ঢাকা ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রূপগঞ্জের বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ!

ভয়েস রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৭:০৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১ ১৭০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রূপগঞ্জের অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছবি সংগ্রহ

বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ! স্বজনহারাদের চোখ শুকিয়ে গিয়েছে। কান্নার পরিবর্তে কেবল গোঙ্গানির শব্দ। বুক চাপড়ে ক্ষিণ স্বরে নাড়ি ছেড়া সন্তানকে দেখার আকুতি। শান্তনা দিতে আসা মানুষও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কোন শান্ত বাণীই রূপগঞ্জের স্বজনহারাদের স্পর্শ করতে পারছে না। কোন প্রকারের শর্তের তোয়াক্কা করে কারখানাটি নির্মাণ করা হয়েছে। একথা জানালেন নারায়নগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।

এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। ২০ ঘন্টার অধিক সময় ধরে চলা অগ্নিকান্ডে ৫২ জনের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না রূপগঞ্জবাসী। যে কারখানায় শ’ শ’ শ্রমিক কাজ করতো এবং এক একটি  ফ্লোরের আয়তন যেখানে ৩৫ হাজার ফুটের অধিক, সেখানে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মাত্র ৫২ জনের মৃত্যু আমলে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী।

নারায়নগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ররূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও অর্ধশতাধিক নিহতের ঘটনায় শনিবার দুপুরে গুলশানের নিজ বাসা থেকে আবুল হাশেমকে আটক করা হয়েছে। তিনি ছাড়াও এ ঘটনায় আরও সাতজনকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর তাদেরকে নারায়নজঞ্জে নিয়ে আসা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত চারজন , ছবি সংগ্রহ

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বলেছেন, যেই কারখানার মালিক হোক তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এ ঘটনায় দায়ী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ঘটনার জন্য কারও ন্যূনতম অবহেলা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে এবং হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভবন নির্মাণে ন্যূনতম ত্রুটি এবং শ্রমিক পরিচালনায় কোনো গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার ৮জন

এর আগে রূপগঞ্জ থানায় ৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়। পুলিশ জানায়, আবুল হাসেম, তার চার ছেলে হাসিব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজীম ইব্রাহীম এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহান শাহ আজাদ, হাসেম ফুড লিমিটেডের ডিজিএম মামুনুর রশিদ ও এডমিন প্রধান সালাউদ্দিনকে দায়ি করে, রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে  আদালত চারদিনের পুলিশ হেফাত মঞ্জুর করেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ  রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস অ্যান্ডস বেভারেজ কারখানায় আগুন লাগে। সেদিন রাতে মারা যায় তিন জন শ্রমিক। ২০ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে শুক্রবার বিকালে ফায়ার সার্ভিস ভবনে উদ্ধার তৎপরতার চালায়। তখন ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও নিখোঁজ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কোন প্রকারের শর্তের তোয়াক্কা করে কারখানাটি নির্মাণ করা হয়েছে। একথা জানালেন নারায়নগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।

জেলা প্রশাসকের সহায়তা ঘোষণা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহত শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

ডিএনএ পরিচয় নিশ্চিতে একমাস

রূপগঞ্জের কারখানায় লাগা আগুনে পোড়াদের পরিচয় নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প  নেই। ২০ ঘন্টার আগুনে পুড়ে শ্রমিকরা কয়লা হয়ে গিয়েছে। আগুনে পোড়া দেহগুলো কয়লার রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় ডিএনএ পরীক্ষাই একমাত্র পন্থা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী সবুজ জানিয়েছেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৫২ জনের পরিচয় জানতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

রূপগঞ্জের বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ!

আপডেট সময় : ০৭:০৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১

রূপগঞ্জের অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছবি সংগ্রহ

বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ! স্বজনহারাদের চোখ শুকিয়ে গিয়েছে। কান্নার পরিবর্তে কেবল গোঙ্গানির শব্দ। বুক চাপড়ে ক্ষিণ স্বরে নাড়ি ছেড়া সন্তানকে দেখার আকুতি। শান্তনা দিতে আসা মানুষও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কোন শান্ত বাণীই রূপগঞ্জের স্বজনহারাদের স্পর্শ করতে পারছে না। কোন প্রকারের শর্তের তোয়াক্কা করে কারখানাটি নির্মাণ করা হয়েছে। একথা জানালেন নারায়নগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।

এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। ২০ ঘন্টার অধিক সময় ধরে চলা অগ্নিকান্ডে ৫২ জনের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না রূপগঞ্জবাসী। যে কারখানায় শ’ শ’ শ্রমিক কাজ করতো এবং এক একটি  ফ্লোরের আয়তন যেখানে ৩৫ হাজার ফুটের অধিক, সেখানে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মাত্র ৫২ জনের মৃত্যু আমলে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী।

নারায়নগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ররূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও অর্ধশতাধিক নিহতের ঘটনায় শনিবার দুপুরে গুলশানের নিজ বাসা থেকে আবুল হাশেমকে আটক করা হয়েছে। তিনি ছাড়াও এ ঘটনায় আরও সাতজনকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর তাদেরকে নারায়নজঞ্জে নিয়ে আসা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত চারজন , ছবি সংগ্রহ

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বলেছেন, যেই কারখানার মালিক হোক তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এ ঘটনায় দায়ী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ঘটনার জন্য কারও ন্যূনতম অবহেলা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে এবং হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভবন নির্মাণে ন্যূনতম ত্রুটি এবং শ্রমিক পরিচালনায় কোনো গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার ৮জন

এর আগে রূপগঞ্জ থানায় ৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়। পুলিশ জানায়, আবুল হাসেম, তার চার ছেলে হাসিব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজীম ইব্রাহীম এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহান শাহ আজাদ, হাসেম ফুড লিমিটেডের ডিজিএম মামুনুর রশিদ ও এডমিন প্রধান সালাউদ্দিনকে দায়ি করে, রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে  আদালত চারদিনের পুলিশ হেফাত মঞ্জুর করেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ  রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস অ্যান্ডস বেভারেজ কারখানায় আগুন লাগে। সেদিন রাতে মারা যায় তিন জন শ্রমিক। ২০ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে শুক্রবার বিকালে ফায়ার সার্ভিস ভবনে উদ্ধার তৎপরতার চালায়। তখন ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও নিখোঁজ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কোন প্রকারের শর্তের তোয়াক্কা করে কারখানাটি নির্মাণ করা হয়েছে। একথা জানালেন নারায়নগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।

জেলা প্রশাসকের সহায়তা ঘোষণা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহত শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

ডিএনএ পরিচয় নিশ্চিতে একমাস

রূপগঞ্জের কারখানায় লাগা আগুনে পোড়াদের পরিচয় নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প  নেই। ২০ ঘন্টার আগুনে পুড়ে শ্রমিকরা কয়লা হয়ে গিয়েছে। আগুনে পোড়া দেহগুলো কয়লার রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় ডিএনএ পরীক্ষাই একমাত্র পন্থা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী সবুজ জানিয়েছেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৫২ জনের পরিচয় জানতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগতে পারে।