উদ্ধার হওয়া গাড়ি ও প্রতারক আব্দুল কাইয়ুম ছোটন
পোশাক কারখানায় গাড়ি ভাড়া নিয়ে তা বিক্রি করে চারমাসেই তিনি বনে যান কয়েক কোটি টাকার মালিক। নানা নামে পরিচিত এই ব্যক্তি আব্দুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইশতিয়াক ওরফে মেহেদী নামে এক ব্যক্তি। অবশেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাঁড়াশি
অভিযানে ধরা পড়েন তিনি। সহযোগীদেরও আটক করার হয় এবং উদ্ধার করা হয় বিক্রি করা গাড়িও। সোমবার সিআইডি সদর দফতরে বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এক সংবাদিক বৈঠকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আব্দুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইশতিয়াক ওরফে মেহেদীর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায়। কক্সবাজারে প্রত্যাশা নামে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। প্রতারণার জন্য সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর ঢাকায় এসে গাজীপুর বোটবাজার এলাকার শহীদ সিদ্দিক
লেনের ৫৮৫ নম্বর চার তাল বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘একে ফ্যাশন’ নামে একটি পোশাক কারখানা চালু করেন। কারখানার মেশিন সব ভাড়া নেন। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ২১০ জন শ্রমিক নিয়ে পোশাক কারখানাটি চালু করেন। কারখানায় টি-শার্ট, পোলো শার্ট, প্যান্ট ও জ্যাকেট তৈরি হতো।
কিন্তু তিন-চার মাসের মাথায় ছোটন ফেসবুকের বিভিন্ন ‘রেন্ট-এ কার’ পেজে গাড়ি ভাড়া নেবেন বলে বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপন দেন রেন্ট-এ কার বিডি, রেন্ট-এ কার গাজীপুর ও রেন্ট-এ কার ঢাকা পেজে। বায়ারদের জন্য ভাড়া করা এসব গাড়ি নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন
ছোটন। গাড়ির মালিকদের নিয়ে গাজীপুরের পোশাক কারখানায় বসে বিলাসবহুল প্রতিটি গাড়ির মাসিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন ছোটন।
আলাপকালে গাড়ির মালিকদের শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেন, বায়ারদের নিয়ে যেহেতু রাতে চলাচল করতে হবে, তাই গাড়িতে তার নিজের চালক থাকতে হবে। এ ছাড়া গাড়ির মালিকের দেওয়া
চালক তিনি নেবেন না। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি ধরলে আসল কাগজপত্র দেখাতে হবে, তাই গাড়ির সকল আসল কাগজপত্রও রেখে দেন ছোটন। তার কথায় গাড়ির মালিকরা সব শর্তে রাজি হন।
বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, গাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর প্রথম মাস মালিকদের ভাড়া ঠিকমতোই দিতেন ছোটন। পরের মাস থেকে নয়-ছয় শুরু করেন কথিত এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। এমনকি মালিককে না জানিয়ে গাড়িও বিক্রি করে দেন। গত ফেব্রুয়ারি-মে, এই চার মাসে ২০ থেকে ৩০টি
গাড়ি ভাড়া নেন ছোটন। পরবর্তীতে গাড়ির নকল কাগজপত্র তৈরি করে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে বিআরটিএ অফিস বন্ধ থাকায় ক্রেতারা এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, ছোটনের একজন সহযোগী রয়েছে। তিনি এসব গাড়ি বিক্রি করতে সহযোগিতা করতেন। এ ছাড়াও তুরাগ থানার ‘নাজমুল অটোপাস সেন্টার’ এই গাড়ি বিক্রির সঙ্গে
জড়িত। ১৯ লাখের গাড়ি ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি করা হতো। এই প্রতারণা তারা মার্চ ও এপ্রিল মাসে বেশি করেন।
এসব অবস্থায় গাজীপুর ও ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মামলা করলে তদন্তে মাঠে নামে সিআইডি এবং পুরো সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, ছোটনের সহযোগী আব্দুল হাই,
আলমগীর, নাজমুল ও সানীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও চোরাই গাড়ি যারা ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত রানা ও শামীম নামে দুজন রয়েছে। সাতটি গাড়ি উদ্ধার করে সিআইডি।