বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগকারীদের আদর্শ গন্তব্য : ড. ইউনূস

- আপডেট সময় : ০৮:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫ ৯১ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল হক, ঢাকা
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ আদর্শ গন্তব্য। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডাইনামিক জনশক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য হিসেবে উপনীত হয়েছে। তারপরও আমরা যুগ যুগ ধরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছি। রবিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইউনূস।
এ সময় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে বেশকিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হয়েছিলো, কিন্তু সেগুলো খালি পড়ে ছিলো। ব্যাপক আকারে দুর্নীতি, স্বৈরচারতন্ত্র বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করেছে। লাখ লাখ তরুণের নেতৃত্বে হওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান সেই দিনগুলোর ইতি টেনেছে। নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতিহাসে এই সুযোগ পাওয়া গেছে। চীনা বিনিয়োগকারীরা আমাদের এই ইতিহাসের অংশ হবার সুযোগ রয়েছে।
এসময় ড. ইউনূস তার বেইজিং সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, সে সময় চীনের প্রেসিডেন্টকে চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কারণ, আমরা এই দেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং অর্থনীতির একটা হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। চীনের প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করি নাই, এতো দ্রুত এতো বড় একটা প্রতিনিধিদল দেশে আসবে। চীনা কোম্পানিরা বিশ্বের প্রধান ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আপনাদের অংশীদার হতে চাই। আপনাদের বড় আকারে বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন করতে পারে।

আমাদের লাখ লাখ তরুণের দক্ষতা কাজে লাগাতে প্রচুর কর্মসংস্থানের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে আমাদের সরকার প্রথমেই সংস্কার কাজ শুরু করেছে। আমাদের নীতিগত সংস্কার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে সাজানো হয়েছে।
সোনালী আঁশ পাট নিয়ে আলাপ বাংলাদেশের জন্য অনেক আবেগি বিষয়। এই দেশ প্রাকৃতিক এই আঁশ বিপুল আকারে উৎপাদন করে। যখন আপনারা পাট এবং পাটজাত পণ্য নিয়ে কথা বলেন, তখন এটি এই দেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। ড. ইউনূস বলেন, পাটের মধ্যে একটা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি কারণ, পাট দিয়ে , এতোদিন শুধু বস্তা তৈরি করা হতো। বিশ্বের একটি প্রাকৃতিক আঁশকে আমরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছি।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা একসঙ্গে পাট নিয়ে একটি নতুন সূচনা করতে পারি এটিকে অর্থনীতিতে তার সঠিক জায়গায় স্থাপন করে। পাটের মতো আরও অনেক পণ্য রয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। জামদানির মতো আরও অনেক পণ্য রয়েছে যেগুলো থেকে আরও অনেক ভিন্ন পণ্য তৈরি করা যায়। কিন্তু এটি শুধু শাড়ি বানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মসলিনকেও এভাবে ফিরিয়ে আনা যায়। আমাদের আকাশ ছুঁতে পারার মতো একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে।
এই সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। ইউনূস বলেন, ১০ মাস আগে গঠন হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের কাজের ফল ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু হয়েছে। এপ্রিলে আমরা একটি সফল বিজনেস সামিত আয়োজন করেছি। পাঁচ দিনের এই মিলনমেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি এখানে এসেছিল। বিনিয়োগ সম্মেলনে একটি চীনা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান একাই ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।