আর্থসামাজিক উন্নয়নে নজির খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের
‘গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর একটি হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড। এক আউন্স পরিমাণ প্লাস্টিক বা পলিথিন প্রস্তুত করলে পাঁচ আউন্স কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুতে নির্গত হয়। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিবছর প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করা হয়। এক কেজি প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রায় দুই থেকে তিন কেজি পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। সুতরাং একটি প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করতে প্রায় তার তিন গুণ কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুতে প্রবেশ করে, যা গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার গ্যাসগুলোর অনুপাতে প্রভাব বিস্তার করছে’
বিশেষ প্রতিনিধি
সমুদ্রে প্লাষ্টিক, নদ-নদীতে প্লাষ্টিক, পুকুর-ডোবায় প্লাষ্টিক, ড্রেনে প্লাষ্টিক, রাস্তায় প্লাষ্টিক। জ্ঞাত-অজ্ঞাত যে ভাবেই হোকনা কেন, প্লাষ্টিক দূষণ ছাড়াচ্ছেন, তাদের এতকটা বড় অংশ শিক্ষিত, শিক্ষার্থী বা চাকুরে। শিক্ষিত হলেইতো আর চলবে না, তার মধ্যে থাকতে হবে চৈতন্য। আজ দেখতে পাচ্ছে না, অকাল বন্যা-খরা, দাবানল, বরফ ভেঙ্গে যাওয়া, শীত প্রধান দেশে প্রচণ্ড গরম। কোথাও বৃষ্টিহীনতা আবার কোথাও খরা পুড়ছে ফসল। কৃষিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। এ অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী খাদ্য যোগান ঝুঁকিতে পড়বে! বিশ্ব পরিবেশ দূষণের অধিকাংশটাই মানুষ্য সৃষ্টি। ভয়াবহ পরিণতির জন্য আমরা কি করবো?
কিছু কিছু প্লাস্টিক প্রাকৃতিকভাবে পচে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ৩০০ থেকে ৪০০ বছর লেগে যায়। আবার কিছু প্লাষ্টিক আছে প্রায় হাজার বছরও লেগে যায়। গবেষণায় প্রমাণিত, মুদি দোকানি পণ্যবহন যেসব ব্যাগ ব্যবহার করে, সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস ইত্যাদি কোমল জল বহনে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কাপ ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। ডায়াপার এবং প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পচে না।
গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর একটি হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড। এক আউন্স পরিমাণ প্লাস্টিক বা পলিথিন প্রস্তুত করলে পাঁচ আউন্স কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুতে নির্গত হয়। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিবছর প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করা হয়। এক কেজি প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রায় দুই থেকে তিন কেজি পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। সুতরাং একটি প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করতে প্রায় তার তিন গুণ কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুতে প্রবেশ করে, যা গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার গ্যাসগুলোর অনুপাতে প্রভাব বিস্তার করছে।
গবেষণায় বলছে, ট্যাপের চেয়ে বোতলের জল বেশি দাম হলেও তা ভোক্তাদের জন্য কম স্বাস্থ্যকর। নিত্যনতুন গবেষণায় বেরিয়ে আসছে, প্লাস্টিক বোতলের জল কোনোমতেই নিরাপদ ট্যাপের জলের চেয়ে স্বাস্থ্যকর নয়, বরং ক্ষতির পরিমাণ বেশি। কারণ যেসব উপাদান দিয়ে প্লাস্টিক বোতল তৈরি হয়, তা জলে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে দেয়, যা কিনা পানকারীর স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
নিত্যদিনের কাজকর্মে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাত্র হলো প্লাস্টিকের বোতল। তবে এই প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য অভিশাপস্বরূপ। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে বাঁশ দিয়ে বানানো জলের বোতল তৈরি করেছে ত্রিপুরা রাজ্যের বাঁশ শিল্পীরা। জরিপে দেখা গিয়েছে প্রতিবছর গোটা বিশ্বে প্রায় তিনশ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়। যার প্রায় অর্ধেকই একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে।
ত্রিপুরার বেতের তৈরি সোফাসেট
উৎপাদিত মোট প্লাস্টিকের প্রায় আট মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রের জলে যাচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণের এই ভয়াবহ দিকটির কথা চিন্তা করে ভারত সরকার প্লাস্টিক ফ্রি ইন্ডিয়া মিশন হাতে নিয়েছে। উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো। বিশেষ করে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল যাতে দুইবার ব্যবহার না হয়। এক্ষেত্রে ত্রিপুরা রাজ্যের শিল্পীদের বানানো বাঁশের বোতল একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। খাদি বোর্ড অব ইন্ডিয়া এই বোতল ভারতজুড়ে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সহযোগিদের নিয়ে বৈঠক করছেন রাজ্য খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য
ত্রিপুরা রাজ্য খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য জানান, সম্প্রতি খাদি বোর্ড অব ইন্ডিয়া চেয়ারম্যান বিনয় কুমার সাক্সেনা দুইবার রাজ্য সফর করেছেন। তিনি ত্রিপুরার বাঁশ শিল্পীদের হাতে বাঁশের বোতল দেখে খুব খুশি। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে এই বোতল ভারতজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। পরে তিনি দিল্লিতে ফিরে গিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদকে চিঠি পাঠিয়ে প্রাথমিকভাবে ত্রিপুরা থেকে দুই হাজার বাঁশের বোতল নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্ডার দেন। এ কাজে আরও বাঁশ শিল্পীদের যুক্ত করতে ‘ত্রিপুরা রাজ্য খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ’ প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছে।