হেফাজত ধর্মকে ব্যবহার করে জামায়াতের ধারায় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায়
- আপডেট সময় : ০৯:২৪:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল ২০২১ ২৭৫ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের মতো একই ধারায় ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে চায়। যা সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতের তাণ্ডব ও কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত পরিষ্কার। স্বাধীনতা মানে না বলেই তারা সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার চেষ্টা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করা।
মন্ত্রী বলেন, জামায়াত ইসলাম ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য ইসলামকে ব্যবহার করে। এটা জাতির কাছে স্পষ্ট। হেফাজতে ইসলাম একই ধারায় ইসলামকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে, এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং ভুল ধারণা ছিল। গত কিছুদিনের ঘটনা, যেমন ভাস্কর্য বিষয়ে তাদের অবস্থান এবং উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা যখন বলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকবে না, তারা কিন্তু বলেনি কোনো ভাস্কর্য থাকবে না।
যারা জাতীয় সঙ্গীত মানে না, জাতির পিতাকে মানে না, সংবিধান মানে না তাদের ছাড় দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে প্রতারণা। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আগে আরও দুই বার বাংলাদেশে এসেছিলেন।
তখন হেফাজতকে কোথাও দেখা যায়নি। এবার তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার জন্যই মোদীর বিরোধিতার কথা বলে সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিলম্বে হলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা যেন ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করতে না পারে সে ব্যবস্থাই সরকার করবে।
শুক্রবার বিকেলে ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্তব্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। হেফাজতের বর্তমান আমির বাবুনগরী জামায়াতের প্রতিনিধি। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির পরেও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
হেফাজত-এর নেতৃবৃন্দের বড় অংশ ১৯৭১-এ স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান কমিটির অধিকাংশ জামায়াত-এর রাজনীতির সাথে যুক্ত। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনীতিতে যুক্ত। মোদীবিরোধী বিক্ষোভ ছিল মূলত বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী নস্যাৎ করার চক্রান্ত।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘হেফাজত ও জামায়াত ধর্মের লেবাসধারী পাকিপন্থার নব্য রাজাকারচক্রের সংগঠন। তারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয় ও তারা দ্বৈতনীতি অবলম্বন করে। তারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয় এবং গোপনে সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশবিরোধী কখনও প্রকাশ্যে, কখনও সশস্ত্রভাবে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে।
রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং সন্ত্রাসের দায়ে বাবুনগরী, মামুনুলসহ সকল নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। সকল মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সকল মসজিদে রাজনৈতিক বক্তব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘হেফাজত যদি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকে, তাহলে মাদ্রাসায় বাচ্চাদের ভর্তি করে আমরা কেন তাদের সদস্য তৈরি করে দিচ্ছি? মাদ্রাসাগুলো থেকে আমরা দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছি না। দারিদ্রতার কারণে বাবা মা তাদের কোমলমতি শিশুদের মাদ্রাসায় পাঠায়।
আমরা দরিদ্র মা-বাবাদের সন্তানের জন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-হোস্টেল এগুলো তৈরি করছি না। হেফাজত-এ ইসলাম এদেশের ভালো ও শক্তিশালী সবকিছুরই বিরোধিতা করে। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ রোধ করতে আমরা যেসব সুপারিশ করেছিলাম সেগুলোর অধিকাংশই সরকার গ্রহণ করে নি।
সভাপতির সূচনা বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের মৌলবাদী সন্ত্রাসী রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধকরণের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী সন্ত্রাসী উত্থানের পর থেকে আমরা ক্রমাগত বলছি জামায়াত ও হেফাজতকে পৃথক দল কিংবা পরস্পরবিরোধী মনে করার কোনও কারণ নেই।
হেফাজতের ১৩ দফা জামায়াতেরই পুরনো দাবি। মুক্তিযুদ্ধকালে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতারা নেজামে ইসলামের নেতৃত্বে ছিলেন, যে দল এবং তাদের ঘাতক বাহিনী জামায়াতের চেয়ে কম নৃশংস ছিল না।
’৭১-এ যে ভাষায় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালিদের ‘কাফের’, ‘দুষ্কৃতকারী’, ‘ভারতের এজেণ্ট’, ‘ইসলাম ও পাকিস্তানের দুষমন’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল, এখন তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তরসূরিরা আরও ভয়ঙ্কর ভাষায় ভিন্নমত ও ভিন্নধর্মের মানুষের উপর হামলাসহ এবং যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
ওয়েবিনারে আরও যুক্তছিরেন, সমাজকর্মী রাশেক রহমান, ব্লগার এ্যাণ্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক’র সভাপতি ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, ওয়ান বাংলাদেশ’র সভাপতি অধ্যাপক রাশেদুল হাসান, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্ক’র সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, গৌরব ’৭১’র সাধারণ সম্পাদক এম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’র সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।