ছবি সংগ্রহ
ড. বিরাজলক্ষ্মী ঘোষ
জন্ম সূত্রে এদেশীয় অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের আদি বাসিন্দা হওয়ায় শৈশবকাল থেকেই মাকে দেখে আসছি সরস্বতী পুজোর আগের দিন বাজার থেকে শিষ পালং, গোটা মুগ, গোটা বেগুন, গোটা শিম, গোটা কড়াইশুটি, টোপা কুল, সজনে ফুল এগুলো আনেন। সরস্বতী পুজোর দিন বিকেলের দিকে পঞ্চমী থাকতেই পরিষ্কার হাঁড়িতে কোনও সবজি না কেটেই কাঁচা তেল নুন লঙ্কা ইত্যাদি সহযোগে সেদ্ধ করেন।
এটাই গোটা সেদ্ধ নামে পরিচিত। পরের দিন ষষ্ঠী তিথিতে মা ষষ্ঠী অর্থাৎ শিল নোড়াকে স্নান করিয়ে নতুনচেলি, সিঁদুর, সাদা দই ও মিষ্টি সহযোগে গোটা সেদ্ধ দিয়ে পুজো দেয়া হয়।
এরপর সেই গোটা সেদ্ধ নিজের পরিবার পরিচিত ও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিতরণ করা হয়। পরের দিন স্নান করে দই ভাতের সঙ্গে গোটা সেদ্ধ আমরা বরাবর খেয়ে আসছি। এটাই আমাদের বাড়ির রেওয়াজে পরিণত হয়। অনেকে এটিকে শীতল ষষ্ঠীও বলে থাকেন।
সব গোটা সবজি দিয়ে তৈরি এই গোটা সেদ্ধ স্বাদে ও গুনে অতুলনীয়। মার কাছে শুনেছি বসন্ত পঞ্চমীর পরেই আসতে আসতে গরমের হাওয়া শুরু হয়। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্ত্বেও এই হাওয়া হাম, পক্স তথা বসন্ত রোগের বাহক। গোটা সেদ্ধ এর মধ্যে আছে এক অপূর্ব খাদ্য গুণ যা কিনা এই রোগগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। পেট ঠান্ডা লাগে এবং শরীর তাজা রাখে।
আসলে ধর্ম বা সংস্কারের নামে আমরা যে উপাচার গুলি প্রাচীন কাল থেকে মেনে আসছি, সেগুলির অনেকাংশেই স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈজ্ঞানিক। তাই গোটা সেদ্ধ যে বাঙালির কমফোর্ট ফুড সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আসুন না অনেক ব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় বার করে সম্ভব হলে বাংলার এই প্রথাটি বাঁচিয়ে রাখি। আদপে আমাদের শরীর বাঁচাবে এটি।
লেখক : বিরাজলক্ষী ঘোষ, গবেষক, পরিবেশ সংগঠক ও সমাজ চিন্তক
One thought on "বাঙালীর কমফোর্ট ফুড: গোটা সেদ্ধ"