে পড়লো অমলেন্দুর।আর মিলেও গেলো সহজেই।আমলকীর ডালে ডালে শীতের হাওয়ার নাচন লাগতেই বাজার মেতে উঠেছে পাটালি আর নলেন গুড়ের গন্ধে।বেশ কিছুটা সংগ্রহ করা গেলো।

শীতের ছুটিতে এবার আমরা কোথায় যাবে? গিন্নি শুধোলেন কত্তাকে।”আগে ছেলের স্কুলের ডাইরিটা দেখো  আর বল কবে থেকে ছুটি পড়ছে।শীতের দেশে যেতে চাইলে সঙ্গে শীত পোশাক নিতে হবে” ভালো মত কত্তা উত্তর দিলেন।পরের মাসেই বড়দিন।আর মাত্র কয়েকটা দিন।বুবুন দের কনভেন্ট স্কুল তাই শীতের ছুটি পড়ার আগে ওদের বড়ো অনুষ্ঠান হয়।তার জন্যেও প্রস্তুতি নিতে হয় অনেক আগে থেকেই। আনন্দও হয় খুব ওদের।

ইংরেজি বছরের নভেম্বর মাস শীতের আবেশ বয়ে আনে। ষড়  ঋতুর রঙে রঙিন আমাদের এই দেশ।ঋতু পরিবর্তনের বর্ণময় আবেগ ভরে রাখে বঙ্গ প্রকৃতিকে তা শহর হোক বা গ্রাম।কুয়াশা ঘেরা,শিশির ভেজা নগ্ন প্রকৃতির এক অসাধারন রূপ আর স্নিগ্ধতা আছে।সে কখনো ভয় পায় না রূপ হারানোর।সৃষ্টি থেকে বিনাশের প্রতি পর্যায়ে সে আপন অনুভূতিকে খুঁজে নিয়ে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।শীতের বৈরাগ্য বা ঔদাসীন্য তার মধ্যে অন্যরকম চাঞ্চল্য আনে।শুষ্কতা ,রিক্ততার আর দিগন্তব্যাপী বিষাদের সুর বসন্তের বাণী বয়ে আনে।এ ধরনীতে কোনোটাই শেষ নয় সব কিছুর মধ্যে শুরুর উপাখ্যান লুকিয়ে থাকে।বাদ প্রতিবাদ আর সম্বাদের মত।

শেষ করবো একটা অনুবাদ দিয়ে:

বিবর্ণ পাতার কথা আমি অনেক বলেছি;

বহুদিন আমি হাওয়ার হাহাকার শুনেছি;

এবং ভারী মেঘের মধ্যে দিয়ে দেখেছি কর্ষণ;

শরতের আকর্ষণের জন্য আমার বিষণ্ণ মন।

শরৎ এলেই কবিরা গান গায়:

বছর অবশ্যই শেষ হবে;  সব ফুল মারা যাবে;

এই গোছাগুলি এবং গলিত কোয়েল জড়ো করা হয়;

খড়ের মধ্যে দৌড়ে, কিন্তু লার্ক পালিয়ে যায়!

তবুও, শরৎ বড়দিনের উল্লাসের সূচনা করে,

চির শ্যামল-বেরি এবং আইভি-গাছ:

তারা পুরানো বছরের উত্তরাধিকারী জন্য একটি জপমালা প্রস্তুত করে;

এই অপেক্ষমাণ শোকেরা আমার জন্য গান গায় না!

আমি শরতের অরণ্যের গভীরে মিষ্টি শান্তি খুঁজে যাই,

যেখানে জির্ণ ফার্ন এবং রুক্ষ শ্যাওলা জন্মায়;

নগ্ন, নীরব গাছ আমাকে শিখিয়ে যায়,

সৌন্দর্য হারানো সবসময় ক্ষতি নয়!

November

Elizabeth Stoddard

Much have I spoken of the faded leaf;

Long have I listened to the wailing wind,

And watched it ploughing through the heavy clouds;

For autumn charms my melancholy mind.

When autumn comes, the poets sing a dirge:

The year must perish; all the flowers are dead;

The sheaves are gathered; and the mottled quail

Runs in the stubble, but the lark has fled!

Still, autumn ushers in the Christmas cheer,

The holly-berries and the ivy-tree:

They weave a chaplet for the Old Year’s heir;

These waiting mourners do not sing for me!

I find sweet peace in depths of autumn woods,

Where grow the ragged ferns and roughened moss;

The naked, silent trees have taught me this,—

The loss of beauty is not always loss!