বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগের পর মুক্তি

- আপডেট সময় : ১২:৫৪:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ ২১৯ বার পড়া হয়েছে
একটি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির সাজা ২০১৮ সালের ১২ জুন থেকে কারাভোগ করেছিলেন মিনু আক্তার। তিন বছরেরও অধিক সময় কারাভোগের পর বুধবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
মিনুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত ৭ জুন হাইকোর্ট মিনুকে নিম্ন আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। নির্ধারিত আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমি গতকাল মুক্তির বন্ড নির্ধারণের জন্য আদালতে আবেদন করেছিলাম।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঞার আদালত মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন। আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছানোর পর বিকেলে মিনু মুক্ত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের কারণে মিনু তিন বছর বিনা অপরাধে কারাভোগ করেছেন, আমি তাদের শাস্তি দাবি করছি। এ ছাড়া মিনুর ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।’
২০০৬ সালে নগরীর রহমতগঞ্জে এক নারীকে হত্যায় ২০১৭ সালে ছালেহ আহমেদের স্ত্রী কুলসুমা আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। ২০০৭ সালে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় বছর কারাগারে ছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পান। এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমা আক্তার ‘সেজে’ মিনু আক্তার ‘স্বেচ্ছায়’ সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মিনু আক্তার জানিয়েছেন, সন্তানদের খাওয়া-দাওয়া এবং আর্থিক কিছু সহায়তা দেবে বলে মর্জিনা আক্তার নামে এক নারীর কাছ থেকে বদলি জেল খাটার প্রস্তাবে তিনি রাজি হন। প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকার পর চলতি বছরের ১৮ মার্চ কারা কর্তৃপক্ষকে মিনু আক্তার জানান, তিনি কোনো মামলার আসামি নন। ২১ মার্চ জেল থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি আদালতে জানানো হয়।
কুমিল্লার ময়নামতি এলাকার বাসিন্দা মিনুর স্বামী ঠেলাগাড়ি চালক বাবুল বছর পাঁচেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর মিনু আক্তার সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় আসেন।
তিন সন্তানের ভরণ-পোষণের আশ্বাস পেয়ে বিধবা ওই নারী ২০১৮ সালের জুন থেকে কারাভোগ করছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানার পর বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয় চট্টগ্রামের আদালত। কারাগারের রেজিস্ট্রারকে তলব করে মিনুর দাবি যাচাইয়ের পর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভুঁঞা ২৩ মার্চ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য মামলার নথিপত্র উচ্চ আদালতে পাঠান।
গত তিন বছর ধরে দুই ছেলে ইয়াছিন (১০) ও গোলাপ (৭) সীতাকুণ্ডের একটি এতিমখানায় থাকে এবং মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে (৫) স্থানীয় এক ব্যক্তি লালন পালন করছেন। মিনু আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা এর আগে জানিয়েছিলেন, আশ্বাস মতো কোনো টাকা বা সন্তানদের জন্য খাবার কিছুই মিনু আক্তার পাননি।
মিনু আক্তার কারাগারে থাকা অবস্থায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ড থেকে অব্যাহতি চেয়ে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন কুলসুমা আক্তার। ৩০ এপ্রিল হাই কোর্ট আপিল গ্রহণ করে। চট্টগ্রাম আদালতের পাঠানো নথি পেয়ে গত ৭ জুন মিনু আক্তারকে মুক্তির আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি কুলসুমার পরিবর্তে তার ‘আত্মসমর্পণ’ এবং উচ্চ আদালতে আপিলের প্রক্রিয়ায় প্রতারণা হয়েছে কিনা, তারও ব্যাখ্যা চায় হাই কোর্ট।