ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠ ছিলেন হেলাল হাফিজ: ড. ইউনূস ৭১’র স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির চক্রান্ত প্রতিহতের আহ্বান ইউনূসের বাংলাদেশের মসজিদ-মন্দির গির্জায় কোন পাহারা বসাতে হবে না ভারত থেকে ট্রেনে লপা ৪৬৮ টন আলু আমদানি দেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে ড. ইউনূস জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট প্রকাশের অনুমোদন পেলো ভারত বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু বানাচ্ছে: বিজন কান্তি সরকার ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে ড. ইউনূসের বৈঠক, তাৎক্ষণিক সমাধানে প্রকৃত তথ্য জানতে হবে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে প্রতিহত করতে হবে: প্রধান বিচারপতির হাসিনা সরকার আমলে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার!

তিনটি উপাদানের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় কর্তৃত্ববাদী শাসক: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৪৫:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ৩০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

মিথ্যা বয়ান, ভয়ের পরিবেশ ও উন্নয়ন আচ্ছন্নতায়

মি. ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক মাস আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা কীভাবে দেড় দশকের

কর্তৃত্ববাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে

 

বাংলাদেশে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো মি. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, তিনটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে কর্তৃত্ববাদী শাসক তৈরি হয়। প্রথমত, মিথ্যা বয়ান, দ্বিতীয়ত, ভয়ের পরিবেশ এবং তৃতীয়ত উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। এই তিনটিই হলো কর্তৃত্ববাদী শাসকের মূল উপাদান।

সোমবার ঢাকায় তিন দিনব্যাপী বে অব বেঙ্গল কনভার্সন বা বঙ্গোপসাগর সংলাপের সমাপনী দিনের আলোচনা সভার এক অধিবেশনে একক বক্তায় এ কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) তিন দিনব্যাপী এই সংলাপের আয়োজন করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত অর্থনীতিসংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

মি. ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক মাস আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা কীভাবে দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসক ভিন্নমতের গোষ্ঠীকে দমন করে। সবকিছু নিজের কর্তৃত্বে রাখতে চায়। এমনকি সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজেদের (কর্তৃত্ববাদী) সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, মিথ্যা শুরু হয় তথ্যের বিচ্যুতি দিয়ে। যেমন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের ফোলানো-ফাঁপানো সংখ্যা দেখানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় জিডিপি ও প্রবৃদ্ধিতে একই অবস্থা দেখানো হয়। এ ছাড়া কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে।

যেখানে আপনি নিজের সামাজিক অবস্থান হারাবেন, নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলবেন, নিজের নিরাপত্তা হুমকিতে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি কিছু বলেন, তাহলে আপনাকে তুলে নেওয়া হবে, আপনার আত্মীয়স্বজন আপনাকে খুঁজে পাবেন না। আমরা বাংলাদেশে আয়নাঘরের কথা শুনেছি।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসকদের কিছু উন্নয়ন দেখাতে হয়। এটি উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। উন্নয়নের সুফল সব শ্রেণির মানুষের কাছে যায় না। তবে কর্তৃত্ববাদী শাসক অলিগার্ক তৈরি করে। রাজনীতিবিদেরা মনে করেন, তারা অলিগার্কদের সৃষ্টি করেছেন। একটা সময় দেখা যায়, অলিগার্করা শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সমস্যা হলো, উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় না। বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়। দিন শেষে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ দেওয়া যায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সরকারি অর্থ দেওয়া যায় না। ঠিক এটাই ঘটেছে বাংলাদেশে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়, যা বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

কেন সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে এত কিছু হলো? পর্যাপ্ত বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায় অর্থনীতি টেকসই হয়নি। ফলে বেসরকারি খাত কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি পার্টির ক্যাডারে পরিণত হয়ে গেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিশ্র অভিজ্ঞতা আছে। আরব বসন্ত-পরবর্তী পরিস্থিতি দেখেছি। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং কিছু ক্ষেত্রে সাবসাহারা দেশগুলোয় সফল গণতন্ত্রে উত্তরণ দেখেছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

তিনটি উপাদানের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় কর্তৃত্ববাদী শাসক: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আপডেট সময় : ১১:৪৫:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

 

মিথ্যা বয়ান, ভয়ের পরিবেশ ও উন্নয়ন আচ্ছন্নতায়

মি. ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক মাস আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা কীভাবে দেড় দশকের

কর্তৃত্ববাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে

 

বাংলাদেশে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো মি. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, তিনটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে কর্তৃত্ববাদী শাসক তৈরি হয়। প্রথমত, মিথ্যা বয়ান, দ্বিতীয়ত, ভয়ের পরিবেশ এবং তৃতীয়ত উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। এই তিনটিই হলো কর্তৃত্ববাদী শাসকের মূল উপাদান।

সোমবার ঢাকায় তিন দিনব্যাপী বে অব বেঙ্গল কনভার্সন বা বঙ্গোপসাগর সংলাপের সমাপনী দিনের আলোচনা সভার এক অধিবেশনে একক বক্তায় এ কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) তিন দিনব্যাপী এই সংলাপের আয়োজন করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত অর্থনীতিসংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

মি. ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক মাস আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা কীভাবে দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসক ভিন্নমতের গোষ্ঠীকে দমন করে। সবকিছু নিজের কর্তৃত্বে রাখতে চায়। এমনকি সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজেদের (কর্তৃত্ববাদী) সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, মিথ্যা শুরু হয় তথ্যের বিচ্যুতি দিয়ে। যেমন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের ফোলানো-ফাঁপানো সংখ্যা দেখানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় জিডিপি ও প্রবৃদ্ধিতে একই অবস্থা দেখানো হয়। এ ছাড়া কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে।

যেখানে আপনি নিজের সামাজিক অবস্থান হারাবেন, নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলবেন, নিজের নিরাপত্তা হুমকিতে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি কিছু বলেন, তাহলে আপনাকে তুলে নেওয়া হবে, আপনার আত্মীয়স্বজন আপনাকে খুঁজে পাবেন না। আমরা বাংলাদেশে আয়নাঘরের কথা শুনেছি।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসকদের কিছু উন্নয়ন দেখাতে হয়। এটি উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। উন্নয়নের সুফল সব শ্রেণির মানুষের কাছে যায় না। তবে কর্তৃত্ববাদী শাসক অলিগার্ক তৈরি করে। রাজনীতিবিদেরা মনে করেন, তারা অলিগার্কদের সৃষ্টি করেছেন। একটা সময় দেখা যায়, অলিগার্করা শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সমস্যা হলো, উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় না। বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়। দিন শেষে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ দেওয়া যায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সরকারি অর্থ দেওয়া যায় না। ঠিক এটাই ঘটেছে বাংলাদেশে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়, যা বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

কেন সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে এত কিছু হলো? পর্যাপ্ত বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায় অর্থনীতি টেকসই হয়নি। ফলে বেসরকারি খাত কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি পার্টির ক্যাডারে পরিণত হয়ে গেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিশ্র অভিজ্ঞতা আছে। আরব বসন্ত-পরবর্তী পরিস্থিতি দেখেছি। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং কিছু ক্ষেত্রে সাবসাহারা দেশগুলোয় সফল গণতন্ত্রে উত্তরণ দেখেছি।