ড. বিরাজলক্ষ্মী ঘোষ
ক্রিসমাসের জমজমা মরশুম আর জাঁকিয়ে নেমে আসা শীতের মধ্যে একটু ফুরসত পেয়ে হাজির হয়েছিলাম বকখালি সৈকতে।পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় একটি ছোট পর্যটন কেন্দ্র এটি।কিন্তু শহরের বিরক্তিকর পরিবেশ আর গ্যাঞ্জাম থেকে একটু স্বস্তি পেতে হাজির হয়েছেন পর্যটক।
সৈকতে বসছে হরেক খাবারের দোকান আর তার সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছের পসরা।আছে সার্ডিন, সি ফুড ,স্কুইড।সবাই ভিড় জমিয়েছেন স্টলে স্টলে।
হঠাৎ কানে ভেসে এলো, “গুলাবী আঁখে যো তেরি দেখি সারাবি ইয়ে দিল হো গয়া”
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি এক ভদ্রলোক অদ্ভুত একটি যন্ত্র নিয়ে গান শোনাচ্ছেন।আর ছবিও দেখা যাচ্ছে।যন্ত্র টির গায়ে আছে দেখার জায়গা।ভদ্রলোক অদ্ভুত ভাবে একটি চাকা ঘোরাচ্ছেন।আর গর্তে চোখ লাগিয়ে দেখ যাচ্ছে ছায়াছবির গান।
এগিয়ে গেলাম আগ্রহের সঙ্গে।পরিচয় হলো।ওনার নাম শাহজাহান।কলকাতার আদি বাসিন্দা।মোমিনপুর ওনার বাড়ি।গত পঁচিশ বছরের মতো আছেন কুলপিতে।বছরান্তে বাড়ি আসেন।ছেলেপিলে নাতি নাতনী আছে।কিন্তু উনি নিজেই রোজগার করে চালান।কলের গান বা বায়স্কোপ টি দিয়ে। হ্যাঁ এটাই ওনার ওই যন্ত্রটির নাম।গত ৫০বছর ধরে এটি দিয়েই ওনার রুজি রুটি চলে।কিনেছিলেন মৌলালির দোকান থেকে।কখনও খারাপ হয়নি।উনিও সঙ্গে রেখেছেন যত্ন করে। বিংশ শতাব্দীর হারিয়ে যাওয়া কলের গান।
পুরাতন ঐতিহ্য কে সঙ্গে নিয়ে দিব্যি চলেছেন শাহজাহান।কোনো ক্ষোভ নেই লোভ নেই।বুকে করে বয়ে চলেছেন ঐতিহ্যের ধারায়।একটু লাজুক মানুষ জোর করেই কিছু দিলাম হাতে।একসঙ্গে খেলাম চপ মুড়ি কফি।ছেলেকেও দেখলাম।ওর প্রজন্মে এটা বাড়তি পাওনা।ধন্যবাদ দিয়ে বললাম কাকা তুমি একটা দারুনস্বাদ দিলে।প্রথম দেখেছি পথের পাঁচালীর অপু দুর্গাকে দেখতে আর এটি চাক্ষুষ। সব পুরনো হারিয়ে যায় না।আমরাই তাদের হারিয়ে ফেলি। সারা ভারতে হয়তো একজন কি দুজন আছেন এমন।নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে হলো।সরকারি সাহায্য পান কিছু ?জিজ্ঞেস করতে উনি কোনো গুরুত্বই দিলেন না।
রাত বাড়ছে ফিরতে হবে।এগিয়ে গেলাম।পেছন থেকে ভেসে আসছে “পর্দেমে রহেনে দো.. পর্দা না উঠাও”
মনে মনে বললাম বেঁচে থাক শাহজাহান..বেঁচে থাক কলের গান..।
কপিরাইট:সংরক্ষিত
@NNews
Voice Ekattor