ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫ ৭৩ বার পড়া হয়েছে

ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমিনুল হক, ঢাকা

বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ শাহজাহানপুর কোরবানির পশুর হাটে পা রাখতেই বোঝা গেলো ক্রেতার পদচারণা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পশুর কারবারিদেরও ব্যস্ত হয়ে ওঠতে দেখা গেলো। তারা ক্রেতাদের আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। গত প্রায় তিনদিন আগে থেকেই এই হাটে পশু আসতে শুরু করেছে। তবে, বেচাকেনার পালে হাওয়া লাগে মঙ্গলবার। বেশ কয়েকজনকে দেখা গেলো কোরবানির পশু কিনে উৎফুল্ল মনে বাড়ি ফিরছেন। উত্তর দিক থেকে হাটে প্রবেশের পথে কথা হলো ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। জামালপুরের মেলান্দ থেকে ১৩টি গরু নিয়ে এসেছেন। তার আশা এবারে ভালোই দাম মিলবে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালেই হাটে পৌছান এই ব্যবসায়ী। প্রায় সাড়ে তিন মন সাইজের গরুর দাম হাকেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে, এটি ১০ হাজার টাকা কম হলেও বিক্রি করবেন এই পশু ব্যবসায়ী। এই হাটে পশুর দাম চড়া হলে অপর পাইকারদের খবর দেওয়ার কথা জানান মোশাররফ। এবছর কোরবানির জন্য প্রয়োজন হবে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৮টি পশু। এসব পশু তৈরি আছে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট
ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট

এবারে সামনে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো মনির নামের এক ক্রেতা ৯০ হাজার টাকায় পছন্দ সই গরু কিনেছেন। অনুমান সাড়ে তিনমনের বেশি ছাড়া কম মাংস হবে না। হাসিল পরিশোধের কাউন্টারে দেখা গেলো ১ লাখ ১০ টাকায় প্রায় সাড়ে চার মন ওজনের গরু কিনেছেন একজন ক্রেতা। অবস্থা দেখে মনে হলো গতকাল পর্যন্ত কোরবানির পশু বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই খুশি। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আজ বুধবার থেকে বেচাকেনা আরও বাড়বে।

ঝিনাইদহের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ১০ মনের অধিক ওজনের গরু নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার গরুটির দিকে মমতা ভরা চোখে তাকাচ্ছিলেন। এই গরুটি সন্তানের মতো ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেছেন। জানালেন, গরুটির দাম ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন। কোরবানির ঈদে ঢাকায় গরুর বাজারে দাম ওঠে ঈদের একদিন আগে এবং চাঁদরাতে। কারণ, ঢাকায় অতিকাংশ ক্রেতারই গরু রাখার জায়গার অভাব। একারণে চাঁদরাতে পশু কিনে সকালে কোরবানি করেন।

শাহজাহানপুর পশুর হাটে আমদানি বেশ ভালো। এখানে ২৪ ঘন্টা পশু ডাক্তার, ব্যাংক লেনদেন হাটের মুঠোয়। পশু বিক্রির টাকা নিয়ে নিরাপত্তহীনতার কোন চাপ নেই। ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের বুথ রয়েছে। ব্যাংকের লোকজন দু’বাহু বাড়িয়ে দিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের সেবায়। পশু বিক্রির টাকা ব্যাংক জমা করে নিশ্চিন্তে বাড়ির পথে পা ফেলতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধার জন্য ইজাদারদের প্রতি কৃতজ্ঞা জানান ব্যবসায়ীরা। শাহজাহানপুর হাটে রয়েছে, পুলিশ-র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম।

রয়েছে, একাধিক পশু চিকিৎসক। চিকিৎসক আবদুর শুকুর খান জানালেন, তারা ৫ সদস্যের একটি দল রাত-দিন পশুর সেবায় নিয়োজিত। এখানে নামী-দামি ওষুধ কোম্পানির ওষুধও রয়েছে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গুরু নিয়ে হাটে পৌছান। তাতে করে গরুর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এরমধ্যে বদহজম, সর্চি-কাশি, পাতলা পায়খানাসহ নানা রকমের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। একজন গরু ব্যবসায়ীকে ওষুধ কিনে নিতে দেখা যায়। জানা গেলো, তার গরুর বদহজম হয়েছে।

ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট
ব্যবসায়ী আবদুস সালাম

সেখান থেকে পশ্চিম পাশে সরে এসে খাসির বিক্রির জায়গায় এসে দেখা গেলো, প্রচুর খাসির আমদানি হয়েছে। ২৬টি খাসি নিয়ে রংপুর থেকে এসেছেন রাসেল। জানালেন, এখনও কোন খাসি বিক্রি হয়নি। তার আশা গত বারের চেয়ে বাজার ভালো হবে। রাসেলের সঙ্গে আলাপ শেষ করে মোড় ঘুরতেই দেখা গেলো ৩০-৩৫ বছরের এক ব্যবসায়ী হাসিমাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

এগিয়ে তার কাছে যেতেই সালাম দিলেন। চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ১৭০ পশু নিয়ে শাহজাহানপুর হাটে এসেছেন।এরমধ্যে ১৫০টি খাসি এবং বাকী ২০টি গাড়ল। বয়সের অর্ধেক সময় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সালাম। ভবিষ্যতে একটি খামার করার ইচ্ছে। এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। নিজে লেখাপড়ায় এগুতে না পারলেও সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে চান এই ব্যবসায়ী। খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন শাহজাহানপুর হাটের ইজারাদার সিকদার কনস্ট্রাকশন। এ বছর হাটের ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৪ টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

আমিনুল হক, ঢাকা

বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ শাহজাহানপুর কোরবানির পশুর হাটে পা রাখতেই বোঝা গেলো ক্রেতার পদচারণা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পশুর কারবারিদেরও ব্যস্ত হয়ে ওঠতে দেখা গেলো। তারা ক্রেতাদের আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। গত প্রায় তিনদিন আগে থেকেই এই হাটে পশু আসতে শুরু করেছে। তবে, বেচাকেনার পালে হাওয়া লাগে মঙ্গলবার। বেশ কয়েকজনকে দেখা গেলো কোরবানির পশু কিনে উৎফুল্ল মনে বাড়ি ফিরছেন। উত্তর দিক থেকে হাটে প্রবেশের পথে কথা হলো ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। জামালপুরের মেলান্দ থেকে ১৩টি গরু নিয়ে এসেছেন। তার আশা এবারে ভালোই দাম মিলবে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালেই হাটে পৌছান এই ব্যবসায়ী। প্রায় সাড়ে তিন মন সাইজের গরুর দাম হাকেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে, এটি ১০ হাজার টাকা কম হলেও বিক্রি করবেন এই পশু ব্যবসায়ী। এই হাটে পশুর দাম চড়া হলে অপর পাইকারদের খবর দেওয়ার কথা জানান মোশাররফ। এবছর কোরবানির জন্য প্রয়োজন হবে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৮টি পশু। এসব পশু তৈরি আছে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট
ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট

এবারে সামনে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো মনির নামের এক ক্রেতা ৯০ হাজার টাকায় পছন্দ সই গরু কিনেছেন। অনুমান সাড়ে তিনমনের বেশি ছাড়া কম মাংস হবে না। হাসিল পরিশোধের কাউন্টারে দেখা গেলো ১ লাখ ১০ টাকায় প্রায় সাড়ে চার মন ওজনের গরু কিনেছেন একজন ক্রেতা। অবস্থা দেখে মনে হলো গতকাল পর্যন্ত কোরবানির পশু বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই খুশি। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আজ বুধবার থেকে বেচাকেনা আরও বাড়বে।

ঝিনাইদহের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ১০ মনের অধিক ওজনের গরু নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার গরুটির দিকে মমতা ভরা চোখে তাকাচ্ছিলেন। এই গরুটি সন্তানের মতো ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেছেন। জানালেন, গরুটির দাম ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন। কোরবানির ঈদে ঢাকায় গরুর বাজারে দাম ওঠে ঈদের একদিন আগে এবং চাঁদরাতে। কারণ, ঢাকায় অতিকাংশ ক্রেতারই গরু রাখার জায়গার অভাব। একারণে চাঁদরাতে পশু কিনে সকালে কোরবানি করেন।

শাহজাহানপুর পশুর হাটে আমদানি বেশ ভালো। এখানে ২৪ ঘন্টা পশু ডাক্তার, ব্যাংক লেনদেন হাটের মুঠোয়। পশু বিক্রির টাকা নিয়ে নিরাপত্তহীনতার কোন চাপ নেই। ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের বুথ রয়েছে। ব্যাংকের লোকজন দু’বাহু বাড়িয়ে দিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের সেবায়। পশু বিক্রির টাকা ব্যাংক জমা করে নিশ্চিন্তে বাড়ির পথে পা ফেলতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধার জন্য ইজাদারদের প্রতি কৃতজ্ঞা জানান ব্যবসায়ীরা। শাহজাহানপুর হাটে রয়েছে, পুলিশ-র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম।

রয়েছে, একাধিক পশু চিকিৎসক। চিকিৎসক আবদুর শুকুর খান জানালেন, তারা ৫ সদস্যের একটি দল রাত-দিন পশুর সেবায় নিয়োজিত। এখানে নামী-দামি ওষুধ কোম্পানির ওষুধও রয়েছে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গুরু নিয়ে হাটে পৌছান। তাতে করে গরুর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এরমধ্যে বদহজম, সর্চি-কাশি, পাতলা পায়খানাসহ নানা রকমের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। একজন গরু ব্যবসায়ীকে ওষুধ কিনে নিতে দেখা যায়। জানা গেলো, তার গরুর বদহজম হয়েছে।

ঢাকায় জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট
ব্যবসায়ী আবদুস সালাম

সেখান থেকে পশ্চিম পাশে সরে এসে খাসির বিক্রির জায়গায় এসে দেখা গেলো, প্রচুর খাসির আমদানি হয়েছে। ২৬টি খাসি নিয়ে রংপুর থেকে এসেছেন রাসেল। জানালেন, এখনও কোন খাসি বিক্রি হয়নি। তার আশা গত বারের চেয়ে বাজার ভালো হবে। রাসেলের সঙ্গে আলাপ শেষ করে মোড় ঘুরতেই দেখা গেলো ৩০-৩৫ বছরের এক ব্যবসায়ী হাসিমাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

এগিয়ে তার কাছে যেতেই সালাম দিলেন। চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ১৭০ পশু নিয়ে শাহজাহানপুর হাটে এসেছেন।এরমধ্যে ১৫০টি খাসি এবং বাকী ২০টি গাড়ল। বয়সের অর্ধেক সময় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সালাম। ভবিষ্যতে একটি খামার করার ইচ্ছে। এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। নিজে লেখাপড়ায় এগুতে না পারলেও সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে চান এই ব্যবসায়ী। খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন শাহজাহানপুর হাটের ইজারাদার সিকদার কনস্ট্রাকশন। এ বছর হাটের ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৪ টাকা।