ঢাকা ০৫:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরাই শেষ জেনারেশন

সংগ্রহ : প্রতিমা সাহা দত্ত
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১ ৩৮৯ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি সংগ্রহ

আমি এটা মনে করি যে এই পৃথিবীতে যত পরিবর্তন আমাদের এই জেনারেশন দেখতে পেয়েছে তা মনে হয় আগে কোনো জেনারেশনই দেখতে পায়নি অথবা ভবিষ্যতে পাবেও না!

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখতে পেয়েছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজ হোয়াটস্যাপ চ্যাটিং, ই-মেইল পর্যন্তও করছি। অসম্ভব মনে হওয়া অনেক জিনিসই সম্ভব হতে দেখেছি।

আমরা সেই জেনারেশন, যারা টেলিগ্রাম এসেছে শুনলেই ঘরগোষ্ঠীর মুখ শুকিয়ে যেতে দেখেছি.. আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা মাটিতে বসে ভাত খেয়েছি এবং প্লেটে ঢেলে চা খেয়েছি। বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে ভিয়েন থেকে ক্যাটারিং দেখেছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে সেই পরম্পরাগত খেলা যেমন লুকোচুরি, কুমীরডাঙ্গা, ডাঙ্গুলি, কাবাডি, মার্বেল খেলেছি, আকাশের বুকে রং বেরঙের গুড়ি উড়িয়েছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা হ্যারিকেন আর বাল্বের হলুদ আলোতে পড়াশুনা করেছি এবং চাদরের ভিতরে লুকিয়ে আনন্দমেলা, শুকতারা, স্বপন কুমার পড়েছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা ফ্যান, এসি, হিটার, ফ্রীজ ছাড়াই ছোটবেলা কাটিয়েছি। আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা সুলেখা কালি আর খাগের কলম থেকে রাইটার্স, হিরো বা উইংসঙ পেন ব্যবহার করেছি এবং নতুন বই খাতার একটি আলাদা গন্ধ আর আনন্দ উপভোগ করেছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা শিক্ষকদের হাতে মার খেয়েছি এবং ঘরে আসার পর নালিশ করাতে দ্বিতীয়বার মা-বাবার হাতে মার খেয়েছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সম্মান করেছি এবং করেও যাচ্ছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা জোৎস্না রাতে রেডিওতে ইইঈ’র খবর, রেডিওতে আমির সিলোনের ‘বিনাকা গীতমালা’ , শনিবার এর বারবেলা ছাড়াও আরও কত কি শুনতাম।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা টেলিভিশন এ ‘চিত্র-হার’, ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’ সহ রাত জেগে খেলা দেখার জন্য ছাদে উঠে এ্যন্টেনা ঘুরিয়ে সিগন্যাল ধরার চেষ্টা করেছি ।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা আত্মীয় স্বজন বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করতাম।

আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা স্কুল থেকে ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফিরেছি, গরমে ঘন্টার পর ঘন্টা নদী পুকুরে সাঁতার কেটেছি, বর্ষায় মাছ শিকার করেছি..

আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা বিকেল বেলা বাবা সময়মত ঘরে না ফিরলে বার বার শাস্তি পেয়েছি…
আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা পুজোর সময় শুধু একটা নুতন জামার জন্য অপারগ বাবার হাতের দিকে চেয়ে থেকেছি.

আমরা সেই শেষ প্রজন্ম যারা রাস্তাঘাটে স্কুলের স্যারকে দেখামাত্র রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করে থেকেছি..

আমরা সেই শেষ প্রজন্ম যারা ঘরে মার খেয়ে স্কুলে গিয়েছি আর স্কুল থেকে মার খেয়ে ঘরে এসেছি..
আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা মা-বাবার কথা শুনতাম এবং এখন বাচ্চাদের কথা শুনে দিনপাত করছি।
আমাদের এই প্রজন্ম এই সংসারের আমূল পরিবর্তন দেখে নিয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

আমরাই শেষ জেনারেশন

আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১

ছবি সংগ্রহ

আমি এটা মনে করি যে এই পৃথিবীতে যত পরিবর্তন আমাদের এই জেনারেশন দেখতে পেয়েছে তা মনে হয় আগে কোনো জেনারেশনই দেখতে পায়নি অথবা ভবিষ্যতে পাবেও না!

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখতে পেয়েছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজ হোয়াটস্যাপ চ্যাটিং, ই-মেইল পর্যন্তও করছি। অসম্ভব মনে হওয়া অনেক জিনিসই সম্ভব হতে দেখেছি।

আমরা সেই জেনারেশন, যারা টেলিগ্রাম এসেছে শুনলেই ঘরগোষ্ঠীর মুখ শুকিয়ে যেতে দেখেছি.. আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা মাটিতে বসে ভাত খেয়েছি এবং প্লেটে ঢেলে চা খেয়েছি। বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে ভিয়েন থেকে ক্যাটারিং দেখেছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে সেই পরম্পরাগত খেলা যেমন লুকোচুরি, কুমীরডাঙ্গা, ডাঙ্গুলি, কাবাডি, মার্বেল খেলেছি, আকাশের বুকে রং বেরঙের গুড়ি উড়িয়েছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা হ্যারিকেন আর বাল্বের হলুদ আলোতে পড়াশুনা করেছি এবং চাদরের ভিতরে লুকিয়ে আনন্দমেলা, শুকতারা, স্বপন কুমার পড়েছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা ফ্যান, এসি, হিটার, ফ্রীজ ছাড়াই ছোটবেলা কাটিয়েছি। আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা সুলেখা কালি আর খাগের কলম থেকে রাইটার্স, হিরো বা উইংসঙ পেন ব্যবহার করেছি এবং নতুন বই খাতার একটি আলাদা গন্ধ আর আনন্দ উপভোগ করেছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা শিক্ষকদের হাতে মার খেয়েছি এবং ঘরে আসার পর নালিশ করাতে দ্বিতীয়বার মা-বাবার হাতে মার খেয়েছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সম্মান করেছি এবং করেও যাচ্ছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা জোৎস্না রাতে রেডিওতে ইইঈ’র খবর, রেডিওতে আমির সিলোনের ‘বিনাকা গীতমালা’ , শনিবার এর বারবেলা ছাড়াও আরও কত কি শুনতাম।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা টেলিভিশন এ ‘চিত্র-হার’, ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’ সহ রাত জেগে খেলা দেখার জন্য ছাদে উঠে এ্যন্টেনা ঘুরিয়ে সিগন্যাল ধরার চেষ্টা করেছি ।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা আত্মীয় স্বজন বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করতাম।

আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা স্কুল থেকে ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফিরেছি, গরমে ঘন্টার পর ঘন্টা নদী পুকুরে সাঁতার কেটেছি, বর্ষায় মাছ শিকার করেছি..

আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা বিকেল বেলা বাবা সময়মত ঘরে না ফিরলে বার বার শাস্তি পেয়েছি…
আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা পুজোর সময় শুধু একটা নুতন জামার জন্য অপারগ বাবার হাতের দিকে চেয়ে থেকেছি.

আমরা সেই শেষ প্রজন্ম যারা রাস্তাঘাটে স্কুলের স্যারকে দেখামাত্র রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করে থেকেছি..

আমরা সেই শেষ প্রজন্ম যারা ঘরে মার খেয়ে স্কুলে গিয়েছি আর স্কুল থেকে মার খেয়ে ঘরে এসেছি..
আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা মা-বাবার কথা শুনতাম এবং এখন বাচ্চাদের কথা শুনে দিনপাত করছি।
আমাদের এই প্রজন্ম এই সংসারের আমূল পরিবর্তন দেখে নিয়েছি।