ঢাকা ১১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় নারীদের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:১৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১৯ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যাতে করে নারীরাও ভারতের মিলিটারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান, সেই ব্যবস্থা করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আদালতের এই আদেশকে ভারতের জন্য একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করে নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার মধ্য দিয়ে ভারতীয় নারীদের সামনে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদগুলো যাওয়ার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা যেখানে ১৩ লাখের বেশি, সেখানে নারীদের সংখ্যা নিতান্তই কম। ভারতীয় নারীদের সামরিক বাহিনীতে কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে, কিন্তু

মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পড়ার সুযোগ না থাকায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর নেতৃত্বের পদগুলোতে যাওয়ার সুযোগ তারা পচ্ছেন না।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, আদালতের এই আদেশের ফলে আসছে নভেম্বরে ভারতীয় নারীরা প্রথমবারের মত দেরাদুনে রাষ্ট্রীয় ভারতীয় মিলিটারি কলেজে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

ভারতের সর্বোচ্চ এই সামরিক অ্যাকাডেমি থেকে ডিগ্রিধারীরাই পরে দেশটির তিন বাহিনীর কমান্ডিং পদে যান।

সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে হয় এমন পদে নারীদের না নেওয়ার যে অবস্থান ভারত সরকারের রয়েছে, তাতে অবশ্য সায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তবে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার

সুযোগ তৈরি হলে ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে নারীদের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর অঞ্জু বালা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন,

আদালতের এই রায়ে একভাবে জয়ের আভাস পাচ্ছেন তিনি। পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার একটি দরজা এই আদেশের ফলে খুলে গেল। কেবল সামরিক বাহিনী নয়,

ভারতের সব ক্ষেত্রেই সমান সুযোগ পাওয়ার জন্য লড়াই করে যেতে হচ্ছে নারীদের। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে চাকরি করার বয়সী নারীদের মাত্র ৯ শতাংশ কোনো ধরনের

কাজে যুক্ত আছেন। ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে মেয়েরা যুক্ত রয়েছেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। দুটো বিশ্বযুদ্ধের সময় নার্সের ভূমিকায় সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন নারীরা।

২০০৭ সালে লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘের প্রথম নারী শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টেও ভারতীয় নারীদের অফিসার হিসেবে দেখা গিয়েছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ভারতীয় সামরিক

বাহিনীতে শিক্ষা ও আইন বিভাগে নারীদের স্বল্পমেয়াদী কাজের সুযোগ তৈরি হয়। ধীরে ধীরে ইঞ্জিনিয়ারিং, লজিসটিকস এবং ইন্টেলিজেন্সসহ আটটি বিভাগে নারীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু

হয়। বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে পুরনো আধা সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলস এবং আর্মি পুলিশ বাহিনীতেও নারীরা কাজ করছেন। কিন্তু তাদের চাকরির মেয়াদ হয় সর্বোচ্চ ১৪ বছর।

নেতৃত্বের পদে যাওয়ার সুযোগও খুব সীমিত।
বর্তমানে ১৭ বছর বয়স হলে পুরুষরা ভারতীয় মিলিটারি কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। চার বছরের কোর্স করে বাহিনীতে কমিশন পান তারা।

আর নারীদের ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ১১ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। উঁচু পদে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় অনেক নারী অফিসারকে আগেই চাকরি থেকে অবসরে যেতে হয়।

৩৪ বছর বয়সী সৌম্য নারায়াণী ভারতের বিমান বাহিনীতে কাজ করেছেন ১১ বছর। তারপর থাকে অবসরে পাঠানো হয়। এখন চেন্নাইয়ে তার দিন কাটছে সন্তান লালন পালন করে। নারায়াণী

বলেন, চাকরির মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে তার আর্থিক স্বাধীনতা যেমন বাড়ত, ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা করাও সহজ হত। তার বদলে মধ্য ত্রিশে তাকে কর্মজীবন শেষ করতে হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ভারতীয় নারীদের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে

আপডেট সময় : ০৭:১৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

যাতে করে নারীরাও ভারতের মিলিটারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান, সেই ব্যবস্থা করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আদালতের এই আদেশকে ভারতের জন্য একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করে নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার মধ্য দিয়ে ভারতীয় নারীদের সামনে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদগুলো যাওয়ার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা যেখানে ১৩ লাখের বেশি, সেখানে নারীদের সংখ্যা নিতান্তই কম। ভারতীয় নারীদের সামরিক বাহিনীতে কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে, কিন্তু

মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পড়ার সুযোগ না থাকায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর নেতৃত্বের পদগুলোতে যাওয়ার সুযোগ তারা পচ্ছেন না।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, আদালতের এই আদেশের ফলে আসছে নভেম্বরে ভারতীয় নারীরা প্রথমবারের মত দেরাদুনে রাষ্ট্রীয় ভারতীয় মিলিটারি কলেজে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

ভারতের সর্বোচ্চ এই সামরিক অ্যাকাডেমি থেকে ডিগ্রিধারীরাই পরে দেশটির তিন বাহিনীর কমান্ডিং পদে যান।

সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে হয় এমন পদে নারীদের না নেওয়ার যে অবস্থান ভারত সরকারের রয়েছে, তাতে অবশ্য সায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তবে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার

সুযোগ তৈরি হলে ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে নারীদের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর অঞ্জু বালা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন,

আদালতের এই রায়ে একভাবে জয়ের আভাস পাচ্ছেন তিনি। পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার একটি দরজা এই আদেশের ফলে খুলে গেল। কেবল সামরিক বাহিনী নয়,

ভারতের সব ক্ষেত্রেই সমান সুযোগ পাওয়ার জন্য লড়াই করে যেতে হচ্ছে নারীদের। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে চাকরি করার বয়সী নারীদের মাত্র ৯ শতাংশ কোনো ধরনের

কাজে যুক্ত আছেন। ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে মেয়েরা যুক্ত রয়েছেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। দুটো বিশ্বযুদ্ধের সময় নার্সের ভূমিকায় সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন নারীরা।

২০০৭ সালে লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘের প্রথম নারী শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টেও ভারতীয় নারীদের অফিসার হিসেবে দেখা গিয়েছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ভারতীয় সামরিক

বাহিনীতে শিক্ষা ও আইন বিভাগে নারীদের স্বল্পমেয়াদী কাজের সুযোগ তৈরি হয়। ধীরে ধীরে ইঞ্জিনিয়ারিং, লজিসটিকস এবং ইন্টেলিজেন্সসহ আটটি বিভাগে নারীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু

হয়। বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে পুরনো আধা সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলস এবং আর্মি পুলিশ বাহিনীতেও নারীরা কাজ করছেন। কিন্তু তাদের চাকরির মেয়াদ হয় সর্বোচ্চ ১৪ বছর।

নেতৃত্বের পদে যাওয়ার সুযোগও খুব সীমিত।
বর্তমানে ১৭ বছর বয়স হলে পুরুষরা ভারতীয় মিলিটারি কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। চার বছরের কোর্স করে বাহিনীতে কমিশন পান তারা।

আর নারীদের ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ১১ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। উঁচু পদে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় অনেক নারী অফিসারকে আগেই চাকরি থেকে অবসরে যেতে হয়।

৩৪ বছর বয়সী সৌম্য নারায়াণী ভারতের বিমান বাহিনীতে কাজ করেছেন ১১ বছর। তারপর থাকে অবসরে পাঠানো হয়। এখন চেন্নাইয়ে তার দিন কাটছে সন্তান লালন পালন করে। নারায়াণী

বলেন, চাকরির মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে তার আর্থিক স্বাধীনতা যেমন বাড়ত, ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা করাও সহজ হত। তার বদলে মধ্য ত্রিশে তাকে কর্মজীবন শেষ করতে হয়েছে।