বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য উৎসবে মাতলো ঢাকা, দেশজুড়ে নববর্ষ বরণ মঞ্চ

- আপডেট সময় : ০৯:০২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
অনিরুদ্ধ, ঢাকা
গোটা বাংলাদেশ জুড়েই বর্ষবরণের মঞ্চ। জেলা-উপজেলা, পাড়া-মহল্লাহ কোথায় নেই ঝলমলে আনুষ্ঠানমালা। বাংলানববর্ষকে বরণ করে নিয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানই ছিলো বর্ণাঢ্য। দীর্ঘ বছর পর মুক্ত পরিবেশে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণ আয়োজনে অংশ নিয়েছে মানুষ। বাধাহীন আনন্দ শোভাযাত্রা যেন জনস্রোত।
কাকডাকা ভোরে নতুন সাজে নিজে সাজিয়ে ঘর ছেড়েছে মানুষ। সপরিবারে একের পর এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। রমনা বটমূল হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পেরিয়ে চারুকলার বর্ষবরণ আনন্দ শোভায় যাত্রায় অংশ নিয়ে নাচেগানে মেতে ওঠে। এদিন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে কনসার্ট ঘিরেও ছিলো সর্বস্তরের মানুষের ঢাল।

ঢাকায় নববর্ষের বর্ণাঢ্য আননন্দ শোভাযাত্রায় পা মেলালো লাখো মানুষ। নিকট অতীতে এতো বৈচিত্রময় এবং সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে ঢাকায় নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়নি। এবারের পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বরণ আয়োজনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলো, আনন্দ শোভাযাত্রা।
যেখানে স্বৈরাচারের মুখ রাজধানী ঢাকাবাসীর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণের ছিলো। তাছড়া ছিলো পাঁচটি পটচিত্র। তার একটি হচ্ছে, যার হাত ধরে বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাক পালন শুরু হয়, সেই বাদশা আকবর, গাজীরপট, বেহুলা, বনবিবি ও বাংলাদেশ। এই পাঁচটি পটচিত্র ঘিরেও মানুষের আগ্রহ ছিলো।

নববর্ষের প্রতিপাদ্য নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান। এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এক মাসের বেশি সময় নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রার উপকরণ তৈরি করা হয়। পহেলা বৈশাখে দু’দিন আগেই স্বৈরাচারের মুখাকৃতি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
এঘটনার পর দু’দিনের মধ্যে রাতদিন পরিশ্রম করে ফের মুখাকৃতি তৈরি করা হয়। আগুন দিয়ে স্বৈরাচারের মুখাকৃতি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি দেশবিদেশের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রাকাশ পায়। এই প্রচারের সোমবার ঢাকার আশপাশ থেকেও বিপুল সংখ্যক মানুষ আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এবারের শোভাযাত্রায় ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথি অংশ নিয়েছেন। এ বছর প্রধান ৭টি মোটিফ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে দীর্ঘসময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরতে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি মোটিফ রাখা হয়েছে। শোভাযাত্রায় আরও ছিলো বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, পালকি রয়েছে।

এ বছর ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি মোটিফ হিসেবে রাখা হয়েছে। তরমুজ ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধ ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। বড় মোটিফের পাশাপাশি এ বছর মাঝারি মোটিফ রয়েছে ৭টি।
এর মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। এবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। পট বা বস্ত্রের ওপর এই লোকচিত্র আঁকা হয়। চারুকলায় এবার ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলির পটচিত্র আঁকা হয়েছে।