ঢাকা ১১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনায় আক্রান্ত ১৭ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত ৩৮ লাখ ২৫৬

ভয়েস রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৯:৩১:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

“ইতিহাস বলছে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ প্লেগ অব এথেন্স, ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে জাস্টিনিয়ান প্লেগ, ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে দ্য ব্ল্যাক ডেথ। এর মধ্যে প্লেগ নামক মহামারী চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। তাতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়”

‘ওয়ার্ল্ডোমিটারের’ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ৬১৬ জন। একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৩৮ লাখ ২৫৬ জন। সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা ১৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৬ জন’

হাসপাতালে হাসপাতালে বুকফাটা আর্তনাদ! শান্তনার বাণী এখানে অচল। এখন যা চাই, তা অপ্রতুল। চাহিদা মাফিক সরবারাহ তলানিতে। একস্থানে হলেও অন্য স্থান থেকে যোগাড় করে চালানো যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এটি কোন বাজারে পণ্য নয়। বহু ভাবনা ও রসদ ব্যয়ে তা অর্জন করতে হয়েছে। বিশ্বজুড়েই চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি। কিন্তু যে ভাইরাসটি ঠেকাতে গোটা দুনিয়া মাঠে নেমে পড়েছে, তার নাম করোনা তথা কভিড-১৯। এই সীলমোহরকৃত ভাইরাসটির কাছে গোটা পৃথিবী আজ জিম্মি। যা থেকে মুক্ত থাকতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলা।

ইতিহাস বলছে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ প্লেগ অব এথেন্স, ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে জাস্টিনিয়ান প্লেগ, ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে দ্য ব্ল্যাক ডেথ। এর মধ্যে প্লেগ নামক মহামারী চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। তাতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়।

পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ছড়িয়ে পড়েছিল সার্স নামের এক সংক্রামক ভাইরাস। পৃথিবীর ১৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ৮ হাজারেরও বেশি লোক এবং মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের। বাংলাদেশি এক বিজ্ঞানি ড. বিজন কুমার শীল (যিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং সেখানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত) গবেষণায় ভাইরাসটির প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। যা প্রয়োগে দ্রুত প্রতিরোধী সফলতা আসে।

বর্তমান কভিড-১৯ মতো কোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ঘটেনি। সবটাই হয়েছে আঞ্চলিক। কিন্তু করোনার বেলায় তা নয়। দিন দিন ভাইরাসটির ধরন পাল্টে মারণঘাতি হয়ে ওঠছে! বিজ্ঞানের বদৌলতে গবেষণায় দ্রুত একাধিক টিকার আবিষ্কার এবং প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তাতে সুফল আসতে শুরু করলেও এখনও বিশ্বের বহুদেশের পক্ষে টিকাকরণ শুরু করা সম্ভব হয়নি। আবার যেসব দেশ শুরু করেছে, তারাও টিকার অপ্রতুল সরবরাহের কারণে টিকা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে।

‘ওয়ার্ল্ডোমিটারের’ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ৬১৬ জন ছাড়িয়েছে। একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৩৮ লাখ ২৫৬ জন। সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা ১৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৬ জন। শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত এই পরিসংখ্যান মিলেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সর্বচ্চ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট আক্রান্তর সংখ্যা ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার ৮৪৮ জন। মারা গিয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৭২৮ জন।

খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ: প্লেগ অব এথেন্স

পাঁচ বছর ধরে চলা এই মহামারীতে এক লাখের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। রোগের মূল লক্ষণ ছিল জ্বর, প্রচণ্ড তেষ্টা, গলা ও জিব রক্তাক্ত হওয়া, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া ও ক্ষত সৃষ্টি। “সুস্থ-সবল মানুষের হঠাৎ করে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। চোখ লাল হয়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছিল। জিভ ও গলা লালচে হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল।”

৫৪১ খ্রিস্টাব্দ: জাস্টিনিয়ান প্লেগ

৫৪১ খ্রিস্টাব্দে শুরু হলেও এই মহামারী চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়। ভাইরাসজনিত এই রোগ ইঁদুরের থেকে ছড়িয়ে পড়ে, এবং তা ছাড়ায় মিশর থেকে। অ্যানসিয়েন্ট হিস্টোরি এনসাইক্লোপিডিয়ায় জন হর্গানের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মিশরে প্রথম মহামারী আকারে দেখা দেয় এই প্লেগ। সেখান থেকে পুরো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারী।

১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দ: দ্য ব্ল্যাক ডেথ

ইউরোপের অন্যতম প্রাণসংহারী মহামারী ‘ব্ল্যাক ডেথ’। লাইভসায়েন্সের তথ্য মতে, এশিয়া থেকে ইউরোপে ছড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায় এই প্লেগ। অনেকের মতে, এই মহামারীতে ইউরোপের অর্ধেকের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। মৃতদের গণকবরে সমাহিত করা হয়। এটি এমনই এক মহামারী ছিল, এর কারণে সমগ্র ইউরোপের অর্থনৈতিকসহ সার্বিক জীবন কাঠামো বদলে যায়। প্রভাবিত হয় শিল্প-সাহিত্যও। বহু মানুষের প্রাণহানির কারণে শ্রমিক পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অবসান ঘটে ইউরোপের ভূমিদাস ব্যবস্থার। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ভালো মজুরি হয়, তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটে। এই ধাক্কায় সস্তা শ্রমের অভাব প্রযুক্তির উদ্ভাবনকেও এগিয়ে দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

করোনায় আক্রান্ত ১৭ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত ৩৮ লাখ ২৫৬

আপডেট সময় : ০৯:৩১:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১

“ইতিহাস বলছে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ প্লেগ অব এথেন্স, ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে জাস্টিনিয়ান প্লেগ, ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে দ্য ব্ল্যাক ডেথ। এর মধ্যে প্লেগ নামক মহামারী চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। তাতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়”

‘ওয়ার্ল্ডোমিটারের’ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ৬১৬ জন। একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৩৮ লাখ ২৫৬ জন। সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা ১৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৬ জন’

হাসপাতালে হাসপাতালে বুকফাটা আর্তনাদ! শান্তনার বাণী এখানে অচল। এখন যা চাই, তা অপ্রতুল। চাহিদা মাফিক সরবারাহ তলানিতে। একস্থানে হলেও অন্য স্থান থেকে যোগাড় করে চালানো যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এটি কোন বাজারে পণ্য নয়। বহু ভাবনা ও রসদ ব্যয়ে তা অর্জন করতে হয়েছে। বিশ্বজুড়েই চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি। কিন্তু যে ভাইরাসটি ঠেকাতে গোটা দুনিয়া মাঠে নেমে পড়েছে, তার নাম করোনা তথা কভিড-১৯। এই সীলমোহরকৃত ভাইরাসটির কাছে গোটা পৃথিবী আজ জিম্মি। যা থেকে মুক্ত থাকতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলা।

ইতিহাস বলছে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ প্লেগ অব এথেন্স, ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে জাস্টিনিয়ান প্লেগ, ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে দ্য ব্ল্যাক ডেথ। এর মধ্যে প্লেগ নামক মহামারী চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। তাতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়।

পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ছড়িয়ে পড়েছিল সার্স নামের এক সংক্রামক ভাইরাস। পৃথিবীর ১৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ৮ হাজারেরও বেশি লোক এবং মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের। বাংলাদেশি এক বিজ্ঞানি ড. বিজন কুমার শীল (যিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং সেখানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত) গবেষণায় ভাইরাসটির প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। যা প্রয়োগে দ্রুত প্রতিরোধী সফলতা আসে।

বর্তমান কভিড-১৯ মতো কোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ঘটেনি। সবটাই হয়েছে আঞ্চলিক। কিন্তু করোনার বেলায় তা নয়। দিন দিন ভাইরাসটির ধরন পাল্টে মারণঘাতি হয়ে ওঠছে! বিজ্ঞানের বদৌলতে গবেষণায় দ্রুত একাধিক টিকার আবিষ্কার এবং প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তাতে সুফল আসতে শুরু করলেও এখনও বিশ্বের বহুদেশের পক্ষে টিকাকরণ শুরু করা সম্ভব হয়নি। আবার যেসব দেশ শুরু করেছে, তারাও টিকার অপ্রতুল সরবরাহের কারণে টিকা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে।

‘ওয়ার্ল্ডোমিটারের’ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ৬১৬ জন ছাড়িয়েছে। একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৩৮ লাখ ২৫৬ জন। সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা ১৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৬ জন। শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত এই পরিসংখ্যান মিলেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সর্বচ্চ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট আক্রান্তর সংখ্যা ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার ৮৪৮ জন। মারা গিয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৭২৮ জন।

খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ: প্লেগ অব এথেন্স

পাঁচ বছর ধরে চলা এই মহামারীতে এক লাখের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। রোগের মূল লক্ষণ ছিল জ্বর, প্রচণ্ড তেষ্টা, গলা ও জিব রক্তাক্ত হওয়া, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া ও ক্ষত সৃষ্টি। “সুস্থ-সবল মানুষের হঠাৎ করে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। চোখ লাল হয়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছিল। জিভ ও গলা লালচে হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল।”

৫৪১ খ্রিস্টাব্দ: জাস্টিনিয়ান প্লেগ

৫৪১ খ্রিস্টাব্দে শুরু হলেও এই মহামারী চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়। ভাইরাসজনিত এই রোগ ইঁদুরের থেকে ছড়িয়ে পড়ে, এবং তা ছাড়ায় মিশর থেকে। অ্যানসিয়েন্ট হিস্টোরি এনসাইক্লোপিডিয়ায় জন হর্গানের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মিশরে প্রথম মহামারী আকারে দেখা দেয় এই প্লেগ। সেখান থেকে পুরো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারী।

১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দ: দ্য ব্ল্যাক ডেথ

ইউরোপের অন্যতম প্রাণসংহারী মহামারী ‘ব্ল্যাক ডেথ’। লাইভসায়েন্সের তথ্য মতে, এশিয়া থেকে ইউরোপে ছড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায় এই প্লেগ। অনেকের মতে, এই মহামারীতে ইউরোপের অর্ধেকের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। মৃতদের গণকবরে সমাহিত করা হয়। এটি এমনই এক মহামারী ছিল, এর কারণে সমগ্র ইউরোপের অর্থনৈতিকসহ সার্বিক জীবন কাঠামো বদলে যায়। প্রভাবিত হয় শিল্প-সাহিত্যও। বহু মানুষের প্রাণহানির কারণে শ্রমিক পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অবসান ঘটে ইউরোপের ভূমিদাস ব্যবস্থার। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ভালো মজুরি হয়, তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটে। এই ধাক্কায় সস্তা শ্রমের অভাব প্রযুক্তির উদ্ভাবনকেও এগিয়ে দেয়।