স্বপ্ন বসত করে যেখানে : স্নেহা, বিশাল, তুলিকারা ‘মানুষের জীবনে দীপ জ্বালাতে চায়’
- আপডেট সময় : ১০:৩৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১২৭ বার পড়া হয়েছে
আগরতলার সেরা নাসিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘নর্থ ইস্ট ইনস্টিটিউট অব নাসিং সায়েন্স’।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার।
ভবনে রয়েছে অগ্নিনির্বাপকের সুব্যবস্থা। খোলামেলা পাঠদান কক্ষ ছাড়াও স্টাডির ব্যবস্থা।
লাইব্রেরী থেকে শুরু শিক্ষার সবরকমের অগ্রাধিকার ব্যবস্থা
অনিরুদ্ধ
স্নেহা রায়, বিশাল চক্রবর্তী, তুলিকা দাশের চোখে মুখে মানবসেবার স্বপ্ন। তারা সবাই একবুক আশা নিয়ে মানুষের সেবায় নিবেদীত হতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছে। এই স্বপ্নের ঠিকানা ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার উপকণ্ঠে আসাম মহাসড়কের পাশে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতেও পরিবেশ উগ্রতা কমেনি বরং রোদের তাপ বেড়েছে। মৌসুমের শেষ গরমে ওষ্ঠাগত সবাই। আগরতলা উড়াল পথ পেরিয়ে কিছুটা পথ এগুতেই বামে মোড় নিয়ে গাড়ির গতি বাড়ল। বিশাল সড়ক তথা মহাসড়ক। জানা গেল এটি আসাম
মহাসড়ক হিসাবে পরিচিত।
কিছু দূর যেতেই ডান পাশে দুটো মুখোমুখি ভবনের সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো। জায়গাটি আমতলী থানার আর্ন্তগত। চারিদিক নান্দনিক পরিবেশ। এমন সবুজ বেষ্টনির মধ্যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পা রাখতেই মনটা ভরে গেলো। মনে মনে উদ্যোকক্তাদের রুচির প্রশংসা করলাম। অর্থ থাকলেও সমাজে অনুকরণীয় কিছু করা সম্ভব হয় না। যদি না একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের সমাজ ভাবনা না থাকে।
সদর গেইট পেরিয়ে ভেতর প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে নবনির্মিত হোস্টেলের সামনে বেশ কিছু শ্রমিকের ব্যস্ততা। নিচ তলায় বিশাল কমন রুম। ডানে-বামে অন্যান্য ব্যবস্থা। দোতলায় ওঠার চওড়া সিঁড়ি। তা দিয়ে অনায়াসে হেটে ওঠা যায়। দোতলার ডান পাশে লম্বা কড়িডোর। দু’পাশে সাজানো রুম। তাতে চমৎকার খাটপাতা। শেষ প্রাশ্নে গোসলখানা, বাশরুমসহ সকল ব্যবস্থা। এই হোস্টেলে ১২০ শিক্ষার্থীর স্বচ্ছন্দময় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ।
এখানে অনেকের সঙ্গে কথা হলো। তারা কেউ আসছে সোনামুড়া, বিলোনিয়াসহ ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থান থেকে। সকল ধর্মের সমন্বয়ে গড়া ওঠার নাম ভ্রাতৃত্ববোধ। এখানে তা লক্ষ্য করা গেল। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মনে করে ধর্ম নয়, আমরা মানুষের সেবায় নিজেদের নিবেদীত করবো
বলেই এখানে পড়তে এসেছি। তাদের কথা শুনে যে কেউ নিজেকে উপলব্ধ করতে পারবে।
আগরতলার সেরা নাসিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘নর্থ ইস্ট ইনস্টিটিউট অব নাসিং সায়েন্স’। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার। ভবনে রয়েছে অগ্নিনির্বাপকের সুব্যবস্থা। খোলামেলা পাঠদান কক্ষ ছাড়াও স্টাডির ব্যবস্থা। লাইব্রেরী থেকে শুরু শিক্ষার সবরকমের অগ্রাধিকার ব্যবস্থা।
আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। যিনি ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। ছিলেন একজন লেখিকা এবং পরিসংখ্যানবিদ। দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প নামে পরিচিত ছিলেন এই মহিয়ষী নারী। তিনি ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট প্রয়াত হন।
‘নর্থ ইস্ট ইনস্টিটিউট অব নাসিং সায়েন্স’-এর পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীরা খুশি।
পশ্চিম পাশে অ্যাকাডেমী ভবন। হোস্টেল এবং অ্যাকাডেমিক ভবন মুখোমুখি আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
মাঝখানে বিশাল খোলা চত্বর। অনেকটা মিনি স্টেডিয়ামের মতো। এখানে শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা করা ছাড়াও বিভিন্ন
আয়োজনের উপযুক্ত স্থান। এমন ভাবনা থেকেই কতৃপক্ষের এই উদারতা।
অ্যাকাডেমী ভবনে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সুপরিসর ক্লাশ রুম। দোতলায় ওঠেও একই রকমের দৃশ্য।
যতটাই সময় পার করছি, পাঠদানের পরিবেশ দেখে ততটাই মুগ্ধ হচ্ছি। এখানের সাজানো গোছানো
কম্পিউটার ল্যাব, প্রিন্সিপাল এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা।
উদ্যোক্তা
বালাজি এডুকেশনাল ট্রাস্ট। ‘নর্থ ইস্ট ইনস্টিটিউট অব নাসিং সায়েন্স’ এর চেয়াম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন,
আগলতলার সুচিকিৎসক ও সমাজচিন্তক ডা. পার্থপ্রতিম সাহা এবং প্রধান নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব
পালন করছেন সুব্রত সোম।
মি. সোম জানালেন, মাধ্যমিক পাসের পর এএনএম-এ ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তারপর জিএনএম এবং
বিএসসি নাসিং । এখানে ১৫জন শিক্ষক রয়েছেন। সোমবাবু জানালেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য
সুব্যবস্থা রয়েছে। ত্রিপুরা-বাংলাদেশ পাজরঘেষা দেশ। অবস্থার প্রেক্ষিতে দুই হলেও বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার
সাংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য, কৃষ্টি এক।
ভ্রাতৃপ্রতীম দুই দেশের মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশি ভাইবোনদের আধুনিক নাসিং
পেশার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ
আগামী এই স্লোগানকে সামনে রেখে ‘নর্থ ইস্ট ইনস্টিটিউট অব নাসিং সায়েন্স’ দু’বাহু বাড়িয়ে
আহ্বান করছে, ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু, পা বাড়ালেই পথ’।