তেলাপোকায় ছড়াচ্ছে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া!

- আপডেট সময় : ১০:১৫:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩ ৩৫ বার পড়া হয়েছে

গবেষণায় পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার ৩০ দশমিক ৮ শতাংশই ই.কোলাই। ২৫ শতাংশ ক্লেবসিয়েলা, ১৯ শতাংশ সেরাটিয়া, ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সালমোনেলা, ৭ দশমিক ৭ শতাংশ সিউডোমোনাস এবং ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এন্টারোব্যাক্টর ও প্রোটিয়াস প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া
হাসপাতাল থেকে আরশোলা দমন জরুরি। এ দমন প্রক্রিয়া যেন রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে নজর দিতে হবে
অনলাইন ডেস্ক
তেলাপোকার যন্ত্রণার মুখোমুখি হন না এমন মানুষের সংখ্যা কম। একটি স্ক্যাভেঞ্জিং পোকা যা একটি বীটলের মতো, লম্বা অ্যান্টেনা এবং পা এবং সাধারণত একটি প্রশস্ত, চ্যাপ্টা দেহ। বেশ কয়েকটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ধরণের গৃহস্থালী কীটপতঙ্গ হিসাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তেলাপোকাকে আরশোলাও বলা হয়। এই তেলাপোকায় মিললো মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি! বাংলাদেশের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ছে এই ব্যাকটেরিয়া। যা কিনা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর একটি ব্যাকটেরিয়া।
যে কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সুস্থ হতে লম্বা সময় লাগছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিকিৎসা ব্যয়, স্বাস্থ্য ও মৃত্যুঝুঁকি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষকের গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে এসেছে।
সময়টা ২০২১ সাল। সে বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন, অর্থোপেডিক ও সার্জারি এই তিন ওয়ার্ডে আরশোলা নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করেন রাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিকৃষ্ণ মহন্ত। রাবির বিজ্ঞান অনুষদ থেকে প্রকাশিত ‘জার্নাল অব সায়েন্টিফিক রিসার্চ’-এ মে সংখ্যায় গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ড. মনিকৃষ্ণ মহন্ত সংবাদমাধ্যমকে জানান, গবেষণার জন্য তারা হাসপাতালের ওয়ার্ড তিনটির রোগীদের খাবারের ক্যাবিনেট, আলমারি ও শৌচাগার থেকে আরশোলা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনার মাইক্রোবায়োলজিক্যাল বিশ্লেষণ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জেনেটিকস অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি গবেষণাগারে।
এ তিন ওয়ার্ডে পাওয়া আরশোলা থেকে ৫২ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া আলাদা করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন ওয়ার্ডে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে ৩৮ শতাংশ। অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ৩৫ ও সার্জারি ওয়ার্ডে ২৭ শতাংশ।
প্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়ার ৩০ দশমিক ৮ শতাংশই ই.কোলাই। ২৫ শতাংশ ক্লেবসিয়েলা, ১৯ শতাংশ সেরাটিয়া, ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সালমোনেলা, ৭ দশমিক ৭ শতাংশ সিউডোমোনাস এবং ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এন্টারোব্যাক্টর ও প্রোটিয়াস প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া।
প্রচলিত ১৮টি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এসব ব্যাকটেরিয়ার পরীক্ষা চালানো হয়।
এর মধ্যে সালমোনেলা, এন্টারোব্যাক্টর ও প্রোটিয়াস প্রতিটি প্রজাতি পরীক্ষিত অ্যান্টিবায়োটিকের অর্ধেকই প্রতিরোধী। ক্লেবসিয়েলা, সেরাটিয়া ও সিউডোমোনাস প্রজাতিগুলো ৫৫ শতাংশের ওপরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।
ড. মনিকৃষ্ণ মহন্ত বলেন, সামগ্রিকভাবে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট, ৪২ দশমিক ১ শতাংশ সংবেদনশীল ও ৫ দশমিক ৬ শতাংশ পরীক্ষিত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। ফলে এসব আরশোলা মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকির কারণ।
তার ভাষায় বলেন, এখনকার দিনে বিশ্বজুড়েই অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ায় দীর্ঘ সময় রোগীদের হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। আবার রোগীর মৃত্যুহারও দীর্ঘ হচ্ছে।
হাসপাতাল থেকে আরশোলা দমন জরুরি। তবে এ দমন প্রক্রিয়া যেন রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকেও নজর রাখতে হবে বলে জানন এই গবেষক।