Bangabandhu : বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে

- আপডেট সময় : ০৮:৩৬:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০২২ ২৮৪ বার পড়া হয়েছে
জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান :ফাইল ছবি সংগ্রহ
অনিরুদ্ধ
ঢাকার ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক বত্রিশ নম্বর বাড়িটি এখন ‘বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল জাদুঘর’। এর সামনে লেক। তার তীরে বাংলাদেশের জাতির পিতার প্রতিকৃত। ঝিরঝিরে বাতাসে লেকের জলে ছোট ছোট ঢেউ। জলভেজা সেই বাতাস এসে আছড়ে পড়ছে জাতিরজনকের প্রতিকৃতিতে।
তাতে লেখা
‘যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীতি’ তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা রক্ত গঙ্গা বহমান
নাই নাই ভয় হবে হবে জয় জয় মুজিবুর রহমান’।

সম্প্রীতি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য হেলাল উদ্দিন, নির্মাতা সাইফ আহম্মেদ, কলামিস্ট তাপস হালদার, ডা. সুনান বিন ইসলাম, ডা. মো. মাসুদ আলম, সাবেক ছাত্র নেতা ধীমান রায়, শফিক রেন্জার, সাদেক আহম্মেদ সৈকত, রাজিব কর, লিমন ফয়সাল, মিশন চৌধুরী প্রমূখ অংশ নেন।
১৫ আগস্ট শোককাতর বাঙালি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে সর্বস্তরের মানুষের আগমন ও তাদের শ্লোগানে ঢাকার ধানমণ্ডির আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত। প্রধান সড়ক থেকে সাদা কাপড়ের আচ্ছাদন। মাথার উপরে সামিয়ানা। তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে মানব ঢল। মানবস্রোতের সঙ্গে ভেসে গিয়ে প্রতিকৃতের অদূরে দাড়ালাম। ডান পাশে দেখা গেলো শোককাতর এক নারী দাড়িয়ে। পড়নে তার শোকের প্রতীক কালো শাড়ি। তিনি একজন মা। কথা বলা যাবে? বলতেই মুখ তুলে তাকালেন, শান্ত গলায় বললেন-বলুন না–।
একের পর এক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেন করে চলেছে। স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকে তাদের পরিচিতি বলে যাচ্ছেন পালাক্রমে। কত মানুষ হবে? শ’, হাজার, না আরও অনেক বেশি। সহজভাবে বললে অগনন।
এক পাশে সরে গিয়ে তার বক্তব্য রেকর্ড করছি। তিনি একজন সমাজ চিন্তক। জীবনভর সংগ্রামী এক হার না মানা নারী সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারেন সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে। বললেন, এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন
সমাজের অবহেলিত মানুষদের নিয়ে তার কাজ। আমাদের সমাজ যতই এগিয়ে যাক কেন, তাকে রক্ষা করতে হবে। আজ যেমন শোকের মিছিলে আওয়াজ ওঠেছে, জাতির পিতার খুনিদের ফিরে এনে বিচারের রায় কার্য করার। তেমনি বহু মা আছেন ‘জাতিরজনককে’ হত্যার বিচার কার্যকরের পথ চেয়ে বসে আছেন। বিচার চাওয়ায় তো কোন লজ্জাবোধ নেই। করেন। বিচার হলে সমাজ আলোকিত পথের দিশা পাবে।
জাতির পিতার শাহাদৎ বার্ষিকীতে ‘কবিতায় কিভাবে একজন ‘গণনায়ক’কে সম্মান জানাতে হয়, ভালোবাসা দেখাতে হয়, তার প্রমাণ অন্নদা শঙ্কর রায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার থেকে জীবন রক্ষায় কাতারে কাতারে মানুষ বিভিন্ন সীমান্ত পথ অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। মানুষের সেকি করুন অবস্থা।
সময়টা একাত্তরের মাঝামাঝি। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবি, সবাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবরা খবর রাখছেন। নিত্যদিনের ঘটনাপঞ্জি নিয়ে নানান বিশ্লেষন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর সাফল্যের খবরে তারা আনন্দিত। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যর্থতার খবরে তারা উদ্বিগ্ন, চিন্তিত।
সেময় কলকাতার বুদ্ধিজীবি মহলে রটে গেল পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করবে। সব আয়োজন সম্পন্ন। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় প্রথম খবরটা পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়েরা গড়ের মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন। প্রতিবাদ মঞ্চে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ আসে অন্নদা বাবুর কাছে।
বাংলাদেশের প্রতি অন্নদা বাবুর ছিলো গভীর ভালোবাসা। আবেগী কবির জন্ম পূর্ববঙ্গে না হলেও, তার দুটি সন্তানের জন্ম এখানে। আর জীবনের দুটি ভাগ তিনি কাটান পূর্ববঙ্গে। সেকারণে গড়ের মাঠে যাওয়ার বাড়তি টান ছিল তার। গেলেন, কিন্তু এত ভিড় ছিল যে, তা ঠেলে ৭০ বছর বয়সের অন্নদা বাবুর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। অবশেষে বাড়ি ফিরে এসে অন্নদা শঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানাতে লিখে তার অমর কবিতাটি-
‘যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীতি’ তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’।
এসব ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। সেই ধারাবাহিকতায় আবেগের নৌকায় পাল তুলে আজও আমরা পথ চলছি। বাঙালির সবচেয়ে বড় সম্পদ তার আবেগ। এটাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। সব কিছুকে ভুলে পিতার অসম্পন্ন কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনা।
মা গম্ভীরভাবে তাকিয়ে জনস্রোতের দিকে। এরপর বললেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী। তাকে হত্যা করে বাংলার মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারেনি ঘাতকরা। তার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। বলেন, বাংলার সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই তাকে সঠিক সম্মান জানানো হবে।