ঢাকা ০১:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Justice Shahabuddin : প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ, আমাকে সেবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২৫:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ মার্চ ২০২২ ১৮৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি সংগ্রহ

আমিনুল হক, ঢাকা

সময়টা তখন ১৯৯৪ সাল। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ (প্রয়াত)। আমি তখন দৈনিক সমাচার পত্রিকার চিফ রিপোর্টার। সামাজিক কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস পূর্বাভাস কেন্দ্র’ (বিডিএফসি) নামক একটি সামাজিক সংগঠন। বিভিন্নস্থানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাই এর কাজ। ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে ফরমসহ পাঠিয়ে দেওয়া হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে একজন ডাক্তার মাঠ পর্যায় থেকে আসা রোগীদের তাৎক্ষণিক যাবতীয় পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিলেন।

আমাদের সঙ্গে যুক্ত বারডেমের ডাক্তার আবু সাঈদ বললেন, হাইকোর্টের জাজদের ডায়াবেটিকস পরীক্ষার কাজটি করা সম্ভব হলে বিভিন্ন স্তরে ডায়াবেটিস’র একটা আনুপাতিক হার বের করা সম্ভব হতো। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রেজিষ্টারের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানতেই  ‘প্রধান বিচারপতি’ (চিফ সাহেব) বরাবর একটা পত্র দিতে বললেন। আমি ফিরে এসে তাৎক্ষণিক ডা. আবু সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা চিঠি লিখে ফের রেজিষ্টারের কাছে জমা দিয়ে আসলাম।

মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য বিডিএফসি’র সেবক দলে যুক্ত ছিলেন, সাংবাদিক জিয়াউর রহমান মধু, রিয়াজ আহমেদ, মর্তুজা হয়দার লিটন এবং দেব দুলাল মিত্র। তাছাড়া কাজ করতে গিয়ে আরও বেশ কয়েকজন বাইরে থেকে স্বেচ্ছাসেবী দলে যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তাদের একজন আমেরিকা প্রবাসী।

মাঠ পর্যায়ে কাজ করার আনুষাঙ্গিক জিনিষপত্রের যোগানও মিলতো বারডেম থেকেই। যার প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও তারই গড়া। মহান এই ব্যক্তির অনুপ্রেরণায় মানবসেবায় আসা। তাছাড়া ১৯৭২ সালে  বিনা চিকিৎসায় বাবাও মারা যান। যেকারণে মানুষের সেবায় নিজেকে সামান্যতম কাজে লাগাতে পারলে মনের হাহাকারটা কিছুটা কমে আসে। এই বিষয়টি মনের মধ্যেই চেপে রেখেছি এতোটা কাল।

স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত এবং ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর বর্তমান প্রসিডেন্ট প্রফেসর ডা. এ কে আজাদ খান কাজের শুরুতেই সহযোগিতার হাত বাড়ান। তিনি ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস পূর্বাভাস কেন্দ্র’ ও সুস্বস্থ্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাও।

পরদিন সকাল বেলা পুরানা পল্টনে দৈনিক সমাচার অফিসে পৌছানোর কিছুক্ষণ পরই হাই হাইকোর্ট থেকে কল আসে। আমাকে জানানো হয়, চিফ সাহেব দেখা করতে বলেছেন এবং সম্ভব হলে তখনই যেন  হাইকোর্টে আসি । আমি দেরি না করে দ্রুত হাইকোর্টে পৌছলাম। রেজিষ্টার সাহেবের ওখানে যেতেই আমাকে বসতে বলে তিনি ওঠে গেলেন। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে বললেন চলুন। আমি তার পেছনে হাটছি।

দোতলায় ওঠতেই বিশাল দরজা খুলে ধরেন দু’জন। ভেতরে প্রবেশ করলাম। বিশাল কক্ষ। ছাদ থেকে দেওয়াল পর্যন্ত পর্দা ঝুলছে। চারিদিকের দেওয়ালে বিচারপতিদের বাধানো ছবি শোভা পাচ্ছে। উচু উচু দেয়ারের সারি। সারাশব্দ নেই। রেজিষ্টার সাহেব বললেন, স্যার ওনি এসেছেন। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে আমার দিকে তাকালেন। তার সামনে আমার দেওয়া চিঠি। ফের চিঠিটা ভালো করে দেখে নিলেন।

তারপর বললেন, ভালো কাজ। তবে শুধু বিচারপতিদের পরীক্ষা করে দেবেন, আমার গরীব কর্মচারিদের পরীক্ষা করবেন না? এই কথা শোনার পর আমি কোন কথা বলতে পারছি না। দরদর করে দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ মুছে বললাম-স্যার সবার পরীক্ষা করে দেব। এরপর রেজিষ্টার সাহেবকে বললেন, সব মিলিয়ে কতজন লোক হবে আমাদের। প্রায় ৭০০ হবে স্যার, জানালেন রেজিষ্টার সাহেব।

এবারে আমার কাছে জানতে চাইলেন, তাদের পরীক্ষা করতে কতদিন লাগতে পারে? একটু সময় নিয়ে জানালাম ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫দিন। আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমরা কতজন কাজ করবো। বললাম স্যার, ৬-৮জন। রেজিষ্টার সাহেবের কাছে জানতে চাইলেন, কোথায় রুম খালি আছে। পোস্ট অফিসের পাশের কক্ষটি স্যার। ঠিক আছে ওনাদের তৈরি করে দিন। খেয়াল রাখবেন তাদের কাজের যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে। নোটিশ দিয়ে দিন। সে অনুযায়ী কাজ চলবে। এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, চা বিস্কুট আপনাদের দেওয়া হবে, কিন্তু ভাত খাওয়াতে পারবোনা। কারণ আমার এতো টাকা নেই।

চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাড়ালাম। তারপর নতশিরে সালাম জানিয়ে বেড়িয়ে এলাম। নিচে রেজিষ্টার সাহেবের রুমে বসে চা নাস্তা খেলাম। বললেন, স্যার আপনার এই কাজটিতে খুব খুশি। কারণ সাধারণ কর্মচারিরাও সেবা পাবেন। আমি দু’দিনের মধ্যে আপনাকে রুম ঠিক করে দিচ্ছি। হাইকোর্ট থেকে বেড়িয়ে সোজা চলে যাই বারডেমে। কথা বলি আবু সাঈদ সাহেবের সঙ্গে। তিনি খুব খুশি। বললেন আয়োজনটা বেশ ভালই হবে। আমি সব ঠিকঠাক করে নিচ্ছি। পরে খবরটি ডা. এ কে খান স্যারকেও জানাই।

দু’দিনের মাথায় রেজিষ্টার সাহেব ফোন করে জানান, রুম তৈরি। কাল থেকেই আপনারা কাজ শুরু করতে পারবেন। তথারীতি তাই হলো। চিফ স্যার তথা প্রধান বিচারপতি স্যার উদ্বোধন করলেন। আমরা কাজ শুরু করলাম। ১৫ দিনের আগেই প্রায় সাড়ে ছয়শ’র মতো কর্মচারিদের ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চতা এবং ওজন মাফাসহ কাজ সম্পন্ন। অনেকেরই ডায়াবেটিস শনাক্ত হলো।

তারপর বিচারপতি মহোদয়দের পরীক্ষার পালা। চিফ সাহেবের হাতে নিজেই মেশিন দিয়ে রক্ত নিলাম। তারপর বিচারপতি মোস্তফা কামাল সাহেবের। এরপর একে একে সবার। বিচারপতি মোস্তফা সাহেব আমাকে ‘হিউম্যান ইন্সুলিন’ ব্যবস্থা করে দিতে দায়িত্ব দিলেন। পরে তা সংগ্রহ করে তার মিন্টু রোডের বাসভবনে পৌছে দিয়েছি।

বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০-১৯ মার্চ ২০২২) একমাত্র ব্যক্তি যিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সাধারণ নির্বাচন শেষে ফের তার মূলপদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দু’বার দায়িত্বপালনকারী রাষ্ট্রপতি। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Justice Shahabuddin : প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ, আমাকে সেবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন

আপডেট সময় : ০৯:২৫:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ মার্চ ২০২২

ছবি সংগ্রহ

আমিনুল হক, ঢাকা

সময়টা তখন ১৯৯৪ সাল। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ (প্রয়াত)। আমি তখন দৈনিক সমাচার পত্রিকার চিফ রিপোর্টার। সামাজিক কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস পূর্বাভাস কেন্দ্র’ (বিডিএফসি) নামক একটি সামাজিক সংগঠন। বিভিন্নস্থানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাই এর কাজ। ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে ফরমসহ পাঠিয়ে দেওয়া হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে একজন ডাক্তার মাঠ পর্যায় থেকে আসা রোগীদের তাৎক্ষণিক যাবতীয় পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিলেন।

আমাদের সঙ্গে যুক্ত বারডেমের ডাক্তার আবু সাঈদ বললেন, হাইকোর্টের জাজদের ডায়াবেটিকস পরীক্ষার কাজটি করা সম্ভব হলে বিভিন্ন স্তরে ডায়াবেটিস’র একটা আনুপাতিক হার বের করা সম্ভব হতো। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রেজিষ্টারের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানতেই  ‘প্রধান বিচারপতি’ (চিফ সাহেব) বরাবর একটা পত্র দিতে বললেন। আমি ফিরে এসে তাৎক্ষণিক ডা. আবু সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা চিঠি লিখে ফের রেজিষ্টারের কাছে জমা দিয়ে আসলাম।

মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য বিডিএফসি’র সেবক দলে যুক্ত ছিলেন, সাংবাদিক জিয়াউর রহমান মধু, রিয়াজ আহমেদ, মর্তুজা হয়দার লিটন এবং দেব দুলাল মিত্র। তাছাড়া কাজ করতে গিয়ে আরও বেশ কয়েকজন বাইরে থেকে স্বেচ্ছাসেবী দলে যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তাদের একজন আমেরিকা প্রবাসী।

মাঠ পর্যায়ে কাজ করার আনুষাঙ্গিক জিনিষপত্রের যোগানও মিলতো বারডেম থেকেই। যার প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও তারই গড়া। মহান এই ব্যক্তির অনুপ্রেরণায় মানবসেবায় আসা। তাছাড়া ১৯৭২ সালে  বিনা চিকিৎসায় বাবাও মারা যান। যেকারণে মানুষের সেবায় নিজেকে সামান্যতম কাজে লাগাতে পারলে মনের হাহাকারটা কিছুটা কমে আসে। এই বিষয়টি মনের মধ্যেই চেপে রেখেছি এতোটা কাল।

স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত এবং ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর বর্তমান প্রসিডেন্ট প্রফেসর ডা. এ কে আজাদ খান কাজের শুরুতেই সহযোগিতার হাত বাড়ান। তিনি ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস পূর্বাভাস কেন্দ্র’ ও সুস্বস্থ্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাও।

পরদিন সকাল বেলা পুরানা পল্টনে দৈনিক সমাচার অফিসে পৌছানোর কিছুক্ষণ পরই হাই হাইকোর্ট থেকে কল আসে। আমাকে জানানো হয়, চিফ সাহেব দেখা করতে বলেছেন এবং সম্ভব হলে তখনই যেন  হাইকোর্টে আসি । আমি দেরি না করে দ্রুত হাইকোর্টে পৌছলাম। রেজিষ্টার সাহেবের ওখানে যেতেই আমাকে বসতে বলে তিনি ওঠে গেলেন। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে বললেন চলুন। আমি তার পেছনে হাটছি।

দোতলায় ওঠতেই বিশাল দরজা খুলে ধরেন দু’জন। ভেতরে প্রবেশ করলাম। বিশাল কক্ষ। ছাদ থেকে দেওয়াল পর্যন্ত পর্দা ঝুলছে। চারিদিকের দেওয়ালে বিচারপতিদের বাধানো ছবি শোভা পাচ্ছে। উচু উচু দেয়ারের সারি। সারাশব্দ নেই। রেজিষ্টার সাহেব বললেন, স্যার ওনি এসেছেন। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে আমার দিকে তাকালেন। তার সামনে আমার দেওয়া চিঠি। ফের চিঠিটা ভালো করে দেখে নিলেন।

তারপর বললেন, ভালো কাজ। তবে শুধু বিচারপতিদের পরীক্ষা করে দেবেন, আমার গরীব কর্মচারিদের পরীক্ষা করবেন না? এই কথা শোনার পর আমি কোন কথা বলতে পারছি না। দরদর করে দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ মুছে বললাম-স্যার সবার পরীক্ষা করে দেব। এরপর রেজিষ্টার সাহেবকে বললেন, সব মিলিয়ে কতজন লোক হবে আমাদের। প্রায় ৭০০ হবে স্যার, জানালেন রেজিষ্টার সাহেব।

এবারে আমার কাছে জানতে চাইলেন, তাদের পরীক্ষা করতে কতদিন লাগতে পারে? একটু সময় নিয়ে জানালাম ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫দিন। আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমরা কতজন কাজ করবো। বললাম স্যার, ৬-৮জন। রেজিষ্টার সাহেবের কাছে জানতে চাইলেন, কোথায় রুম খালি আছে। পোস্ট অফিসের পাশের কক্ষটি স্যার। ঠিক আছে ওনাদের তৈরি করে দিন। খেয়াল রাখবেন তাদের কাজের যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে। নোটিশ দিয়ে দিন। সে অনুযায়ী কাজ চলবে। এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, চা বিস্কুট আপনাদের দেওয়া হবে, কিন্তু ভাত খাওয়াতে পারবোনা। কারণ আমার এতো টাকা নেই।

চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাড়ালাম। তারপর নতশিরে সালাম জানিয়ে বেড়িয়ে এলাম। নিচে রেজিষ্টার সাহেবের রুমে বসে চা নাস্তা খেলাম। বললেন, স্যার আপনার এই কাজটিতে খুব খুশি। কারণ সাধারণ কর্মচারিরাও সেবা পাবেন। আমি দু’দিনের মধ্যে আপনাকে রুম ঠিক করে দিচ্ছি। হাইকোর্ট থেকে বেড়িয়ে সোজা চলে যাই বারডেমে। কথা বলি আবু সাঈদ সাহেবের সঙ্গে। তিনি খুব খুশি। বললেন আয়োজনটা বেশ ভালই হবে। আমি সব ঠিকঠাক করে নিচ্ছি। পরে খবরটি ডা. এ কে খান স্যারকেও জানাই।

দু’দিনের মাথায় রেজিষ্টার সাহেব ফোন করে জানান, রুম তৈরি। কাল থেকেই আপনারা কাজ শুরু করতে পারবেন। তথারীতি তাই হলো। চিফ স্যার তথা প্রধান বিচারপতি স্যার উদ্বোধন করলেন। আমরা কাজ শুরু করলাম। ১৫ দিনের আগেই প্রায় সাড়ে ছয়শ’র মতো কর্মচারিদের ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চতা এবং ওজন মাফাসহ কাজ সম্পন্ন। অনেকেরই ডায়াবেটিস শনাক্ত হলো।

তারপর বিচারপতি মহোদয়দের পরীক্ষার পালা। চিফ সাহেবের হাতে নিজেই মেশিন দিয়ে রক্ত নিলাম। তারপর বিচারপতি মোস্তফা কামাল সাহেবের। এরপর একে একে সবার। বিচারপতি মোস্তফা সাহেব আমাকে ‘হিউম্যান ইন্সুলিন’ ব্যবস্থা করে দিতে দায়িত্ব দিলেন। পরে তা সংগ্রহ করে তার মিন্টু রোডের বাসভবনে পৌছে দিয়েছি।

বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০-১৯ মার্চ ২০২২) একমাত্র ব্যক্তি যিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সাধারণ নির্বাচন শেষে ফের তার মূলপদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দু’বার দায়িত্বপালনকারী রাষ্ট্রপতি। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।