বাংলাদেশে শুরু ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ

- আপডেট সময় : ১০:২৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুলাই ২০২১ ২৪২ বার পড়া হয়েছে
লকডাউন বাস্তবায়নে তৎপর সেনাবাহিনী : ফাইল ছবি
ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। করোনার বেলাগাম সংক্রমণ রুখতে সাতদিন বিরতির পর ফের শুরু হলো ১৪দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। যেকোন মূল্যে করোনার সংক্রমণ নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর হাসিনা সরকার।
শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধে ছাড় মিলবে কোন কিছুতেই। সকল অজুহাতকে উড়িয়ে বিধিনিষেধ বাস্তাবায়নে মাঠে দায়িত্বে পালনে রয়েছেন, পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আনসার সদস্যরা।

জুন মাস থেকেই বাংলাদেশে মাথা উঁচু করা সংক্রমণ দেখা দেয়। এক পর্যায়ের প্রতিনিয়ত উর্ধমুখি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তবর্তী এলাকায়। বিশেষ করে রাজশাহীতে ব্যাপকতা দেখা দেয়। পাশাপাশি সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা হয়ে ওঠে আসে সংক্রমণ আর মৃত্যুর প্রধান নিশানায়।
এমনি পরিস্থিতি সামাল দিতে ১ জুলাই থেকে সারাদেশে জারি করা হয় বিধিনিষেধ। প্রথমে সাতদিন এবং পরবর্তীতে তা আরও সাতদিন বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে দুয়ারে কড়া নাড়ে কোরবানির ঈদ।
এই অবস্থায় ঈদ পালনে কোরবানির পশু সংগ্রহে সাতদিনের জন্য শিথিল করা হয় বিধিনিষেধ। সেময়ের প্রজ্ঞাপন জারির কালেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিলো, ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধের কথা।
পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে বার বার সতর্কবার্তা উল্লেখ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রী, এমনি এবং রাজনৈতিক নেতারা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জনপ্রতিনিধিদের ঈদ উপহার বিতরণকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছেন। করোনার থাবা থেকে মানুষকে রক্ষায় শেখ হাসিনা সরকারের পদক্ষেপের কথা তৃণমূল পর্যায়ে জনসাধারণের কাছে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছেন জনপ্রতিনিধি তথা মন্ত্রী-এমপিরা।
কিন্তু বহুক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গিয়েছে, সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছেন। তারা সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এমনকি দৈহিক দূরত্বের বিষয়টিকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা
তৃণমূল পর্যায়ে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রমজানের ঈদ থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। সেসময়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় কাতারে কাতারে মানুষ যেভাবে রাজধানী ছেড়ে গ্রামমুখো হয়েছেন, তাতে করে সেখানে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তারপরও মানুষের বেলাগাম যাত্রা থামানো যায়নি। ফলে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলেও করোনার বিস্তার বেড়ে গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে করোনার লাগাম টানতে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছে হাসিনা সরকার। কারণ মানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব বর্তায় সরকারের ওপরেই।
এবারের কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালীন অফিস-আদালত, কলকারখানাসহ সকল কিছু বন্ধ থাকছে। ঈদ উপলক্ষে যারা ঢাকা ছেড়ে গিয়েছেন, তাদের অনেকেই ফিরে আসতে পারেননি। তাদেরকে নিজ অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে।
যা বন্ধ থাকবে
এবারও সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলের এলাকায় অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করবেন। সকল প্রকার শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে, যা এতদিন লকডাউনের মধ্যে খোলা রাখার অনুমতি ছিল।
সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
যা খোলা থাকবে
জরুরি পরিষেবার মধ্যে কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, জল, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট
(সরকারি-বেসরকারি), সংবাদমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচলের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
পাশাপাশি জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
কাঁচাবাজারের সময় পরিবর্তন
সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (অনলাইন/টেকওয়ে) খাবার বিক্রি করতে পারবে।