ঢাকা ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে তার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১৭:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ ৬৭ বার পড়া হয়েছে

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে ড. রফিকুল আমীনের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছে, ডিআরইউ সভাপতি আবু সালে আকন ও সাধারণ সম্পাদক সাইনুল হাসান সোহেল।

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমিনুল হক ভূইয়া

ফ্যাসিস্টের অত্যাচার-নীপিড়নের স্টিম রোলার থেকে বাদ যায়নি ছাত্র, শিক্ষক, ভিন্ন মতের রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সমাজ। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন কতটা চরম ও লোমহর্ষক হতে পারে, তার প্রমাণ মেলে মিথ্যা মামলায় বিনাবিচারে কারাগারে নিক্ষেপ, আজগুবি মামলায় ইচ্ছে মাফিক তুলে নিয়ে গুম, ক্রসফায়ার, বছরের পর বছর আয়না ঘরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো।

গতবছরের ৫ আগস্টের পর কথিত আয়না ঘর (টর্চার সেল) জনসমুখে প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়ি থেকে তুলে এনে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অকথ্য নির্যাতন চালানোর লোমহর্ষক নির্যাতন । অবাক কান্ড হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) টর্চার সেল রয়েছে! যেখানে মিথ্যা মামলায়  ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় হেফাজতে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো।  দুদকে টর্চার সেল কখন ভাবা যায়? দিনের পর দিন হেফাজতে রেখে নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে আটক ব্যবসায়ীর ওপর চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন। ফ্যাসিস্টের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংগঠিত গুন্ডাবাহিনীর মতো কতটা নির্দয় হতে পারে, যা কিনা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
ডিআরইউ মিট দ্য রিপোর্টার্স অনষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ডিআরইউ সভাপতি আবু সালে আকন

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে ফ্যাসিস্টের সহযোগী দুদকের লোমহর্ষক অত্যাচারের বর্ণনা তুলে ধরেন ডেসটিনির প্রতিষ্ঠাতা ড. রফিকুল আমীন। ডিআরইউ সভাপতি আবু সালে আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য সংবাদকর্মী এসময় উপস্থিত ছিলেন। মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি গেষ্ট হিসাবে অংশ নিয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় মিট দ্য রির্পোটার্স অনুষ্ঠানে অংশ নেন ড. রফিকুল আমীন।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ

এই উদ্যোক্তা বলেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে কারারুদ্ধ ছিলেন। ড. আমীন বিনিয়োগ সৃষ্টির অন্যতম কারিগর। তার নেতৃত্বে ডেসটিনি-২০০০ চালুর পর দেশজুড়ে ৪৩ লাখ বিয়োগকারীর এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। তার দেখানো পথে সততা ও পরিশ্রমকে সঙ্গী করে লাখ লাখ মানুষ সৎভাবে জীবন-যাপন করেছেন। চালুর কয়েক মাস যেতে না যেতেই দেখা যায় বিয়োগকারী লম্বা মিছিল। যা কিনা স্বাধীন বাংলাদেশে নজির সৃষ্টি করেছে। পরিবেশবান্ধব ডেসটিনির এই উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। ড. আমীনকে সাজানো মামলায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে দিনের পর দিন দুদক হেফাজতে রেখে তার ওপর চালানো হয় মানুষিক নির্যাতন। মিথ্যা স্বীকারোমূলক কাগজে স্বাক্ষর নিতে ব্যর্থ হয়ে মানুষের ওপর কতটা নির্মম অত্যাচার চালায় দুদক তার জীবন্ত স্বাক্ষী ড. আমীন। মুক্ত আবহাওয়ায় চলাচল করেও সেই বিভৎস স্মৃতি তাকে তাড়া করে।

মিথ্যা মামলা কেন বলছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. রফিকুল আমীন বলেন, তাকে মামলায় জড়ানো হয়, ফ্যাসিস্টের স্বার্থচরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে। তাকে পরিবারসহ দেশের বাইরে চলে যাবার প্রস্তাব দিয়েছিলো দুদক, কিন্তু আমি দেশ ছেড়ে কিছুতেই যাবো না এমন বক্তব্যে তারা খুশি হতে পারেনি। দুদকের কোন প্রলোভনে পা দেইনি বলে আমার স্ত্রীকেও মামলায় জড়ানো হয়। দুদক আপদমস্তক দুর্নীতি পরায়ণ সংস্থা। দুদকে টর্চাস সেলে থাকতে পারে তা আমাদের ধারণা ছিলো না। আমি সেখানে বন্দি থেকে তা প্রত্যক্ষ করেছি। দুদকের টর্চার সেলে নির্যাতনের কি নেই?

রাজনীতি প্রসঙ্গে ড. ৌ বলেন, দেশের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করবো। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে মিট দ্য রিপোর্টার্স আয়োজনে যুক্ত হওয়া রফিকুল আমীন বলেন, মিথ্যা মানিলন্ডারিন মামলায় তাকে ১২ বছরের করাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এক যুগ পর কারামুক্ত হন।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
মিট দ্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল

ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় রফিকুল আমীনসহ কোম্পানির ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদন্ড দেয়া  হয়। কারাদন্ডের পাশাপাশি তাদেরকে ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদন্ডও করা হয়। রায়ের পর ১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় তারা মুক্তিলাভ করেছেন। কিন্তু রফিকুল আমীনের স্ত্রী ফারহা দিবার সাজার ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তিনি কারাগারা রয়েছেন। অথচ ফারহা দিবা ডেসটিনির একজন শেয়ার হোল্ডার মাত্র।

সময়টা ২০২২ সালের ১২ মে। রফিকুল আমিন ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদসহ ৪৬ আসামিকে অর্থপাচার মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয় আদালত। এরমধ্যে রফিকুল আমিনকে ১২ বছর এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদকে ৪ বছর কারাদন্ড দেন আদালত। সাজার মেয়াদ শেষে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মুক্তিলাভ করেন ড. আমীন। মিট দ্য রিপোর্টার্স আয়োজনে ডেসটিনি প্রতিষ্ঠা, বিশাল বিয়োগের পরিবেশ তৈরি এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আমজনগন পার্টি প্রসঙ্গে কথা বলেন ড. আমীন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অত্যন্ত সাবলিলভাবে।

রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা নিয়ে ড. আমীন বলেন, সমাজের অসঙ্গিত, দুর্নীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার প্রধান মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে বাংলাদেশ আমজনগণ মঞ্চ। দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার নজির গড়ে বিদায় নিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার। যে বদনাম বাংলাদেশের রাজনীতিকে কুলশিত করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমজনগন পার্টির মঞ্চ থেকে দুর্নীতিবাজ সংস্থা দুদকের মুখোশ দেশবাসীর সামনে উন্মোচন করা হবে। তার বিশ্বাস নিজের প্রতিষ্ঠিত আমজনগন পার্টি মানুষকে সত্যের আলোকিত পথ দেখাবে।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডেসটিনির প্রতিষ্ঠাতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. রফিকুল আমীন

ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন
এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকের এই আয়োজনে আপনাদেরকে শুভেচ্ছা। ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। একজন উদ্যোক্তা, সমাজ সেবক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবীদ। তিনি বিগত সরকারের শাসনামলে প্রায় ১২ বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তির পর গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও গণতন্ত্র সুরক্ষিত ও সুসংহত করা এবং সামাজিক প্রগতি, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি গঠন করেন। বর্তমানে তিনি এই দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আধুনিক নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর জনক এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ড. আমীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের American World University of Califormia, Los Angeles  Masters of Business Administration স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে MLM business এর ওপর থিসিস লিখে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। ২০০০ সালে ডেসটিনি নামে প্রতিষ্ঠিত ছোট্ট একটি কোম্পানিকে ২০১২ সালের মধ্যে ৩৪টি কোম্পানির সমন্বয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন। ব্যবসার সুবাদে ট্যাক্স ভ্যাট ইত্যাদি যাতে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা কর সরকারী কোষাগারে জমা দেন। ব্যক্তিগতভাবেও সরকারকে প্রচুর ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দেশের বেকারত্বতা বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রায় ৪৩ লাখ পঞ্চাশ হাজার ডিস্ট্রিবিউটর জড়িত। ব্যক্তি জীবনে তিনি ২ কন্যা সন্তানের জনক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে তার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ

আপডেট সময় : ১০:১৭:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

আমিনুল হক ভূইয়া

ফ্যাসিস্টের অত্যাচার-নীপিড়নের স্টিম রোলার থেকে বাদ যায়নি ছাত্র, শিক্ষক, ভিন্ন মতের রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সমাজ। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন কতটা চরম ও লোমহর্ষক হতে পারে, তার প্রমাণ মেলে মিথ্যা মামলায় বিনাবিচারে কারাগারে নিক্ষেপ, আজগুবি মামলায় ইচ্ছে মাফিক তুলে নিয়ে গুম, ক্রসফায়ার, বছরের পর বছর আয়না ঘরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো।

গতবছরের ৫ আগস্টের পর কথিত আয়না ঘর (টর্চার সেল) জনসমুখে প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়ি থেকে তুলে এনে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অকথ্য নির্যাতন চালানোর লোমহর্ষক নির্যাতন । অবাক কান্ড হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) টর্চার সেল রয়েছে! যেখানে মিথ্যা মামলায়  ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় হেফাজতে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো।  দুদকে টর্চার সেল কখন ভাবা যায়? দিনের পর দিন হেফাজতে রেখে নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে আটক ব্যবসায়ীর ওপর চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন। ফ্যাসিস্টের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংগঠিত গুন্ডাবাহিনীর মতো কতটা নির্দয় হতে পারে, যা কিনা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
ডিআরইউ মিট দ্য রিপোর্টার্স অনষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ডিআরইউ সভাপতি আবু সালে আকন

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে ফ্যাসিস্টের সহযোগী দুদকের লোমহর্ষক অত্যাচারের বর্ণনা তুলে ধরেন ডেসটিনির প্রতিষ্ঠাতা ড. রফিকুল আমীন। ডিআরইউ সভাপতি আবু সালে আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য সংবাদকর্মী এসময় উপস্থিত ছিলেন। মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি গেষ্ট হিসাবে অংশ নিয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় মিট দ্য রির্পোটার্স অনুষ্ঠানে অংশ নেন ড. রফিকুল আমীন।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ

এই উদ্যোক্তা বলেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে কারারুদ্ধ ছিলেন। ড. আমীন বিনিয়োগ সৃষ্টির অন্যতম কারিগর। তার নেতৃত্বে ডেসটিনি-২০০০ চালুর পর দেশজুড়ে ৪৩ লাখ বিয়োগকারীর এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। তার দেখানো পথে সততা ও পরিশ্রমকে সঙ্গী করে লাখ লাখ মানুষ সৎভাবে জীবন-যাপন করেছেন। চালুর কয়েক মাস যেতে না যেতেই দেখা যায় বিয়োগকারী লম্বা মিছিল। যা কিনা স্বাধীন বাংলাদেশে নজির সৃষ্টি করেছে। পরিবেশবান্ধব ডেসটিনির এই উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। ড. আমীনকে সাজানো মামলায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে দিনের পর দিন দুদক হেফাজতে রেখে তার ওপর চালানো হয় মানুষিক নির্যাতন। মিথ্যা স্বীকারোমূলক কাগজে স্বাক্ষর নিতে ব্যর্থ হয়ে মানুষের ওপর কতটা নির্মম অত্যাচার চালায় দুদক তার জীবন্ত স্বাক্ষী ড. আমীন। মুক্ত আবহাওয়ায় চলাচল করেও সেই বিভৎস স্মৃতি তাকে তাড়া করে।

মিথ্যা মামলা কেন বলছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. রফিকুল আমীন বলেন, তাকে মামলায় জড়ানো হয়, ফ্যাসিস্টের স্বার্থচরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে। তাকে পরিবারসহ দেশের বাইরে চলে যাবার প্রস্তাব দিয়েছিলো দুদক, কিন্তু আমি দেশ ছেড়ে কিছুতেই যাবো না এমন বক্তব্যে তারা খুশি হতে পারেনি। দুদকের কোন প্রলোভনে পা দেইনি বলে আমার স্ত্রীকেও মামলায় জড়ানো হয়। দুদক আপদমস্তক দুর্নীতি পরায়ণ সংস্থা। দুদকে টর্চাস সেলে থাকতে পারে তা আমাদের ধারণা ছিলো না। আমি সেখানে বন্দি থেকে তা প্রত্যক্ষ করেছি। দুদকের টর্চার সেলে নির্যাতনের কি নেই?

রাজনীতি প্রসঙ্গে ড. ৌ বলেন, দেশের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করবো। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে মিট দ্য রিপোর্টার্স আয়োজনে যুক্ত হওয়া রফিকুল আমীন বলেন, মিথ্যা মানিলন্ডারিন মামলায় তাকে ১২ বছরের করাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এক যুগ পর কারামুক্ত হন।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
মিট দ্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল

ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় রফিকুল আমীনসহ কোম্পানির ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদন্ড দেয়া  হয়। কারাদন্ডের পাশাপাশি তাদেরকে ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদন্ডও করা হয়। রায়ের পর ১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় তারা মুক্তিলাভ করেছেন। কিন্তু রফিকুল আমীনের স্ত্রী ফারহা দিবার সাজার ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তিনি কারাগারা রয়েছেন। অথচ ফারহা দিবা ডেসটিনির একজন শেয়ার হোল্ডার মাত্র।

সময়টা ২০২২ সালের ১২ মে। রফিকুল আমিন ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদসহ ৪৬ আসামিকে অর্থপাচার মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয় আদালত। এরমধ্যে রফিকুল আমিনকে ১২ বছর এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদকে ৪ বছর কারাদন্ড দেন আদালত। সাজার মেয়াদ শেষে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মুক্তিলাভ করেন ড. আমীন। মিট দ্য রিপোর্টার্স আয়োজনে ডেসটিনি প্রতিষ্ঠা, বিশাল বিয়োগের পরিবেশ তৈরি এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আমজনগন পার্টি প্রসঙ্গে কথা বলেন ড. আমীন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অত্যন্ত সাবলিলভাবে।

রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা নিয়ে ড. আমীন বলেন, সমাজের অসঙ্গিত, দুর্নীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার প্রধান মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে বাংলাদেশ আমজনগণ মঞ্চ। দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার নজির গড়ে বিদায় নিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার। যে বদনাম বাংলাদেশের রাজনীতিকে কুলশিত করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমজনগন পার্টির মঞ্চ থেকে দুর্নীতিবাজ সংস্থা দুদকের মুখোশ দেশবাসীর সামনে উন্মোচন করা হবে। তার বিশ্বাস নিজের প্রতিষ্ঠিত আমজনগন পার্টি মানুষকে সত্যের আলোকিত পথ দেখাবে।

ফ্যাসিস্টের চার দেয়ালে আটকে রেখে জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একযুগ
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডেসটিনির প্রতিষ্ঠাতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. রফিকুল আমীন

ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন
এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকের এই আয়োজনে আপনাদেরকে শুভেচ্ছা। ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। একজন উদ্যোক্তা, সমাজ সেবক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবীদ। তিনি বিগত সরকারের শাসনামলে প্রায় ১২ বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তির পর গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও গণতন্ত্র সুরক্ষিত ও সুসংহত করা এবং সামাজিক প্রগতি, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি গঠন করেন। বর্তমানে তিনি এই দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আধুনিক নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর জনক এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ড. আমীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের American World University of Califormia, Los Angeles  Masters of Business Administration স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে MLM business এর ওপর থিসিস লিখে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। ২০০০ সালে ডেসটিনি নামে প্রতিষ্ঠিত ছোট্ট একটি কোম্পানিকে ২০১২ সালের মধ্যে ৩৪টি কোম্পানির সমন্বয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন। ব্যবসার সুবাদে ট্যাক্স ভ্যাট ইত্যাদি যাতে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা কর সরকারী কোষাগারে জমা দেন। ব্যক্তিগতভাবেও সরকারকে প্রচুর ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দেশের বেকারত্বতা বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রায় ৪৩ লাখ পঞ্চাশ হাজার ডিস্ট্রিবিউটর জড়িত। ব্যক্তি জীবনে তিনি ২ কন্যা সন্তানের জনক।