জেসমিন প্রেমা, চেয়ারপারসন স্কাস
‘পরিবেশ হল বিশ্বকে রক্ষার ফুসফুস। অথচ দিবসের আয়োজনেই আমরা সীমাবদ্ধ থাকছি।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিজের ঘর থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে কাজ করা উচিৎ।
জলবায়ু সংকটে আমরা একটি অনিশ্চিত অবস্থানের দিকে এগুচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনে জীবন
যাপনের চেহারা পাল্টে যাবার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা’
জেসমিন প্রেমা
সাম্প্রতিক জলবায়ু সংকট শব্দটি বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। আমরাও এই স্লোগানে গলা মেলাই। কিন্তু আসলে কি বিষয়টি বুঝতে পারছি, কোন পরিণতির দিকে আমরা হাটছি! প্রশ্ন নয়, অনেকটা আশ্চর্য হয়ে ভাবছি জলবায়ু সংকট বা ক্লাইমেট চেঞ্চ’ যে ভাষাতেই বলি না কেন, আমরা যে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশকে সঙ্গী করে এগুচ্ছি তা নিশ্চিত। আমরা যদি সহজভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবি তাহলে দেখা যাবে, কোনও অঞ্চলে একটা লম্বা সময় ধরে আবহাওয়ার গড়-পড়তা ধরন বিরাজমান এবং চেনা পরিবেশটা পাল্টে যাচ্ছে। এটাই মূলত জলবায়ু পরিবর্তন। পৃথিবী উষ্ণায়নের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার পরিচিত আচরণ।
‘পরিবেশ’ হল বিশ্বকে রক্ষার ফুসফুস। অথচ দিবসের আয়োজনেই আমরা সীমাবদ্ধ থাকছি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিজের ঘর থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে কাজ করা উচিৎ। জলবায়ু সংকটে আমরা একটি অনিশ্চিত অবস্থানের দিকে এগুচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনে জীবন যাপনের চেহারা পাল্টে যাবার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতামত হচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিশুদ্ধ খাবার জলের সঙ্কটের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে সংকট দেখা দেবে। উপকূল এলাকায় এরই মধ্যে কৃষির উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে নানা রোগবালাইয়ের প্রদুর্ভাব। বিশেষ করে নারী স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে। উপকূল নয়, সকল স্থানেই পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালা প্রায় শুকিয়ে যায়। দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাবার বার্তা অনেক আগের।
জলবায়ু সংকটে পরিবেশ দূষণে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের পানি বেড়ে গিয়ে অনেক স্থান প্লাবিত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একারণে অনেক জায়গায় বসবাসের পরিবেশ হারাবে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূল এলাকার মানুষের বাস্তুচ্যূতির ঘটনা ঘটছে। রোগবালাই, অপুষ্টিসহ শিশুরা নানা জটিলতায় ভুগছে। অপর দিকে নগরজীবনে প্রতিনিয়ত দুর্বিষহ যানজট, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ বাড়ছে। জলাভূমি ও বনায়ন ধ্বংস করে রাতারাতি গড়ে ওঠছে নানা স্থাপনা। শ্বাস-প্রশ্বাসে মানব দেহে প্রবেশ করছে বিষাক্ত পদার্থ। ক্যান্সার কিডনি, হৃদরোগ ইত্যাদি নানা ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শব্দ ও বায়ুদূষণ মানুষের আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। সহন ক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি শব্দ দূষণ মানুষের শ্রবণশক্তির ক্ষতিগ্রস্ত করছে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন মানুষ। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণে শীর্ষে ঢাকার অবস্থান। আন্তর্জাতিক সংস্থার এমন রিপোর্টে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বায়ু ও শব্দ দূষণের ফলে নষ্ট হচ্ছে নারী-পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা।
‘জলবায়ু সংকটে পরিবেশ দূষণে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের পানি বেড়ে গিয়ে অনেক স্থান প্লাবিত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একারণে অনেক জায়গায় বসবাসের পরিবেশ হারাবে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূল এলাকার মানুষের বাস্তুচ্যূতির ঘটনা ঘটছে। রোগবালাই, অপুষ্টিসহ শিশুরা নানা জটিলতায় ভুগছে’
বিগত ২০২১ সালের একটি গবেণা অনুযায়ী পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারত এই চারটি দেশের শিশুরা জলবায়ু সংকটের প্রভাবে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু সংকটে গোটা বিশ্বের পরিবেশ দ্রুত অবনতি হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশেও কয়েক দশকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কিন্তু জনবিস্ফোরণ, বনাঞ্চল উজার, শিল্প ও পরিবহণ নিয়ন্ত্রণের অভাবে পরিস্থিত জটিল হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের তরফে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কারণেই মানব জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। পরিবেশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বায়ু থেকে খাদ্য ও পানী সরবরাহ করে পৃথিবীকে বসবাসের অনুকূল পরিবেশ দেয়। প্রকৃতি ও পরিবেশের কারণে মহাবিশ্ব সুচারুভাবে চলে। বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতি অনেক কিছু দেয়, কিন্তু বিনিময়ে মানুষ প্রকৃতিকে শোষণ করে চলেছে।
পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ব উষ্ণায়ন, সামুদ্রিক দূষণ এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো সামনে আনতে এবং মানুষকে সচেতন করতে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে থাকে। আগামী প্রজন্মকে বাসযোগ্য পরিবেশ উপহার দিতে দিবসের সংকল্প হোক ‘ঘর থেকে’। নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলে বিশুদ্ধ বাতাসের নিশ্চয়তা, গাছ কাটা বন্ধ করা, বেশি করে গাছের চারা রোপণ করে প্রকৃতির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এবং প্রকৃতির বড় শত্রু পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা।
লেখক : জেসমিন প্রেমা, চেয়ারপাসন: সামাজক কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) jesmininfo@gmail. Com