ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

- আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মে ২০২১ ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
বাংলাদেশে ভারতের ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, দ্রুত সংক্রমণশীল করোনার এই ভেরিয়েন্টটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। আর তা যদি ছড়িয়ে পড়ে তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর গবেষণায় যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরিয়েন্ট তা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এই ধরণ নিয়ে আগে থেকেই আলোচনার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা দেয়। তবে এ ধরনের প্রাদুর্ভাব অনেকটা কমে আসার পথেই ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ফের ভাবিয়ে তুলছে।
গবেষকেরা ভারতে তৈরি করোনার নতুন ধরনটির নাম দিয়েছেন, ‘বি-ওয়ান-সিক্সসেভেনটিন’। এটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিলো গত অক্টোবরে। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর এমন তথ্য দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঁজরঘেষা পরশি দেশের সঙ্গে বিশাল সীমান্ত। দেশটি এখন করোনায় বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন, এমন ব্যক্তিরা ফিরে আসার পর পরীক্ষায় ১০জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের যশোর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়। কিন্তু তারা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে নিজের বাড়ি চলে যায়।
বিষয়টি জানাজানির হলে এনিয়ে তুলকালামকান্ড শুরু হয়। অবশেষে তাদের হাসপাতালে ফিরিয়ে এনে করোনা ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের বাড়ির লোকজনদেরও পরীক্ষার আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় ভারতে দ্রুত সংক্রমিত নতুন ধরণটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন চিকিৎসকেরা। এটি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাগুলো কার্যকর রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেল্থ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে বিশাল সীমান্ত রয়েছে। যেকোনো সময় যে কোনোভাবে ভারতের ভয়াবহ এই ভেরিয়েন্টটি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।
যদিও সরকার নতুন ভেরিয়েন্টটি রুখতে এরই মধ্যে সীমান্ত, বিমান চলাচল বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হলেও আমরা চিন্তিত যে কিছু কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ভারতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির কারণ হচ্ছে, নতুন এই ধরণটি আগ্রাসী গতিতে মানুষকে সংক্রমিত করা। সংক্রমণের ২/৩ দিনের মধ্যেই ফুসফুস আক্রান্তর হয় এবং অক্সিজেন লেভেল নেমে যায়। যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরিয়েন্টের চেয়ে ভারতের এই ভেরিয়েন্টটি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলেও মনে করা হচ্ছে।
অপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেনের মতে, ভারতের ভেরিয়েন্ট নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের ভেতরের ভেরিয়েন্টটি নিয়েও তো এখনও আশঙ্কা দূর হয়নি। সংক্রমণ কমেছে এতে এখনই স্বস্তিবোধ করার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংক্রমণ যত বেশি ছড়াবে মৃত্যুও তত বাড়বে। ভারতে অধিক পরিমাণের সংক্রমণের কারণেই মৃত্যুও বাড়ছে। সারা বিশ্বের ভেরিয়েন্ট ভারতে চলে এসেছে। বাংলাদেশেও অনেকগুলো ভেরিয়েন্ট রয়েছে উল্লেখ করে ডা. মোশস্তাক বলেন, যত বেশি সংক্রমণ হবে ভেরিয়েন্টের তত বেশি পরিবর্তন হবে। সংক্রমণের সঙ্গে ধরণ পাল্টানোর একটা যোগসূত্র রয়েছে।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত দিন তিনেক যাবত সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখি। সংক্রমণ হার ১০ ভাগের কাছিকাছি নেমে এসেছে। সেই তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যাও দ্রুত কমছে না। এখনও প্রতিদিন ৫০জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
শনিবার সরকারি হিসাব মতে, ভারতে আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ৪ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জন। মারা গিয়েছেন ৩ হাজার ৫২৩ জন। শুক্রবার আক্রান্তর সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫২ জন আর মারা গিয়েছেন ৩ হাজার ৫শ জনের বেশি মানুষের। এর আগে ২৮ এপ্রিল মারা যান ৩ হাজার ৬৪৭ জন।