নজির গড়ে ভূ-স্বর্গে গতিশীল উন্নয়নের এক বছর
- আপডেট সময় : ০৭:০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ অগাস্ট ২০২০ ৪৮৯ বার পড়া হয়েছে
তরুণ উদ্যোক্তা ঋণ নিয়ে কারখানা স্থাপন করে নিজের ও অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হওয়ার এক বছরে এটি স্পষ্ট যে, এই অর্থনৈতিক গতি, গণতান্ত্রিক নীতিসমূহের গভীরতরকরণ এবং উন্নয়নই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের এক বছরে জম্মু ও কাশ্মীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন অনুভব করছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার আদিম উপত্যকায় অবস্থিত একটি পোশাক প্রস্তুতকারী কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার মাস্ক তৈরি হচ্ছে। জহুর আহমদ নামে এক যুবক ওই কারখানার মালিক। জহুর আহমদ এবং তার কারখানায় নিযুক্ত অন্যান্য তরুণরা প্রধানমন্ত্রীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পের (পিএমইজিপি) সুবিধাভোগী। পিএমইজিপি হলো এক বছর আগে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার পরে জম্মু ও কাশ্মীরে চালু করা অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। এটি একটি ঋণ-সংযুক্ত ভর্তুকি কর্মসূচি যার লক্ষ্য ঐতিহ্যবাহী কারিগর এবং বেকার যুবকদের ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এই প্রকল্পের আওতায় জহুর আহমদের মতো অনেক তরুণ উদ্যোক্তা ঋণ নিয়ে কারখানা স্থাপন করে নিজের ও অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হওয়ার এক বছরে এটি স্পষ্ট যে, এই অর্থনৈতিক গতি, গণতান্ত্রিক নীতিসমূহের গভীরতরকরণ এবং উন্নয়নই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
যুবসমাজের সম্ভাবনার ব্যবহার
ভারতে অন্যান্য অঞ্চলের মতোই জম্মু ও কাশ্মীরে তরুণদের বিশাল অংশ রয়েছে। এই তরুণ জনগোষ্ঠী বিগত বছরে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তাদের প্রতি নতুনভাবে মনোযোগ দেয়ার সুবিধাভোগী হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ২৫ হাজার আসনসম্বলিত নতুন ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৪ হাজার অতিরিক্ত মেডিকেল / প্যারামেডিকেল আসনযুক্ত সাতটি নতুন মেডিকেল কলেজ, পাঁচটি নতুন নার্সিং কলেজ এবং একটি সরকারি ক্যান্সার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে নতুন দু’টি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও চিকিৎসা শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গতা দিয়েছে। গত এক বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষার জন্য সরকারি বৃত্তি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ভারতীয় সংবিধানের ২১-এ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ‘শিক্ষার অধিকার’ এর আওতায় জম্মু ও কাশ্মীরে শিক্ষা খাতে এই নবায়নযোগ্য শক্তিটি প্রবাহিত হয়েছে। সংবিধানের ২১-এ অনুচ্ছেদের এই প্রয়োগ অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার একটি স্বাভাবিক পরিণতি। আজকে জম্মু ও কাশ্মীরে জন্মগ্রহণকারী প্রতিটি শিশু ভারতের অন্যান্য রাজ্যের শিশুদের মতো সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত শিক্ষার এই মৌলিক অধিকার পাবে।
যুবকদের কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ সম্প্রসারণের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে দু’টি নতুন আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়াও স্টার্ট-আপ নীতিমালার অধীনে গবেষণা, উন্নয়ন এবং বিপণনের জন্য ১২টি সম্ভাবনাময় স্টার্ট-আপ কোম্পানিতে ১.২ কোটি রুপি বরাদ্দ হয়েছে যা তাদের উদ্ভাবনে সহায়তা করছে। এগুলোসহ দু’টি আবিষ্কার, উদ্ভাবন, ইনকিউবেশন এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (সিআইআইআইটি), আইআইটিসমূহ (ভারতীয় প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট) এবং আইআইএসইআর (ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্ট-আপ এবং আইটি বিভাগে তরুণদের অমিত সম্ভাবনাকে সফল করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারতে ইতোমধ্যে স্টার্ট-আপস, ভেনচার ক্যাপিটালিস্ট এবং অ্যাঞ্জেল ফান্ডগুলির একটি বাস্তুতন্ত্র রয়েছে যা তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশের নেতৃত্ব দিয়েছে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তি খাতে বেঙ্গালুরুর মতো শহরগুলির তালিকায় শ্রীনগর যুক্ত হতে খুব বেশি দেরি নেই।
জবাবদিহি সহকারে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা
সময়ের দাবি অনুসারে আইন প্রণয়ন করা কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের আইনসভার অন্যতম দায়িত্ব। যে ভারতীয় সংবিধান বহু বছর ধরে সমস্ত ভারতীয় নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং সুরক্ষা প্রদান করে আসছে, তা নারী, শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিতদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণ করে এমন অনেক আইন প্রণয়ন করেছে। তবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ দ্বারা তৈরি হওয়া ব্যতিক্রমের কারণে জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকরা এই অধিকারগুলি ভোগ করতে পারেনি। তবে অনুচ্ছেদটি বাতিল করে কিশোর ন্যায়বিচার (শিশুদের যত্ন এবং সুরক্ষা) আইন ২০১৫; বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯; পারিবারিক সহিংসতা থেকে মহিলাদের সুরক্ষা আইন ২০০৫; তথ্য অধিকার আইন ২০০৫ ইত্যাদির মত এর মতো ইতিবাচক আইনগুলো জম্মু ও কাশ্মীরের প্রযোজ্য হয়েছে। এটি জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের বিশেষত মহিলা, শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা নিয়ে এসেছে। এই অধিকার প্রয়োগকারী আইনগুলির সম্প্রসারণের তাৎক্ষণিক ফল হল গণতন্ত্রের অনুশীলনে জনগণের উৎসাহী অংশগ্রহণ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত ব্লক উন্নয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোটার তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে ভোট প্রদান করেন। একই নির্বাচনে মহিলাদের সংরক্ষিত আসনের কারণে অনেক নারী প্রার্থীদেরও নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেখা যায়।
এই নির্বাচনের পর সরকার গ্রামে ফিরে চল কর্মসূচি চালু করে। তৃণমূলের সমস্যাগুলি বোঝার জন্য সরকারি কর্মকর্তারা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রতিটি পঞ্চায়েতে পৌঁছেছেন। এসব গ্রামের উন্নয়ন প্রয়োজনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পরে, সরকার ২০ হাজার উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করে। এই প্রকল্পের সাফল্য দৃশ্যমান কারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক সংস্থা একসাথে ইতোমধ্যে সাত হাজারেরও বেশি কাজ সম্পন্ন করেছে। পঞ্চায়েতদের শক্তিশালীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন প্রতিটি পঞ্চায়েতের সামনে অভিযোগ বাক্স স্থাপন, অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা, বাড়তি বরাদ্দ ইত্যাদি স্থানীয় সরকার এবং জনগণের অংশগ্রহণকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ২০২০ সালের এপ্রিলে পঞ্চায়েত রাজ প্রতিষ্ঠানের অসামান্য অবদানের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের পঞ্চায়েতরা তিনটি জাতীয় পুরষ্কার জিতেছিল।
অর্থনৈতিক পট পরিবর্তন
জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার এ অঞ্চলের সুপ্ত উৎপাদন ও শিল্প সম্ভাবনার স্বীকৃতিস্বরুপ প্রথম গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিট আয়োজন করতে চলেছে। কোভিড-১৯ এই সম্মেলন কিছুটা বিলম্বিত করার পরেও, নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত প্রাক-সম্মেলন এবং বেঙ্গালুরু, কলকাতা এবং অন্যান্য শহরগুলিতে অনুষ্ঠিত রোড শোগুলোতে বিনিয়োগকারী সম্প্রদায়ের আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। এই ইভেন্টগুলিতে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপি মূল্যের ১৬৮টিরও বেশি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকার কর্তৃক একটি সক্ষম নীতি এবং নিয়ন্ত্রক পরিবেশ সরবরাহের কারণে বিশিষ্ট শিল্প গোষ্ঠীগুলি এই সুন্দর অঞ্চল এবং এর পরিশ্রমী মানুষগুলির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কথা ভাবছে। বিনোদন, পর্যটন, উৎপাদন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ১৪টি খাতে উল্লেখযোগ্যভাবেই দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
এই বেসরকারি শিল্পের আগ্রহের অন্যতম কারণ হল অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলি এবং স্মার্ট সিটি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পাদনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান। সাত হাজার কোটি রুপির একটি প্যাকেজের আওতায় জম্মু ও শ্রীনগরের শহরগুলি আধুনিক, টেকসই স্মার্ট শহরে রূপান্তরিত হতে চলেছে। একটি রেল ট্রানজিট সিস্টেম, আবাসন এবং জনপদ নীতিও গ্রহণ করা হয়েছে এই শহরগুলির বিকাশের জন্য। শহরের উন্নয়নের সাথে সাথে গ্রামগুলিতেও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। ৭০ বছরে প্রথমবারের মতো, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তিন লাখেরও বেশি পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। “জল জীবন” মিশনের আওতায় প্রায় তিন লাখ পরিবারে পানির সংযোগ বাড়িয়েছে এবং ২০২২ সালের মধ্যে সবার কাছে সংযোগ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
ভৌগোলিক স্বীকৃতি (জিআই ট্যাগ) প্রাপ্ত কাশ্মীরি জাফরানের প্রাপ্তিস্থান জম্মু-কাশ্মীর। জিআই ট্যাগ প্রাপ্তি এবং জাতীয় জাফরান মিশনের আওতায় জম্মু-কাশ্মীরের পাম্পোরে আন্তর্জাতিক কাশ্মীরি জাফরান ট্রেডিং সেন্টার স্থাপনের সাথে সাথে কৃষকদের তাদের পণ্য সংগ্রহ, প্যাকেজিং, বিপণনের জন্য আরও উন্নততর প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে কৃষকরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। জম্মু-কাশ্মীরের কৃষকদের জাতীয় ই-কৃষি বাজারে (ই-এনএএম) যুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই উন্নত প্রবেশাধিকার কৃষকদের জন্য লাভজনক হয়েছে। আপেল এবং জাফরানসহ কাশ্মীরি পণ্যসমূহ শীঘ্রই সারা বিশ্বের খাবার টেবিলগুলিতে শোভা পাবে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম প্রতিক্রিয়া কোভিড-১৯ আসার আগেই জম্মু-কাশ্মীরের স্বাস্থ্য বিভাগ নাগরিকদের স্বাস্থ্য কভারেজ সরবরাহের জন্য অভিযান চালিয়েছিল। আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য কভারেজ স্কিম) চালু করার আগে জম্মু-কাশ্মীরে তেমন কোনও স্কিমের অস্তিত্ব ছিল না। এটি উদ্বোধনের প্রথম দিনগুলিতেও স্পষ্ট হয়েছিল যে এই জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পের একটি বিশাল চাহিদা ছিল। আরোগ্য যোজনা চালু হওয়ার প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে, চিকিৎসার প্রয়োজনে আর্থিক সুরক্ষা প্রদানের জন্য ১০ লাখ স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হয়েছিল।
ভবিষ্যৎ ভাবনা
অনুচ্ছে ৩৭০ বাতিল হওয়ার এক বছর পরই জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে এটি তাদের বিশাল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংযুক্ত করেছে এবং এখানের উৎপাদন ও শিল্পকে সম্প্রসারণের জন্য বিনিয়োগ এনেছে। উন্নততর শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগগুলি যুবসমাজকে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের সমৃদ্ধির নিয়ন্ত্রক হতে সহায়তা করছে। সুবিধাবঞ্চিত, মহিলা ও শিশুদের জন্য ইতিবাচক আইন প্রসারণের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের এই আকাঙ্ক্ষিত গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নতি বয়ে আনছে। সেই দিনগুলি গিয়েছিল যেখানে সন্ত্রাসবাদের অনিচ্ছাকৃত অনুপ্রেরকরা যুবসমাজকে ধ্বংসাত্মক সহিংসতার দিকে ঝুঁকতে চেষ্টা করেছিল। শত্রুদের দ্বারা সন্ত্রাসবাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংসাত্মক সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়ার দিনগুলি গত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং এর জনগণ আজ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে।