৫০ বছরেও গেজেটে ঠাঁই হয়নি অনেক বীরাঙ্গনার
- আপডেট সময় : ১২:০৫:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১ ২৫০ বার পড়া হয়েছে
প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা ও চিকিৎসা করেছেন। পথেপ্রান্তরে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। আর ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়ে দুঃসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন আজও। তাদের কর্মকাণ্ড যোদ্ধার মতোই মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও সার্থক করেছে। কিন্তু তাদের অবদান স্বীকৃত হয়েছে কতটুকু? গেজেটের বাইরে আছেন বেশির ভাগ বীরাঙ্গনা। যোদ্ধা নারীদের আলাদা কোনো গেজেটও নেই।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রতিনিধি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে গোবরা ক্যাম্প পরিচালনা করেন। ক্যাম্পের ৩০০ তরুণীকে ‘বিএলএফ’ অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে শিরিন বানু মিতিল, আলেয়া বেগম পুরুষের পোশাক পরে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেন।
তৎকালীন মহিলা পরিষদের সভাপতি বেগম সুফিয়া কামাল নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য অনেক কাজ করেন। তার দুই মেয়ে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও সাইদা কামাল সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্র বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটা ইতিবাচক। তাদের অবদান কেউ এখন সরাসরি অস্বীকার করার ঔদ্ধত্য দেখাবে বলে মনে করি না। অনেক পরিবার তাদের এই পরিচয় নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে, অথচ মানুষটাকে তার যথাযথ স্থান দেয়নি এমন দৃষ্টান্তও আছে। দীর্ঘ সময় তাদের অবহেলা ও লাঞ্ছনার মধ্যে কাটাতে হয়েছে, যার কোনো প্রতিকার হয় না।’
প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি এসেছে অনেক পরে। এখনো মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের কথা বলা হয়। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান স্বীকৃতি পায়নি। এখন কিছুটা আলোচনায় এসেছে। কিন্তু মুখে মুখে, বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোথাও লিখিত হয়নি। বীরাঙ্গনাকে এখন বলা হয় যৌন নির্যাতনের শিকার নারী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই তাদের বীর উপাধি দিয়ে বীর যোদ্ধাদের পাশে ‘বীরাঙ্গনা’ করেছিলেন। তিন জন নারী বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন। তারা হলেন—ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম, তারামন বিবি ও কাঁকন বিবি। কিন্তু তারা কেউ মুক্তিযুদ্ধে তাদের ও নারীর অবদানের জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিলেন না বলে জানান ২০১১ সাল থেকে নারী মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘চেষ্টা’র সভাপতি সেলিনা বেগম। প্রবাসী বীরপ্রতীক সেতারা বেগম এ বিষয় আজও আক্ষেপ করেন।
সেলিনা বেগম বলেন, ‘এযাবৎ আমরা ৯০ জন বীরাঙ্গনাকে সম্মাননা প্রদান করি। আরো ১৫ জনের তালিকা আমাদের হাতে আছে।’ বীরাঙ্গনার সংখ্যা ২ লাখ বলা হলেও মুনতাসীর মামুনের ‘বীরাঙ্গনা-১৯৭১’ শীর্ষক গবেষণায় ৬ লাখ এবং সে সময় কাজ করা চিকিৎসক ডা. জিওফ্রেডেভিস এবং সুজান ব্রাউনমিলারও-এর মতে এই সংখ্যা ৪ লাখ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বীরাঙ্গনাদের নিয়ে গবেষণা করে।
জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলী ইত্তেফাককে বলেন, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর আগে কেউ বিষয়টি নিজে থেকে জানাননি। পরে অনেকে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেছেন। বীরাঙ্গনাদের সঠিক তথ্য ও মর্যাদা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্র ও নারী আন্দোলনের ছিল বলে উল্লেখ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা ফৌজিয়া মোসলেম।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ ইত্তেফাককে বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে তারা বীরাঙ্গনাদের গেজেটের আওতায় আনেন। তারা সবাই ১২ হাজার টাকা করে ভাতা পান।
আগামী জুলাই মাস থেকে ভাতা ২০ হাজার টাকা করা হবে। মন্ত্রণালয় ৫০ বছর উপলক্ষ্যে গেজেটভুক্ত বীর নারীদের সম্মাননা দেবে। আর প্রত্যেককে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।