প্রধান উপদেষ্টা হবার খবর যেভাবে জানতে পেলেন ড. ইউনূস

- আপডেট সময় : ০৯:১১:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ ৭৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবার খবর প্রথম যেভাবে জানতে পারলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর তার প্রধান উপদেষ্টার হবার খবর ঘিরে জার্মানিতেও একটা চমৎকার সময় উপভোগ করেন নোবেল জয়ী।
তখন তিনি জার্মানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেই হাসপাতালের একজন নার্স ফুলের তোড়া উপহার দেন। ফুলের তোড়া উপহার পেয়ে কারণ জানতে চান ড. ইউনূস। তখন নার্স বলেন, আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর এই খবর সকল মিডিয়ায় দারুনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। খবর শুনে অনেক অবাকই হন এই অর্সনীতিবিদ।
সময়টা গেল বছর আগস্ট মাস। তিনি তখন সুদূর প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিৎিসাধীন। আর বাংলাদেশে তখন গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। অভ্যুত্থানের পরপরই তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পান। চলুন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুখেই প্রধান উপদেষ্টা হবার গল্পটা শুনে নিই।
সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফর করেন ড. ইউনূস। সফরকালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
রাখমান রিভিউ নামের পডকাস্ট অনুষ্ঠানে কথোপকথন লিখিত আকারে বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়। সেখানেই ড. ইউনূস বলেন, আমি যখন প্রথম ফোনকল পাই, তখন আমি প্যারিসের হাসপাতালে ছিলাম। আমার ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) ফোন দিল। যদিও আমি বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেসব খবর প্রতিদিন মুঠোফোনে দেখতাম। তখন তারা বলল, তিনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে, আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন। আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না।
কারা যোগাযোগ করেছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা। আমি তাদের কাউকেই চিনতাম না। কখনো তাদের সম্পর্কে শুনিনি। কাজেই আমি তাদের বিকল্প কাউকে খোঁজার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তাদের বলেছিলাম, বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন। তোমরা তাদের খুঁজে নাও। তারা বলছিল, না, না, না। আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কাউকে পাইনি।
আমি বলেছিলাম, আরও চেষ্টা করো। তারা বলল, তাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই। তখন বলেছিলাম, অন্তত একটা দিন চেষ্টা করো। না পেলে ২৪ ঘণ্টা পর আমাকে আবার ফোন করো।
তিনি বলেন, তারা (ছাত্রনেতারা) আবার আমাকে ফোন করল। বলল, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, দেখো, তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছো। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে। তোমরা সম্মুখসারিতে আছো।
যেহেতু তোমরা এসব করতে পেরেছো, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। আর এটাই সেই সময়। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তারা আর কোনো কথা বলেনি।
সেই দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ঘণ্টা দুয়েক পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন। তিনি আমাকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন ওই নার্স বললেন, আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আমরা এটা জানতাম না। আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা জানলাম।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এরও ঘণ্টা দুয়েক পর বোর্ড সদস্যরাদসহ হাসপাতালের প্রধান আসেন। তারা ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাকে শুভেচ্ছা জানান। সঙ্গে এটাও বলেন যে বিকেলের আগে আমাকে হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, পরে সকালে ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল আমাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে আসে। এটাই ছিল দেশে ফেরার আগের ঘটনাবলি। পুরো জাতি আমার ফেরার উড়োজাহাজের অপেক্ষায় ছিল।
বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে যাত্রা করেছিলাম। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) নতুন সরকারের রূপরেখা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। আমি বিমানবন্দর থেকেই জাতির সামনে ভাষণ দিলাম। সবাইকে ধৈর্য, শান্তি, একতা বজায় রাখতে বললাম। এটাই ছিল পুরো ঘটনার শুরু।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়।