ঢাকা ১২:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশবিরোধী অপপ্রচার বন্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
  • আপডেট সময় : ০৫:২৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০২১ ১৬৯ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা অভিযুক্ত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েকজন তথাকথিত সাংবাদিক এবং বরখাস্তকৃত সামরিক কর্মকর্তা, বিলাতে পালিয়ে থাকা গ্রেনেড  হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান, ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান প্রমুখ মিলিতভাবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বসে সামাজিক গণমাধ্যমে যে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, সেগুলো যে সেসব দেশেও অপরাধ, তা বলাই বাহুল্য।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এ ব্যাপারে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের দূতাবাসগুলো অথবা অন্য কেউ এ পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেননি। নিশ্চিতভাবে এ দায়িত্বটা প্রাথমিকভাবে সেসব দেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর, যাদের মৌলিক দায়িত্ব স্বাগতিক দেশ-গুলোতে অবস্থান করে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ। এসব ইউটিউব অপরাধীরা যে বাংলাদেশের স্বার্থকে মারাত্মকভাবে বিনষ্ট করছেন, তা তো আর কারো চোখে আঙুল দিয়ে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দূতাবাসগুলোর ব্যর্থতা বা নিষ্ক্রিয়তা, যা-ই বলা হোক না কেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই অপপ্রচার, মিথ্যাচারগুলো বাংলা ভাষায় বলে যেসব দেশে বসে এগুলো তাঁরা

অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছেন, সেসব দেশের কর্তৃপক্ষ তা বুঝতে অক্ষম। দ্বিতীয়ত, এগুলো কর্তৃপক্ষের নজরে না আনলে তারাই বা কিভাবে জানবে? ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সেই স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণও। পৃথিবীর কোনো দেশেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ নয়। একজনের স্বাধীনতা অন্যের স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করতে পারে না। সুতরাং এসব অপরাধীচক্র যা লিখছে এবং বলছে, তা যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বাইরে, তা-ও তো কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার, যার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ

আইনজীবীদের সহায়তা। এসব কাজ নিশ্চিতভাবে ব্যয়বহুল বিধায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে এ দায়িত্ব নেওয়া কঠিন বৈকি। কিন্তু তার পরও সুইডেনে বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েক জন বাঙালি এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। বিষয়টি এখনো অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, অর্থাৎ পুলিশের কাছে দলিল-প্রমাণাদিসহ নালিশ করা হয়েছে মাত্র, তাই এর চূড়ান্ত ফলাফল দেখতে আমাদের বেশ সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তাঁদের প্রতি সাধুবাদ এ জন্য যে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে এ ব্যাপারে গবেষণা করে নিজ খরচে অন্তত একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার থেকে আমরা ভবিষ্যতে সুফল আশা করতেও পারি।

প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসবাসরত ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম এবং ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সুইডেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ভুইয়া, প্রকৌশলী হেদায়াতুল ইসলাম শেলী, দলিলউদ্দিন প্রমুখ এই উদ্যোগটির সূচনা করেন। তসলিম খলিল নামে সুইডেনে বসে যে অপরাধী ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াটে ভরপুর অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সুইডেনের পুলিশের কাছে প্রামাণ্য দলিলসহ নালিশ দায়ের করেছেন এবং সেই দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করে সুইডেনের পুলিশ এটি আমলে নিয়ে

তদন্তসহ পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে বলে সুইডেনে বসবাসরত ওই বাঙালিরা জানিয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন তসলিম খলিল সুইডেনে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বেশ কিছুকাল ধরে। জঘন্য এই মিথ্যাচারী ‘নেত্র নিউজ’ নামের একটি অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক, ইউটিউব প্রভৃতির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছেড়ে বাংলাদেশ সরকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বানোয়াট প্রচারণার মাধ্যমে শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করে

বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। দেশ থেকে পলাতক এই ষড়যন্ত্রকারী অতীতে আলজাজিরায় মিথ্যা প্রচারেও অংশ নিয়েছিলেন। অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ষড়যন্ত্রকারীদের মতো তসলিম খলিলও উসকানি দিচ্ছেন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের, ছড়াচ্ছেন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প এবং ভারতবিরোধী প্রচারণা। তাঁরা জানিয়েছেন লন্ডনে বসবাসরত ২১ আগস্ট খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক জিয়া এবং অন্যান্য চক্রান্তকারীর সঙ্গে একত্র হয়ে পলাতক তসলিম খলিল প্রচুর টাকা খরচ করে এসব অপরাধমূলক অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা আর চালিয়ে যেতে দেওয়া যায় না।

উল্লেখ্য যে সম্প্রতি বাংলাদেশের কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় যে ১৫ জন এ ধরনের পলাতক অপরাধী, ষড়যন্ত্রকারীর নামসহ বিস্তারিত প্রকাশ করেছে, পলাতক তসলিম খলিল তাঁদের অন্যতম।

যদিও এঁদের বিচারের আওতায় আনার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে, এঁদের দেশে এনে বিচারে দেওয়া; কিন্তু এ কথা সবাই জানেন যে কোনো আসামি একবার দেশ থেকে পালাতে পারলে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ নয়। সে অর্থে তাঁদের বিচার সে দেশে হওয়ার চেষ্টা করা উচিত, যে দেশে বসে তাঁরা অপরাধ করছেন। এ কথা বলার প্রয়োজন নেই যে এঁরা যেসব দেশে বসে এসব ষড়যন্ত্রমূলক, মিথ্যাভিত্তিক অপকর্ম করছেন, সেসব দেশের আইনেও এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এঁদের বিচারে আনার জন্য যা প্রয়োজন তা হলো সেসব দেশের কর্তৃপক্ষকে অবগত করা আইনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে।

আরো যে কয়টি দেশে এই অশুভচক্র তাদের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে—যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি। কুখ্যাত এসব পলাতকের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের দেশের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আর কেউ কেউ বিচারাধীন আসামি, কেউ আবার বরখাস্তকৃত সামরিক কর্মকর্তা। মূলত তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের আইনে মামলা হওয়ার পরেই তাঁরা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তারেক

রহমান, ডেভিড বার্গম্যান, বিলেতে বসবাসরত জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকসহ প্রবাসে বসবাসরত বিএনপি-জামায়াতের অন্যান্য নেতার উসকানি পেয়ে ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়ে। এঁদের পেছনে প্রচুর পয়সা ঢালছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং তারেক রহমান বিলেতে এবং অন্যান্য দেশে প্রচুর টাকা পাচার করেছেন। দেশে বসে এঁদের কুকর্মে সহযোগিতা করছেন আরো বেশ কয়েকজন।

এখানে উল্লেখ্য যে তথ্য-প্রযুক্তি আইনেও এঁদের বিচার আমাদের দেশের আদালতে হতে পারে। এ ছাড়া মানহানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইনেও এঁদের বিচার সম্ভব, যদিও এঁদের ধরে আনা কঠিন। তবে এঁরা পলাতক থাকলে দেশে থাকা এঁদের সমস্ত স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা যায়। আর এঁদের বিরুদ্ধে যদি বিদেশে টাকা পাচার প্রমাণ করা যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী তাঁরা যেসব দেশে টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন, সেসব দেশের কর্তৃপক্ষ এবং

ব্যাংকগুলো তাঁদের টাকা বাজেয়াপ্ত করে টাকাগুলো আমাদের কাছে ফেরত পাঠাতে পারে আর এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহায়তাকারী সংস্থা হচ্ছে ‘এগমন্ট গ্রুপ অব ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটস’। বাংলাদেশে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে, এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে। বিলেতে ‘প্রফিট অব ক্রাইম অ্যাক্ট’ নামের একটি আইন রয়েছে, যার ভিত্তিতে বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা সরকার বাজেয়াপ্ত করতে

পারে। এ ছাড়া আরেকটি আইন রয়েছে, যার নাম ‘আন ডিসক্লোজড অ্যাসেট অ্যাক্ট’, যে আইনের ভিত্তিতে যদি দেখা যায় কোন ব্যক্তি কিভাবে সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁর কোনো হিসাব নেই, তাহলে সেসব সম্পত্তিও বাজেয়াপ্তযোগ্য। এ ধরনের আইন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও রয়েছে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা লাগানোর দায়িত্ব তো দূতাবাসগুলোকেই নিতে হবে। এসব আইন সম্পর্কে তারা আদৌ অবগত আছে কি না, সেটিও প্রশ্ন বৈকি। তবে না জানলে নিশ্চয় তারা জেনে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, এটি তাদের দায়িত্বের অন্যতম অংশ।

সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ নেতারা যা করেছেন, অন্যান্য দেশের বাঙালিরাও যদি সে পন্থা বা আরো ফলপ্রসূ পন্থা গ্রহণ করেন, তাহলে এসব অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে না এনেও বিদেশেই তাঁদের বিচার এবং শাস্তি হতে পারে এবং এভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যেতে পারে। তা ছাড়া যথাযোগ্য প্রমাণসহ তাঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যেতে পারে। যাঁরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বড় গলায় বলে থাকেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত যে

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত, হাউস অব লর্ডসসহ প্রতিটি আদালতই ‘স্পাইকেচার’ নামের একটি পুস্তকের প্রকাশনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন এই মন্তব্য করে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে দেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করা যায় না। এসব পদক্ষেপই অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যার দায়িত্ব রাষ্ট্রের পক্ষেই নেওয়া সম্ভব। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাঙালিরা মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারেন নিজ নিজ পকেটের পয়সা একত্র করে। আমার জানামতে, বিলেতে এ ধরনের একটি প্রচেষ্টা এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে।

বিদেশে বসবাসরত এসব অপরাধী বাংলাদেশে বসবাসরত তাঁদের নিকটজনদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলাপ করে থাকেন। বাংলাদেশে বসবাসরত যেসব আপনজন বিদেশে বসবাসরত এসব অপরাধীর ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য পাঠাচ্ছেন, তাঁরাও শাস্তিযোগ্য অপরাধী। সম্প্রতি কনক সরওয়ার নামের এমনই এক পলাতক অপরাধীর বোনকে গ্রেপ্তার করে এবং তাঁর রিমান্ড চেয়ে কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজটি করেছে। কেননা সূত্র অনুযায়ী এই মহিলাও উল্লিখিত ষড়যন্ত্রমূলক

কাজে লিপ্ত থেকে বহু মিথ্যা তথ্য পাঠাচ্ছিলেন। বিদেশে অবস্থানরত এসব অপরাধীর দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনের ওপর নজরদারি শুরু করলে, তাদের রিমান্ডে পাঠালে অনেক তথ্যই পাওয়া সম্ভব হতে পারে এবং সেই সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা ধরা পড়বে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধানের বক্তব্যটি খুবই প্রশংসনীয়। তিনি বলেছেন, অনলাইনে সক্রিয় জঙ্গিদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে এটি বলা প্রয়োজন যে আমাদের দেশে অনেক জ্ঞানীজনও মনে করেন ইন্টারপোল বিদেশ থেকে অপরাধীদের ধরে আনতে পারে। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোনো দেশই কোনো লোককে পাঠিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাও ইন্টারপোলকে দেয়নি, কোনো দেশেই ইন্টারপোলের কোনো স্টেচুটারি এখতিয়ার বা ক্ষমতা নেই। এ ধরনের কোনো আইন করাও সম্ভব নয়। কেননা সেটি হবে সংবিধানবিরোধী এবং একটি দেশের

সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল। অনেকে ভুল করে মনে করেন ইন্টারপোল জাতিসংঘের পুলিশ। জাতিসংঘে এর কনসালটেটিভ মর্যাদা রয়েছে বটে; কিন্তু এটি মোটেও জাতিসংঘের অংশ নয়, এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ সংস্থাগুলোর সমিতি। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে, যা এটি পালন করে মূলত তথ্য আদান-প্রদান করে বিভিন্ন রঙের নোটিশ পাঠিয়ে, যা এই সংস্থার মূল কাজ।

এসব অপরাধ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কথা অনেকটাই হতাশাব্যঞ্জক এই অর্থে যে তাঁর কথায় মনে হলো, এসব ব্যাপারে ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দয়ার ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের তেমন কিছুই করার নেই আর ইউটিউব, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছে না। তিনি আরো বলেছেন, এ ব্যাপারে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য, যা অনুপস্থিত। দেশবাসীর প্রত্যাশা, এ ব্যাপারে সরকার কঠোর হবে। একই সঙ্গে বিদেশে বসবাসরত বাঙালিরা এগিয়ে এলেও এই অপরাধীচক্রকে দমানো সম্ভব। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে চলমান রাখার জন্য এদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। সূত্র কালেরকন্ঠ

লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দেশবিরোধী অপপ্রচার বন্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা

আপডেট সময় : ০৫:২৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০২১

বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা অভিযুক্ত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েকজন তথাকথিত সাংবাদিক এবং বরখাস্তকৃত সামরিক কর্মকর্তা, বিলাতে পালিয়ে থাকা গ্রেনেড  হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান, ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান প্রমুখ মিলিতভাবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বসে সামাজিক গণমাধ্যমে যে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, সেগুলো যে সেসব দেশেও অপরাধ, তা বলাই বাহুল্য।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এ ব্যাপারে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের দূতাবাসগুলো অথবা অন্য কেউ এ পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেননি। নিশ্চিতভাবে এ দায়িত্বটা প্রাথমিকভাবে সেসব দেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর, যাদের মৌলিক দায়িত্ব স্বাগতিক দেশ-গুলোতে অবস্থান করে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ। এসব ইউটিউব অপরাধীরা যে বাংলাদেশের স্বার্থকে মারাত্মকভাবে বিনষ্ট করছেন, তা তো আর কারো চোখে আঙুল দিয়ে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দূতাবাসগুলোর ব্যর্থতা বা নিষ্ক্রিয়তা, যা-ই বলা হোক না কেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই অপপ্রচার, মিথ্যাচারগুলো বাংলা ভাষায় বলে যেসব দেশে বসে এগুলো তাঁরা

অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছেন, সেসব দেশের কর্তৃপক্ষ তা বুঝতে অক্ষম। দ্বিতীয়ত, এগুলো কর্তৃপক্ষের নজরে না আনলে তারাই বা কিভাবে জানবে? ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সেই স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণও। পৃথিবীর কোনো দেশেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ নয়। একজনের স্বাধীনতা অন্যের স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করতে পারে না। সুতরাং এসব অপরাধীচক্র যা লিখছে এবং বলছে, তা যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বাইরে, তা-ও তো কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার, যার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ

আইনজীবীদের সহায়তা। এসব কাজ নিশ্চিতভাবে ব্যয়বহুল বিধায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে এ দায়িত্ব নেওয়া কঠিন বৈকি। কিন্তু তার পরও সুইডেনে বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েক জন বাঙালি এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। বিষয়টি এখনো অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, অর্থাৎ পুলিশের কাছে দলিল-প্রমাণাদিসহ নালিশ করা হয়েছে মাত্র, তাই এর চূড়ান্ত ফলাফল দেখতে আমাদের বেশ সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তাঁদের প্রতি সাধুবাদ এ জন্য যে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে এ ব্যাপারে গবেষণা করে নিজ খরচে অন্তত একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার থেকে আমরা ভবিষ্যতে সুফল আশা করতেও পারি।

প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসবাসরত ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম এবং ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সুইডেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ভুইয়া, প্রকৌশলী হেদায়াতুল ইসলাম শেলী, দলিলউদ্দিন প্রমুখ এই উদ্যোগটির সূচনা করেন। তসলিম খলিল নামে সুইডেনে বসে যে অপরাধী ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াটে ভরপুর অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সুইডেনের পুলিশের কাছে প্রামাণ্য দলিলসহ নালিশ দায়ের করেছেন এবং সেই দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করে সুইডেনের পুলিশ এটি আমলে নিয়ে

তদন্তসহ পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে বলে সুইডেনে বসবাসরত ওই বাঙালিরা জানিয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন তসলিম খলিল সুইডেনে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বেশ কিছুকাল ধরে। জঘন্য এই মিথ্যাচারী ‘নেত্র নিউজ’ নামের একটি অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক, ইউটিউব প্রভৃতির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছেড়ে বাংলাদেশ সরকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বানোয়াট প্রচারণার মাধ্যমে শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করে

বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। দেশ থেকে পলাতক এই ষড়যন্ত্রকারী অতীতে আলজাজিরায় মিথ্যা প্রচারেও অংশ নিয়েছিলেন। অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ষড়যন্ত্রকারীদের মতো তসলিম খলিলও উসকানি দিচ্ছেন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের, ছড়াচ্ছেন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প এবং ভারতবিরোধী প্রচারণা। তাঁরা জানিয়েছেন লন্ডনে বসবাসরত ২১ আগস্ট খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক জিয়া এবং অন্যান্য চক্রান্তকারীর সঙ্গে একত্র হয়ে পলাতক তসলিম খলিল প্রচুর টাকা খরচ করে এসব অপরাধমূলক অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা আর চালিয়ে যেতে দেওয়া যায় না।

উল্লেখ্য যে সম্প্রতি বাংলাদেশের কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় যে ১৫ জন এ ধরনের পলাতক অপরাধী, ষড়যন্ত্রকারীর নামসহ বিস্তারিত প্রকাশ করেছে, পলাতক তসলিম খলিল তাঁদের অন্যতম।

যদিও এঁদের বিচারের আওতায় আনার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে, এঁদের দেশে এনে বিচারে দেওয়া; কিন্তু এ কথা সবাই জানেন যে কোনো আসামি একবার দেশ থেকে পালাতে পারলে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ নয়। সে অর্থে তাঁদের বিচার সে দেশে হওয়ার চেষ্টা করা উচিত, যে দেশে বসে তাঁরা অপরাধ করছেন। এ কথা বলার প্রয়োজন নেই যে এঁরা যেসব দেশে বসে এসব ষড়যন্ত্রমূলক, মিথ্যাভিত্তিক অপকর্ম করছেন, সেসব দেশের আইনেও এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এঁদের বিচারে আনার জন্য যা প্রয়োজন তা হলো সেসব দেশের কর্তৃপক্ষকে অবগত করা আইনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে।

আরো যে কয়টি দেশে এই অশুভচক্র তাদের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে—যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি। কুখ্যাত এসব পলাতকের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের দেশের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আর কেউ কেউ বিচারাধীন আসামি, কেউ আবার বরখাস্তকৃত সামরিক কর্মকর্তা। মূলত তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের আইনে মামলা হওয়ার পরেই তাঁরা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তারেক

রহমান, ডেভিড বার্গম্যান, বিলেতে বসবাসরত জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকসহ প্রবাসে বসবাসরত বিএনপি-জামায়াতের অন্যান্য নেতার উসকানি পেয়ে ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়ে। এঁদের পেছনে প্রচুর পয়সা ঢালছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং তারেক রহমান বিলেতে এবং অন্যান্য দেশে প্রচুর টাকা পাচার করেছেন। দেশে বসে এঁদের কুকর্মে সহযোগিতা করছেন আরো বেশ কয়েকজন।

এখানে উল্লেখ্য যে তথ্য-প্রযুক্তি আইনেও এঁদের বিচার আমাদের দেশের আদালতে হতে পারে। এ ছাড়া মানহানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইনেও এঁদের বিচার সম্ভব, যদিও এঁদের ধরে আনা কঠিন। তবে এঁরা পলাতক থাকলে দেশে থাকা এঁদের সমস্ত স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা যায়। আর এঁদের বিরুদ্ধে যদি বিদেশে টাকা পাচার প্রমাণ করা যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী তাঁরা যেসব দেশে টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন, সেসব দেশের কর্তৃপক্ষ এবং

ব্যাংকগুলো তাঁদের টাকা বাজেয়াপ্ত করে টাকাগুলো আমাদের কাছে ফেরত পাঠাতে পারে আর এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহায়তাকারী সংস্থা হচ্ছে ‘এগমন্ট গ্রুপ অব ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটস’। বাংলাদেশে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে, এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে। বিলেতে ‘প্রফিট অব ক্রাইম অ্যাক্ট’ নামের একটি আইন রয়েছে, যার ভিত্তিতে বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা সরকার বাজেয়াপ্ত করতে

পারে। এ ছাড়া আরেকটি আইন রয়েছে, যার নাম ‘আন ডিসক্লোজড অ্যাসেট অ্যাক্ট’, যে আইনের ভিত্তিতে যদি দেখা যায় কোন ব্যক্তি কিভাবে সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁর কোনো হিসাব নেই, তাহলে সেসব সম্পত্তিও বাজেয়াপ্তযোগ্য। এ ধরনের আইন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও রয়েছে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা লাগানোর দায়িত্ব তো দূতাবাসগুলোকেই নিতে হবে। এসব আইন সম্পর্কে তারা আদৌ অবগত আছে কি না, সেটিও প্রশ্ন বৈকি। তবে না জানলে নিশ্চয় তারা জেনে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, এটি তাদের দায়িত্বের অন্যতম অংশ।

সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ নেতারা যা করেছেন, অন্যান্য দেশের বাঙালিরাও যদি সে পন্থা বা আরো ফলপ্রসূ পন্থা গ্রহণ করেন, তাহলে এসব অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে না এনেও বিদেশেই তাঁদের বিচার এবং শাস্তি হতে পারে এবং এভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যেতে পারে। তা ছাড়া যথাযোগ্য প্রমাণসহ তাঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যেতে পারে। যাঁরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বড় গলায় বলে থাকেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত যে

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত, হাউস অব লর্ডসসহ প্রতিটি আদালতই ‘স্পাইকেচার’ নামের একটি পুস্তকের প্রকাশনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন এই মন্তব্য করে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে দেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করা যায় না। এসব পদক্ষেপই অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যার দায়িত্ব রাষ্ট্রের পক্ষেই নেওয়া সম্ভব। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাঙালিরা মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারেন নিজ নিজ পকেটের পয়সা একত্র করে। আমার জানামতে, বিলেতে এ ধরনের একটি প্রচেষ্টা এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে।

বিদেশে বসবাসরত এসব অপরাধী বাংলাদেশে বসবাসরত তাঁদের নিকটজনদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলাপ করে থাকেন। বাংলাদেশে বসবাসরত যেসব আপনজন বিদেশে বসবাসরত এসব অপরাধীর ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য পাঠাচ্ছেন, তাঁরাও শাস্তিযোগ্য অপরাধী। সম্প্রতি কনক সরওয়ার নামের এমনই এক পলাতক অপরাধীর বোনকে গ্রেপ্তার করে এবং তাঁর রিমান্ড চেয়ে কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজটি করেছে। কেননা সূত্র অনুযায়ী এই মহিলাও উল্লিখিত ষড়যন্ত্রমূলক

কাজে লিপ্ত থেকে বহু মিথ্যা তথ্য পাঠাচ্ছিলেন। বিদেশে অবস্থানরত এসব অপরাধীর দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনের ওপর নজরদারি শুরু করলে, তাদের রিমান্ডে পাঠালে অনেক তথ্যই পাওয়া সম্ভব হতে পারে এবং সেই সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা ধরা পড়বে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধানের বক্তব্যটি খুবই প্রশংসনীয়। তিনি বলেছেন, অনলাইনে সক্রিয় জঙ্গিদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে এটি বলা প্রয়োজন যে আমাদের দেশে অনেক জ্ঞানীজনও মনে করেন ইন্টারপোল বিদেশ থেকে অপরাধীদের ধরে আনতে পারে। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোনো দেশই কোনো লোককে পাঠিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাও ইন্টারপোলকে দেয়নি, কোনো দেশেই ইন্টারপোলের কোনো স্টেচুটারি এখতিয়ার বা ক্ষমতা নেই। এ ধরনের কোনো আইন করাও সম্ভব নয়। কেননা সেটি হবে সংবিধানবিরোধী এবং একটি দেশের

সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল। অনেকে ভুল করে মনে করেন ইন্টারপোল জাতিসংঘের পুলিশ। জাতিসংঘে এর কনসালটেটিভ মর্যাদা রয়েছে বটে; কিন্তু এটি মোটেও জাতিসংঘের অংশ নয়, এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ সংস্থাগুলোর সমিতি। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে, যা এটি পালন করে মূলত তথ্য আদান-প্রদান করে বিভিন্ন রঙের নোটিশ পাঠিয়ে, যা এই সংস্থার মূল কাজ।

এসব অপরাধ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কথা অনেকটাই হতাশাব্যঞ্জক এই অর্থে যে তাঁর কথায় মনে হলো, এসব ব্যাপারে ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দয়ার ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের তেমন কিছুই করার নেই আর ইউটিউব, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছে না। তিনি আরো বলেছেন, এ ব্যাপারে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য, যা অনুপস্থিত। দেশবাসীর প্রত্যাশা, এ ব্যাপারে সরকার কঠোর হবে। একই সঙ্গে বিদেশে বসবাসরত বাঙালিরা এগিয়ে এলেও এই অপরাধীচক্রকে দমানো সম্ভব। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে চলমান রাখার জন্য এদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। সূত্র কালেরকন্ঠ

লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি