আর্শিবাদ হয়ে আসছে অতিবৃষ্টি, মেটাবে চার গুরুতর সংকট

- আপডেট সময় : ০৫:২২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুন ২০২১ ২০৩ বার পড়া হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত
‘তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত বাড়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে। আবহাওয়া এবং পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, দেশে তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই অতিবৃষ্টি হচ্ছে। ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরে গত কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়েছে। ফলে একটা ব্যতিক্রমধর্মী জলবায়ুগত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বেশি জলীয় বাষ্প যাচ্ছে বায়ুমণ্ডলে, ফলে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে’
জুনের শুরু থেকেই ঢাকায় দেখা দিয়েছে অতিবৃষ্টি। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। হাওয়া অফিসের তথ্যমতে ১ জুন চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকায়।
গবেষণায় উঠে আসা তথ্যে মতে গত একদশক ধরে বাংলাদেশে বাৎসরিক মোট বৃষ্টিপাত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে ভয়ের কিছু নেই। উপরন্তু দেশের চারটি পরিবেশগত সংকটের সমাধানও করতে অতিবৃষ্টি।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। আগামী ২০৩০ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০-১৫ শতাংশ এবং ২০৭৫ সালে প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভেন ক্লেমেন্সের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায়ও বলা হয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষা মৌসুম ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে।
মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছিলো গোটা দেশে। সেসময় বন্যাও দেখা দেয়। পরে ২০২০ সালের বন্যার পেছনেও ছিলো অতিবৃষ্টি। ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শুধু ২০১৪ সালেই বেশি বৃষ্টিপাত হয়নি।
জানা গেছে, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত বাড়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে। আবহাওয়া এবং পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, দেশে তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই অতিবৃষ্টি হচ্ছে। ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরে গত কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়েছে। ফলে একটা ব্যতিক্রমধর্মী জলবায়ুগত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বেশি জলীয় বাষ্প যাচ্ছে বায়ুমণ্ডলে, ফলে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় একটি রূপ এই অতিবৃষ্টি। গ্রীষ্কালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমানো গেলে বৃষ্টিও সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে। তার জন্য জলাশয় বৃদ্ধি এবং গাছপালা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
বন্যা ও জলাবদ্ধতার বাইরে অতিবৃষ্টির ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের চারটি সংকটের সমাধান হতে পারে ক্রমবর্ধমান বৃষ্টিপাত।
এগুলো হচ্ছে দেশে রাসায়নিক সারের অপব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরতা কমে গেছে। অতিবৃষ্টির বন্যা পলির মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়াতে সহযোগিতা করে। যদি বন্যায় ফসলের ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায় তাহলে বন্যা পরবর্তী উৎপাদন বৃদ্ধিতে সেই ক্ষতিটা পুষিয়ে যাবে।
ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশে বেশিরভাগ নদীর জলের উৎস্য উজানের। সেই সঙ্গে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এখানকার নদীগুলোর নাব্যতা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি পর্যাপ্ত জল আসত তাহলে নাব্যতার এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। যেহেতু জল কম তাই নদীর মাঝে চর জেগে ওঠেছে। বেশি বৃষ্টি হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
অপর দিকে ঢাকাসহ সারাদেশেই ভূগর্ভস্থ জলের স্তর অনেক নিচে নেমে গিয়েছে। এখন বৃষ্টি বেশি হলে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
উজান থেকে পর্যাপ্ত জল না আসায় শুকনো মৌসুমে নদ-নদীতে জলের প্রবাহ স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না। জলের প্রবাহ কম থাকায় সমুদ্রের লোনাজল স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসে। যে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুল এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে যায়। ম্যানগ্রোভ অঞ্চল নষ্ট হচ্ছে এবং অস্তিত্ব নিয়ে হুমকিতে পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির শস্য। বৃষ্টি এনে দিতে পারে এর সমাধান।
পরিবেশবিদ প্রফেসর আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার মতে ‘বৃষ্টির জল কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আগে বৃষ্টিপাত কমার প্রবণতাটা লক্ষ্য করা যায়, প্রায় তিন দশক থেকে। তখন অতিবৃষ্টি নিয়ে কথা আসার সুযোগই ছিলো না। পরে গত প্রায় এক দশক ধরে বৃষ্টিপাত বাড়ছে।
কামরুজ্জামান দাবি করেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ। কৃষকরা বন্যা মোকাবেলা করেই শস্য ফলাচ্ছেন। একটা দীর্ঘ সময় ধরে জলের স্বল্পতায় কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে দেশীয় প্রজাতি শস্যগুলো টিকে যাবে। ফলে নতুন করে বিদেশ থেকে কোনো প্রজাতি আনার প্রয়োজন হবে না।
‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে। এমনকি অসময়ে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলাশয় তৈরি এবং বনায়নের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানো সম্ভব।