চিলাহাটি স্টেশনে ভারতের এক আধিকারীক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন : ছবি রুহানা ইসলাম ইভা
নিয়মিত পণ্যট্রেন চলাচল শুরু পহেলা আগস্ট
৫৫ বছর পর খুললো বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য দুয়ার। নিয়মিত পণ্যট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে পহেলা আগস্ট থেকেই। উত্তর বাণিজ্য সম্ভবনাময়। এখন থেকে কোন পণ্যবাহী ট্রেনের ১৫০ কিলোমিটা পথ সাশ্রয় হবে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথটি বন্ধ হয়ে যায় ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর। ৫৫ বছর পর যা চালু হলো শেখ হাসিনার হাত ধরে।
বাংলাদেশ রেলভবনের একজন আধিকারীক জানান, বিরল-রাধিকাপুর দিয়ে কোন পণ্যবাহী ট্রেনের ২১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হতো। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ চালুর মধ্য দিয়ে মাত্র ৬০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হবে। আধিকারীক আরও জানান, আমরা ট্রেন চলাচলের ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছি।
এ পথে পণ্যপরিবহনে ১৫০ কিলোমিটার পথ সাশ্রয় হবে। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর চিলাহাটি থেকে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করেছে। চলতি বছরে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনেতিক সম্পর্কের ৫০ বছর আনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ঐতিহাসিক চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে যাত্রী ট্রেনের উদ্বোধন করেন।
কিন্তু কভিডের বেলাগাম পরিস্থিতিতে যাত্রী ট্রেনের চাকা থামিয়ে রেখেছে। অনুকুল পরিবেশ আসলেই দু’দেশের পতাকা উড়িয়ে চলাচল শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে বাধা নেই পণ্যবাহী ট্রেন
চলাচলে। ৫৫ বছর পর ফের হুইসেল বাজিয়ে ১ আগস্ট ৩০ ওয়াগন পন্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে ভারতীয় ট্রেন। আর এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নিয়মিত পণ্যট্রেন চলাচলের পথ উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে।
সাগরে লঘুচাপ। সারাদেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিও হচ্ছে থেমে থেমে। কিন্তু ব্যতিক্রম সীমান্তবর্তী উত্তরজনপদ চিলাহাটি। এখানে আকাশের মুখে হাসি।
লার্ণিং রানে ভারতের রেলউঞ্জিন
বৃহস্পতিবার ঘড়ি কাঁটা বাংলাদেশ সময় সোয়া ১১টা। কানে ভেসে আসলো উচ্চশব্দের হুইসেল। ধীরে ধীরে খুলে গেল ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত রেলগেইট। সাত মাস পর ফের ট্রেনের চাকা
গড়ালো চিলাহাটির পথে। ধীর লয়ে চিলাহাটি আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের দিকে এগিয়ে আসছে ভারতীয় রেলের দু’টো উঞ্জিন। তাতে চালক ছাড়াও দুধ সাদা পোশাকে রয়েছেন একাধিক গার্ড।
১ আগস্ট ৩০ ওয়াগন পণ্যট্রেন বাংলাদেশে আসছে, চালক ও গার্ডদের জন্য তারই প্রাক ট্রায়াল হয়ে গেলো বৃহস্পতিবার। গম এবং পাথর নিয়ে ভারতীয় পণ্যট্রেনটির গন্তব্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন। তবে পথে সৈয়দপুর ও পার্বতীপুরও পণ্যখালাসের সম্ভবনা রয়েছে।
প্রশস্ত রেলরাইনে দাঁড়িয়ে দেখা গেল ভারতের হলদিবাড়ি রেলস্টেশন থেকে ২টি পাওয়ার ইঞ্জিন ১২জন রেল কর্মকর্তাদের নিয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলস্টেশন অভিমুখে পূর্বনির্ধারিত লার্ণিং রাণ শুরু করে এবং সাড়ে ১২টা নাগাদ চিলাহাটি রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়।
চিলাহাটি স্টেশন মাষ্টার আশরাফুল ইসলাম, পি ডাবলু সুলতান মৃধা, ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান, চিলাহাটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম, চিলাহাটি বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার খোদাবকস, সিআই পার্বতীপুর রফিকুল ইসলাম, সৈয়দপুর
জিআরপি থানার এসআই শাহাজাহান, চিলাহাটি আরএনবি ইউনিটের হাবিলদার সেলিম হোসেন তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
ট্রায়ালে আসা ভারতীয় রেল কর্মকর্তা এসআর গুডস্ গার্ড নির্মল গোরামি, নরদ পোদ্দার, বিনোদ কুমার, মুকেশ কুমার সিং, এলপি বিবেকানন্দ চৌধুরী, মনোজিৎ পাল চৌধুরী, রাবিশ পাটেল, রাকেশ কুমার, এএলপি অরিজিৎ রায়, ঋতু রাজ, অর্ক দাস ও গৌরভ কুমার তারা প্রথমেই
চিলাহাটি রেলস্টেশনের বাংলাদেশের রেলওয়ে আদিকারীক, স্টেশন মাস্টারসহ উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এসময় ভারতীয় রেল কর্মকর্তারা চিলাহাটি রেলস্টেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এলপি বিবেকানন্দ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আগস্টের ১ তারিখ থেকে এই পথ দিয়ে ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
রেওয়াজ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যট্রেন যাত্রার আগে এমনি লাণিং ট্রয়ালের নিয়ম রয়েছে। মূলত ট্রেন নিয়ে যারা আসবেন, তাদের রেলপথটি দেখার জন্যই এই নিয়ম চালু রয়েছে।
তিনি চিলাহাটি রেলস্টেশনের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করে আগামিতে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে বলে মন্তব্য করেন। এরপর আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা দুটোর দিকে হলদিবাড়ির উদ্দেশ্যে চিলাহাটি ত্যাগ করে ভারতীয় রেল ইঞ্জিন। এসময় এলাকাবাসী হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর চিলাহাটি স্টেশন থেকে ভারতীয় ৩৩টি খালি ওয়াগান নিয়ে বাংলাদেশের একটি ইঞ্জিন ভারতের হলদিবাড়ী রেলস্টেশনে পৌছে দেয়ার মধ্য দিয়ে সম্ভাবনাময় এই রেলপথটি চালু হয়। ভারত ছাড়াও ভুটান ও নেপাল থেকে এই পথে বাংলাদেশে নানা পণ্য আসবে।