ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে মায়ের সঙ্গে ৯ মাসের সন্তানের বিচ্ছেদ

- আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫ ৬৮ বার পড়া হয়েছে
মুহূর্তটা ছিল বিদায়ের। কালো নেটের বোরকা পরে তপ্ত রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সায়রা শক্ত করে স্বামী ফারহানের হাত ধরে রেখেছিলেন। ভারত ও পাকিস্তানের প্রধান সীমান্ত চেকপোস্টের মধ্যে আরও কিছুটা সময় দুজনে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করছিলেন।
সীমান্তটির নাম আত্তারি-ওয়াঘা। একদিকে ভারতের আত্তারি গ্রাম, অন্যদিকে পাকিস্তানের ওয়াঘা। এই সীমান্ত পথ বহু বছর ধরে ভারত-পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণের একটি গেটওয়ে ছিল। সেই আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত বিভাজনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশ তাদের নাগরিকদের সীমান্তের ওপারের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। হাজারো পরিবারের ওপর এর প্রভাব পড়ছে, যাদের কিছু সদস্য ভারতের, আবার কিছু সদস্য পাকিস্তানের।
ভারত সরকার গত মঙ্গলবারের মধ্যে প্রায় সব পাকিস্তানি নাগরিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর ৯ মাসের ছেলে আজলানকে নিয়ে সায়রা ও ফারহান নয়াদিল্লি থেকে সারা রাত ভ্রমণ করে সীমান্ত ক্রসিংয়ে পৌঁছান।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্দেশনা জারি করা হয়। হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সায়রার দিকে তাকিয়ে ফারহান বলেন, শিগগিরই আমাদের দেখা হবে। এরপর শিশুপুত্র আজলানের গালে চুমু খেয়ে বিদায় জানালেন ফারহান। বলেন, ইনশা আল্লাহ, খুব শিগগির দেখা হবে। আমি তোমাদের দুজনের জন্য দোয়া করব।
তিন বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমের পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা সায়রার সঙ্গে নয়াদিল্লির ফারহানের প্রেম হয়। এরপর বিয়ে। সায়রা চলে আসেন নয়াদিল্লিতে। গত মঙ্গলবার আত্তারি সীমান্তে দাঁড়িয়ে সায়রা ও ফারহান যখন একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলেন, তখন দুজনেরই চোখ ভিজে উঠেছিল। সেই মুহূর্তে এক সীমান্তরক্ষী তাদের তাড়া দিয়ে বললেন চলুন, সময় নেই।
ঠিক তখনই এক নিরাপত্তারক্ষী এগিয়ে এসে আজলানের পাসপোর্টের দিকে ইশারা করলেন। সেটি ছিল নীল রঙের মানে ভারতীয়। নিরাপত্তারক্ষী সায়রাকে বললেন, বাচ্চাটি যাবে না, ম্যাডাম। সায়রা তখনো বাঁ হাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই দম্পতিকে আলাদা করে দেওয়া হয়। এরপর সায়রা চললেন করাচির পথে, আর ফারহান তাদের দুধের সন্তান আজলানকে নিয়ে ফিরে গেলেন নয়াদিল্লিতে।
গত ২২ এপ্রিল অস্ত্রধারীরা পেহেলগামের এক পর্যটন শহরে গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে। তাদের বেশির ভাগই পর্যটক। ঘটনার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত এ হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তা প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।