শীতকালীন রোগব্যাধি থেকে নিজেকে রক্ষায় উপায়
- আপডেট সময় : ১০:৫৮:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭২ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
ছয় ঋতুর মধ্যে শীতকাল পঞ্চম ঋতু। এটি গ্রীষ্মের বিপরীতে বছরের ঠান্ডা অংশ। শরতের শেষের দিকে শুরু হয় এবং পৌষ ও মাঘ দুই বাংলা মাসে ছড়িয়ে পড়ে। এক কথায় শীতকাল সবচেয়ে ভালো এবং উপভোগ্য ঋতু। শরতের শেষের দিকে শীত আসে। এটি সবচেয়ে ঠান্ডা ঋতু। এটি নভেম্বরে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
এসময় সবকিছু জরাজীর্ণ মনে হয়। রাতে শিশির ফোঁটা পড়ে। সকালের সূর্য যখন কুয়াশা ভেদ করে উঁকি দেয়, তখন ঘাসের উপর মুক্তার চকচকে পুঁতির মতো দেখায়। আকাশ মেঘহীন এবং নীল থাকে। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যায়।
ঘন কুয়াশার কারণে সবকিছু ধূসর দেখায়। শীতকালে আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর থাকে। দীর্ঘ শীতের রাতে ভারী চাদরের নিচে একটি সুন্দর ঘুম খুব উপভোগ্য। আকাশ প্রায়শই মেঘহীন থাকে এবং সূর্যের রশ্মি খুব হালকা হয়ে যায়। ঘাসের উপর পড়ে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো সকালের সূর্যের রশ্মি তাদের গায়ে পড়লে মুক্তোর মতো ঝলমলে দেখায়।
শীত মৌসুম
শীত মৌসুমে ঢাকায় শীত ততটা অনুভূত না হলেও, গ্রামীণ জনপদে বেশ ঠান্ডা।
গরমের তুলনায় শীত আরামদায়ক হলেও প্রতিবছর এ সময়ে বেশ কিছু বাড়তি রোগব্যাধি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য সময়টা বেশ জটিলতা সৃষ্টি করে।
যেসব রোগব্যাধি হতে পারে
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ, শীতের সময়টায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলোই বেশি দেখা যায়। যেমন কাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, সাময়িক জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি, বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা যায়।
শিশু ও বয়স্ক মানুষদের কাশি, কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক সময়ে সনাক্ত করা না গেলে সেটা অনেক সময় নিউমোনিয়াতেও রূপ নিতে পারে। ঠাণ্ডার কারণে অনেকের টনসিল বেড়ে গিয়ে ব্যথার হতে পারে।
ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও ডেঙ্গু
শীতকালে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগ সহ নানা ভাইরাস জ্বরের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এ সময় অনেক স্থানে মশার প্রকোপও বাড়ে। ডেঙ্গু বর্ষাকালীন রোগ হলেও এখন শীতকালেও এটির বিস্তার দেখা যায়। তাই এই বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কুসুম গরম পানির ব্যবহার
শীত শুরু হওয়ার সময় আবহাওয়ার যে পরিবর্তন ঘটে, তাতে অনেকে শরীর চট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই অনেকের জ্বর হয়ে থাকে। এসময়টাতে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোছল বা হাতমুখ ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
পাতলা পায়খানা
হঠাৎ করে ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের, অনেক সময় বড়দেরও পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। বিশেষ করে যখন বেশি ঠাণ্ডা পড়ে, তখন বয়স্কদেরও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে বাইরের খাবার একেবারে না খাওয়া, খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া, বয়স্ক ও শিশুদের গরম কাপড়ের পাশাপাশি সবসময় হাতমোজা ও মোজা পরে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
চামড়ার শুষ্ক হয়ে ওঠা
শীতের সময় শুষ্কতার কারণে শরীরের ত্বকও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে অনেক সময় চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। অনেক সময় অ্যালার্জির কারণেও এটি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জি হয়।
চামড়া স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিতভাবে লোশন বা অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ধুলাবালি থেকে সতর্কতা
শীতের সময় বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে যায়। বড় বড় শহরে বাতাসে নানা ধরণের ধাতুর পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়, যা কিনা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তা থেকে বাঁচতে বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের এরকম চুলকানি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হলে চুলকানি বা অ্যালার্জি ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে না। ত্বকের বিশেষ সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা উচিত, তিনি বলছেন।
ডায়াবেটিক ও ক্রনিক রোগে আক্রান্তরা
যাদের ডায়াবেটিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, শীত তাদের জন্য বিশেষ সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ এই সময়ে তাদের জটিলতা আরো বেশি করে দেয়া যায়। অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রার মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে। এজন্য এই রোগীদের এই সময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন মিজ জান্নাত। তাহলে সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসক তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।
যা এড়িয়ে চলতে হবে
শীতের ঠাণ্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। গরম কাপড় পড়তে হবে, কান ও হাত ঠেকে রাখতে হবে, গলায় মাফলার ব্যবহার করতে হবে। ঠাণ্ডা একেবারে এড়িয়ে চলতে চলতে হবে। গোসল বা হাতমুখ ধোয়া থেকে শুরু করে সবসময়ে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। খাবার পানির ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি মিশিয়ে খেতে পারলে ভালো।
যা করা উচিত
এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন জলপাই, কমলা, লেবু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এগুলো একপ্রকার প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। শিশুরা অনেক সময় শরীরে গরম কাপড় রাখে না বা খুলে ফেলে। তাই তাদের দিকে সতর্ক নজর রাখা উচিত। শীতকালেও নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে।