৫০ বছরে আরও একটি প্রত্যাশিত অর্জন

- আপডেট সময় : ০৯:৩২:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ জুন ২০২১ ২৯৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : ছবি সংগৃহিত
আত্মগোপনে থাকা বঙ্গবন্ধুর চার হত্যাকারীর মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন হাসিনা সরকার। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনের বিচারে ফাঁসির আদেশের পর তা কার্যকর হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দেশের বাইরে আত্মগোপনে রয়েছেন ৫জন। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ২০২১ সালকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী হিসেবে পালনের পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই আয়োজন ছিলো অভূতপূর্ব। বিশ্বনেতাদের অনেকেই তাদের পাঠানো বাণীতে বঙ্গবন্ধুর এবং শেখ হাসিনা সরকারের হাত ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণার নেতা উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতার মাত্র পঞ্চম বছরে নানা চড়াউ-উৎড়াই পেরিয়ে বর্তমান সরকারের ‘উন্নয়নের মাইল ফলক বলে উচ্চারণ’ করতেও ভুল করেননি বিশ্বনেতারা। এতে করে বাংলাদেশের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। হয়তো দেশটির মানুষ জানছেনই না, বাংলাদেশের মর্যাদা আজ কতটা উচ্চতায়। বিশ্বের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একটা মজবুত অবস্থানে চলে গিয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, কানেক্টিভিটি, রপ্তানি, শিল্প, ওষুধ রপ্তানি, জাহাজ শিল্প, কারিগরি শিক্ষা ছাড়াও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন। ১৯৭১ সালে যদি বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকানো হয়, তবে তা যে একটা জাতির কতটা দুর্দশা ও শোষন-বঞ্চনার ছিলো, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
বঙ্গবন্ধুর চার হত্যাকারী শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী : ছবি সংগৃহিত
পিআইবি মহাপরিচালক (ডিজি) জাফর ওয়াজেদ
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ(পিআইবি) মহাপরিচালক (ডিজি) জাফর ওয়াজেদের ভাষায়, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি শোষণের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাগিয়ে তোলেন নিপীড়িত-বঞ্চিত বাঙালি জাতিকে। একটি জাতিকে কিভাবে শোষণের শিকল ভেঙ্গে মুক্ত করতে হয়, আমাদের সেই পথ দেখিয়েছেন বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু। ভাষা এবং স্বাধীনতা দুটোই অর্জিত হয়েছে রক্তের বিনিময়ে। বঙ্গবন্ধুর আলোর পথ দেখানো আত্মত্যাগ গোটা বিশ্বে আজ স্বীকৃত।
তার প্রকাশ্যে প্রতিবাদী আন্দোলনের জন্যে কারাগারে যেতে হয়েছে বহুবার। জাফর ওয়াজেদ বলছিলেন, বঙ্গবন্ধু না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না, আর স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত না হলে বাঙালিজাতি বিশ্বে মর্যাদার আসন পেতো না। তিনি বলছিলেন, হিসেব-নিকেশ করেই দেখুন না, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কি পেলেন? একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। রাস্তাঘাট, কলকারখানা, অর্থনীতি, খাদ্য-বাসস্থান সব দিক হারানোর পরও মাথা উচু করে দেশ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতিকে দু’বাহু বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আমি তোমাদেরই ভাই। আসো, আমরা আমাদের এই স্বাধীন দেশটিকে সোনার বাংলায় রূপ দেই। পরবর্তীতে বাংলার স্থপতি গণনায়ককে সপরিবারে নির্মম হত্যার শিকার হতে হয়।
খেতাব বাতিলের প্রজ্ঞাপন
তারপর কেটে গোলো অনেকগুলো বছর। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারতো দূরের কথা বরং পরবর্তী সরকারগুলো হত্যারীদের বিভিন্ন দেশে নিয়োগ দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে! শুধু তাই নয়, বেচে যাওয়া দু’বোন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা তখন নির্বাসনে। হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করে দেওয়া হলো আইন করে। এটাও কি সম্ভব, বলুন?
স্মৃতির গলিপথে হারিয়ে গেলেন জাফর ওয়াজেদ। পরিচিত একজন সজ্জন মানুষ তিনি। তখন তার দেহে কিছুটা কাঁপছিলো। কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছিলেন এই গবেষক।
অবশেষে যা জানালেন, তা হলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছে পিতার পথ ধরে ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবার আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। সুফল পেলেন একুশ বছর পর। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি ধীরে ধীরে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার কাজে হাত লাগালেন। বিচার হলো বাংলাদেশের জাতির পিতার হত্যাকারীদের। কিন্তু এখনও বাকী ৫জন, যারা বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। এবারে তাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন খেতাব বাতিলের মধ্য দিয়ে পঞ্চাশ বছর পর আরও একটি প্রাপ্তি যোগ করলো বর্তমান সরকার।
বাংলাদেশে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) রয়েছে। সেই কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের আলোকে বঙ্গবন্ধুর পলাতক চার হত্যাকারী শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন খান, এ এম রাশেদ চৌধুরী ও এসএইচএমএইচএমবি নূর চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রক আত্মগোপনে থাকা চার হত্যাকারীর খেতাব বাতিলের প্রজ্ঞাপনটি জারি করেছে রবিবার।
যতদূর জানা যায়, নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম, শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, রাশেদ চৌধুরী ‘বীর প্রতীক’ এবং মোসলেহ উদ্দিন খান ‘বীর প্রতীক’ খেতাবধারী ছিলেন। খেতাব বাতিল হওয়ায় তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
অবশ্য বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত চার হত্যাকারীর খেতাব স্থগিতে দেশটির উচ্চআদালত হাইকোর্ট একটি আদেশ দিয়েছিলেন গতবছরের শেষ নাগাদ। এরপর গেল ফেব্রুয়ারিতে জামুকা’র বৈঠকে চারজনের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকে পাঠানো হয়।
‘সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের’ কারণে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ‘বীর উত্তম’ খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জামুকার সেই বৈঠকে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলেননি মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। যদিও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা শাষক দলের নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাত্র দশ দিনের মাথায় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান জিয়াউর রহমান। হত্যার সঙ্গে ‘পুরোপুরি’ জড়িত থাকার কথা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ দেশ পরিচালনায় অধিষ্ঠিত হন। এর পর ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার হত্যাকারীর বিচারের পথ খোলে। পরবর্তীতে বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালতের চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী ৬ হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন আরও পাঁচজন।