শতাধিক দেশের দাবির মুখে করোনা উৎস তদন্তে রাজি চীন
- আপডেট সময় : ০৫:৩৮:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০২০ ৫২৩ বার পড়া হয়েছে
মহামারি করোনাভাইরাস কি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে! নাকি কোনো গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে? এ নিয়ে সন্দেহ দূর করতে ১০০ বেশি দেশের দাবির মুখে অবশেষে রাজি হয়েছে চীন। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দু’দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের শুরুর দিনে উদ্বোধনী বক্তব্যেই এ কথা জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বিদেশিসংবাদমাধ্যমগুলো একথা জানিয়েছে। করোনাভাইরাসের উৎস ও ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে সংক্রমণ রোধে চীনের ভূমিকা কী ছিল, সে বিষয়ে তদন্ত করতে চলমান সম্মেলনে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপনের কথা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে তৈরি খসড়া প্রস্তাবনাটি উত্থাপন করা হবে। প্রস্তাবনায় অবশ্য চীনের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। ১২২টি দেশ ইইউর এই খসড়া প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। ইইউ এবং আফ্রিকান গ্রুপের সদস্য দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্র্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এমনকি চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়াও এতে সমর্থন দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালনা পরিষদের বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পরে বিষয়টি সামগ্রিকভাবে খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এ ধরনের তদন্ত অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষভাবে হতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ মুহূর্তে এ ভাইরাস সংক্রমণ দূর করা এবং সহযোগিতার ওপরই জোর দেওয়া উচিত। করোনাভাইরাস মোকাবিলার লড়াইয়ে চীন দুইশ কোটি ডলার সহায়তা দেবে বলেও জানান শি জিনপিং। করোনাভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য লুকোচাপার অভিযোগ করেন। চীন অবশ্য শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে শি জিনপিং বলেন, ২০১৯ সালের শেষে হুবেই প্রদেশে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস নিয়ে চীন খোলামেলা ছিল এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। তবে চীন বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, করোনাভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখার এ উদ্যোগ আসলে তাদেরই দোষারোপের চেষ্টা। তদন্তের বিষয়টিও এত দিন প্রত্যাখ্যান করে আসছিল চীন। করোনাভাইরাসের উৎপত্তি তদন্তের যৌথ প্রস্তাবনা নিয়ে ভোট হওয়ার কথা। তবে চীন এতে ভোট দেবে কিনা সে ব্যাপারে শি তার বক্তব্যে কোনো আভাস দেননি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোটের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, প্রস্তাবে চীন বা উহান (চীনের এই শহরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল) শব্দ দুটি নেই। তবে খসড়ায় পরিস্কারভাবে চীনের দিকে ইঙ্গিত দেওয়া আছে। প্রস্তাবে ইইউ কিছুটা নরম ভাষা ব্যবহার করেছে। অথচ ভাইরাসের উৎপত্তি ও চীনের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের ব্যাপারে অস্ট্র্রেলিয়ার কড়া অবস্থান কিছুদিন আগেও ছিল চোখে পড়ার মতো। খসড়া প্রস্তাবটি পাস করাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেশিরভাগ সদস্য দেশের সই দরকার। বিশ্নেষকদের মতে, রাশিয়ার মতো চীনের মিত্র দেশগুলোর সই জোগাড় করতেই সম্ভবত কৌশল হিসেবে খসড়া প্রস্তাবে নরম ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। মহামারি মোকাবিলায় ভূমিকা নিয়ে সম্মেলনে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যালেক্স আজার বলেন, এ সংস্থা বিশ্ববাসীকে নভেল করোনা সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং মহামারি রূপ নিয়েছে। এর আগেই অবশ্য ট্রাম্প সংস্থাটির দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে তা তদন্তে নিজের প্রশাসনকে অনুমতিও দেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক