‘ভেজালের রাজ্যে বিভ্রান্ত ক্রেতা’ প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যের বাজার ঘিরে মাঠে প্রতারকচক্র

- আপডেট সময় : ০৩:০১:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১ ২১৩ বার পড়া হয়েছে
ছবি সংগ্রহ
প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন সোহাগ রানা। বৃহস্পতিবার রাতে তার বাসাবোর বাসায় বসে আলাপ প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘বর্তমান মার্কেটের যে হালচাল তাতে কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন’।
তার কথার কোন উত্তর না পেয়ে বললেন, বিশ্বাস করতে পারছেন না? ‘ভুক্তভোগি আমি নিজে।’ আপনার মতো প্রযুক্তি জানা লোকের যদি এই হাল, তাহলে তো হাজারো ক্রেতা প্রতারিত হচ্ছেন! এবারে সোহাগ রানা বলেন, হাজারো ক্রেতার কথা ছেড়ে দিন। বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে লাখ টাকার ওপরে গচ্ছা দিয়েছি। অক্ষেপের সুরে জানালেন এই তরুণ উদ্যোগক্তা।
তিনি আরও জানান, নিজে ক্ষতির নিরবে সহ্য করেও সংশ্লিষ্টদের টাকা ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ, আমাকে বিশ্বাস করে কাজের জন্য টাকা পাঠান তারা। সেই কাজটি করতে গিয়ে আমি প্রতারিত হলাম। তাতো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেখার বিষয় কিন্তু নয়। তাই তিনি ব্যবসা ধরে রাখতেই গচ্ছা গুণতে গুণেছেন।
সোহাগ রানার বক্তব্য শুনে বাসায় এদিন রাতেই একটি বেসরকারী টেলিভিশনও অনলাইনে মানহীন পণ্য এবং প্রতারণার সূত্র ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেখা গেল। সন্ধ্যায় সোহাগ রানার বক্তব্য রাতের টিভি খবর এবং সংবামাধ্যমে প্রকাশিত নানা তথ্য উপাত্থে ওঠে এসেছে প্রতারণার জাল বিস্তারের ঘটনা।

অভিযোগ ওঠে এসেছে, অনলাইনে বিশাল ছাড়ের অফার দিয়ে ভেজাল পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এমন অভিযোগও রয়েছে, পণ্য ডেলিভারীর অর্ডারের সঙ্গে টাকা নিয়ে কোন কোন ই-কমার্ম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাওয়া হয়ে যাবার। তাদের আগের ফোন নাম্বারে মিলছে না।
করোনাকালীন সময়টাতে স্বাভাবিক হতে পারেনি মার্কেট-বিপণীবিতান। স্বাভাবিক হয়নি অনেক কিছুই। সেই সঙ্গে মানুষের চলাচলও অনেকটা সীমিত। এই সুযোগকে পূঁজি করে একশ্রেণীর প্রতারক অনলাইনে মোটা দাগের অফার দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বা নিম্নমাণের পাশাপাশি ভেজাল পণ্য সরবরাহ করার অভিযোগ ওঠেছে।
জানা গেছে, সংকটকালে নকল বা কপি হচ্ছে প্রযুক্তি পণ্য। অভিযোরেগর এই তালিকায় রয়েছে, হার্ডড্রাইভ, মাদারবোর্ড ইত্যাদি। পাশাপাশি বাজারে আসছে বেশ পুরানো প্রসেসর। পুরাতন ল্যাপটপ, হার্ডড্রাইভ ও মাদারবোর্ড মিলছে এলিফ্যান্টরোড কেন্দ্রিক প্রযুক্তি বাজারগুলোতে।
যতদূর জানা যায়, ল্যাপটপে সংকট থাকলেও কিছু কিছু ব্র্যান্ড বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ডেল। এইচপির সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। অন্যান্য ব্র্যান্ড (আসুস, এসার, লেনেভো, গিগাবাইট, এমএসআই ইত্যাদি) বিভিন্ন সময়ে বাজারে ল্যাপটপ ছেড়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) যুগ্ম সম্পাদক মুজাহিদ আল-বেরুনী সুজন একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, গত বছর থেকেই বাজারে প্রযুক্তি পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে চাহিদা তুলনায় ৬০ শতাংশ পণ্যের যোগান রয়েছে। তবে সংকট কাটিয়ে ওঠতে সময় লাগবে। তিনি জানান, বাজারে চিপ ও প্যানেল সংকট রয়েছে। প্যানেল সংকটের কারণে মনিটরের দাম অনেক বেড়েছে।
প্রযুক্তি ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন, এমন ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের পর চায়না থেকে পণ্য আসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে থেকে কিছু কিছু শিপমেন্ট আসতে শুরু করে। তারপরও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। যার সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র।
অনেকে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, অফারে কান না দিয়ে যাচাই করুন। মার্কেট দর দেখুন। কারণ, এতো কমদামে পণ্যতো আর আকাশ থেকে এনে দেবে না! তাছাড়া এটাতো কোন সাধারণ চাষাবাদের ফসলও নয়। আমের মতো ঝুড়ি বেধে কোরিয়ারে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সবাইকে সচেতন হবার পরামর্শ দেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
আল-বেরুনী জানালেন, বিশ্ববাজারে প্যানেলের দাম ৫৬ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। যার প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশের বাজারও। সাড়ে ৫ হাজার টাকা দামের মনিটর (১৮ দশমিক ৫ ইঞ্চি) এখন বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার টাকায়। তুলনামূলক সস্তা ল্যাপটপ ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। ৩৫ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৩ হাজার টাকায়।