জলমগ্ন আমাদের প্রাণের মালদা!

- আপডেট সময় : ১০:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মে ২০২১ ২৬৪ বার পড়া হয়েছে
ইয়াসে তছনছ মালদার মেডিকেলে থৈ থৈ জল। চরম ভোগান্তিতে রোগী, প্রশাসন এবং সেবাদায়ীরা’ এই ভোগান্তির শিরোনাম হৃদয়ে রক্ষরণ!’
এক নতুন অভিজ্ঞা অর্জন করলো মালদাবাসী। কভিড জমানায় এমনিতর অশান্তিতে পড়ার মতো কোন আশঙ্কা কাজ করেনি। তারপরও আচমকা ‘প্রলয়’ অতিথি হিসেবে বয়ে গেলো ‘ইয়াস’।

ইয়াস চলে গেছে। কিন্তু রেখে গেছে একগুচ্ছ ক্ষতচিহ্ন, যা এখন ‘রক্তাক্ত দগদগে ঘা।’ মানুষ কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনা আজকাল প্রায়াশই। কিন্তু প্রকৃতি এই বিষয়ে ভীষণ সাচ্চা যে, তার প্রমান এই ইয়াস।
গেল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবারের সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় জেলার ১৫ টি ব্লকে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৮০ মিলিমিটার। এই সত্য কথাটি আবহাওয়া দপ্তরের হিসেবের পূর্বাভাস ছিলোই। সেই মতো প্রকৃতিও স্বাদে-আহ্লাদে তার অকৃপণ হস্ত মালদা জেলাবাসীকে উজার করে দিয়েছে। তথাপি, আমরা প্রকৃতির ওপর দোষারোপ করছি। অথচ এই দোষাদোষী কি সত্যিই প্রকৃতির প্রাপ্য?
বিশ্বের জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ও সমুদ্রগর্ভের উত্তপ্ত হয়ে ওঠা বিশ্বনাগরিক-জীবনের কাছে সুবিদিত। ঝড় আসছে একের পর এক নানা নামে সেজেগুজে। এসবের উৎপত্তিস্থল সমুদ্রগর্ভ। ‘গর্ভের ভেতর-ই তো ভ্রূণের বৃদ্ধিস্থান! আর, তা যদি উপযুক্ততা পায় পারিপার্শ্বিকতার কারণে, বিজ্ঞানের ভাষায় তা হলো মেটিরিয়্যালিস্টিক্স ইক্যুয়েশন।’
বস্ততে বস্তুতে সংঘর্ষ এবং তৃতীয় বস্তুর উৎপাদনে, পূর্বের দুই বস্তুর সমস্ত চারিত্রিক জিনগত গুনাবলী থাকেই। আমাদের দেখা ইয়াসসহ সবগুলি ঝড় বা সুপারসাইক্লোনের ভয়ঙ্করী রূপ তার জলন্ত প্রমাণ। মালদা জেলা এখানে আলোচিত-সমালোচিত হলেও, একথা মানতেই হবে যে, নদীমাতৃক বাংলাদেশ ঘেষা এই জেলাটি বিশ্ববিচ্ছিন্ন কোনো স্থান নয়। অভাব অভিযোগ অস্বীকার করার উপায় নেই। তথাপি আলোচনায় উঠে আসে বিশ্বময় সেন্স অফ হিউমারের প্রসঙ্গটি।
উড়িষ্যার বালাসোরে আছড়ানোর পর এর গতিবিধি ছিলো মেদিনীপুর চব্বিশ পরগণা, যে জেলাগুলোর অধিকাংশই সুন্দরবনের অংশ। এরপর ঝাড়খন্ড দিয়ে বিহার হয়ে উত্তরপ্রদেশে। সেইমতো সর্বাত্মক ধ্বংসলীলা চালিয়ে ইয়াস যখন ঝাড়খন্ডে প্রবেশ করে, তখন ওই রাজ্যের লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় তার প্রভাব পরবেই। এই পর্যন্ত যা কিছু বলা হলো, তার অধিকাংশই সর্বজনবিদিত।
কিন্তু যা বিদিত হলেও রাজনৈতিকভাবে সময়োচিত ব্যবস্থা নেওয়ার নেটওয়ার্কের একেবারেই ধারেকাছেও যায় না, তা হলো কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের ব্যক্তিগত স্বাধীনচেতা মতামত। যেহেতু, আবহাওয়া দপ্তরটি কৃষিদপ্তরেরই একটি যুগ্ম সংস্থা, তাই পূর্বাভাস সত্বেও মালদা জেলায় ২৪ ঘন্টায় ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে টাকার অঙ্কে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৩৯৯ কোটি ৪০ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার।
পরবর্তীতে এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই অনুমেয়। বোরোধান, পাট, ভুট্টা, সমস্ত রকম ডাল শষ্যসহ তিল, বাদাম চাষে এই ক্ষতির পরিমাণ বন্টিত হয়ে আছে। এখনও আমের ক্ষতির হিসেব বাইরেই রয়েছে উল্লেখিত হিসেব থেকে!
এরপর আসি নাগরিক ক্ষতি। নাগরিক জীবন সভ্যতার আলোকপ্রাপ্তিতে পৌঁছালেও আজও এই জেলাটি, ‘প্লাস্টিক যে প্রকৃতির অভিশাপ’, তা যেনেও কর্ণপাতহীন। ফলত, যা হওয়ার তাই হলো। সমস্ত ড্রেনগুলো প্লাস্টিকের একছত্র অধিপত্যে থাকায় জেলাবাসীকে আজপর্যন্ত জলযন্ত্রনায় কাটাতে হচ্ছে। সর্বশেষে ‘স্বার্থ না পরার্থ’-বড়, এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, জল তো জলেরই শরীরে মেশে, যেমন মেশে শিশু মাতৃশরীরে।
তাই জলাভূমিকে বুজিয়ে নগরায়নের ধারণার ভুল আরও একবার এই জেলাবাসীকে প্রমাণ দেয়, প্রকৃতির নিয়ম না মানলে, প্রকৃতি মানব সমাজের দ্বৈরথসমরে অধিকতর শক্তিশালী প্রকৃতিই জয়ী হয়। তাই বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ নয়, একেবারেই তুল্যমূল্য বিচারের বাণীতে মানবতার পথিক, তুমি মানববিরোধী হলেই জানতে পারবে একদিন যে, তুমি প্রকৃতির রাজরোষে পরে ইতিহাসের ডাইনোসর প্রজাতি হয়ে যাবে।
শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস (মালদা) পশ্চিমবঙ্গ
sharmistha.mld@gmail.com