ঢাকা ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় গোয়েন্দা জালে ভারতীয় নারী জঙ্গি প্রজ্ঞা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০ ৪৮৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক : নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জমায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের নানা রকম সমাজবিরোধী কাজ করে আসছিলো একটি চক্র। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জড়িত অনেক জঙ্গি সদস্য আটক হয়েছে। বাংলাদেশে বড় ধরণের কোন হামলার সক্ষমতা হারিয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠী। সাধারণ মানুষও সচেতন হয়েছে। বিশেষ করে গুলশান হামলার পর বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযান সর্বমহলের প্রশংসা পায়। জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জঙ্গি সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ। জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িদ থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে। তারপর থেকে আত্মগোপনে থেকে অনলাইন ভিত্তিক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে বা হচ্ছে। এতকিছুর পরও যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জঙ্গি সংগঠনের কাজকর্ম একেবারে বন্ধ তা বলা যাবে না। মাঝে মাঝেই জেএমবির সদস্যদের আটক করার সংবাদ মিলছে।
সর্বশেষ নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত প্রজ্ঞা নামের এক ভারতীয় নারী জঙ্গিকে আটক করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। আটককৃত নারী ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুল ধারণ করে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কর্মকান্ডে উৎসাহিত হয়ে তিনি ধর্মান্তরিত হোন। পরে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে যাতায়ত শুরু করেন। তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে শিক্ষকতার আড়ালে তিনি অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রমে নারীদের রিক্রুটমেন্ট করতেন এমন বিস্ফোরক তথ্য জানালেন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার শেখ ইমরান হোসেন। জঙ্গি কাজের জন্য বিদেশ থেকে অর্থ পেতেন বলেও জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
১৭ জুলাই প্রজ্ঞাকে দুই দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, আয়েশা ভারতীয় নাগরিক। সনাতন ধর্মাবলম্বী এই নারী অনলাইনে জেএমবির কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হন। তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গোপনে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতার কাজ করছিলেন। জানানো হয়, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে জেএমবির নারী শাখার প্রধান আসমা গ্রেপ্তার হন। এই আসমার সঙ্গেই আয়েশা ওরফে প্রজ্ঞার প্রথম পরিচয় হয়। আসমা গ্রেপ্তার হলে নব্য জেএমবির নারী শাখার দায়িত্ব নেন আয়েশা। আয়েশা আত্মগোপনে থেকে অনলাইনে নারী ও পুরুষ সদস্যদের রিক্রুটের কাজ চালানোর অভিযোগ। এই প্রজ্ঞা কাছেই দেশ-বিদেশ থেকে নব্য জেএমবির ফান্ড আসত। যা দিয়ে প্রজ্ঞা নারী সদস্য সংগ্রহ ও তাদের মোটিভেশন পেছনে ব্যয় করতেন।
গোয়েন্দারা এও জানতে পারেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কেরানীগঞ্জ থেকে একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেন। যা দিয়ে জাল বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) (ভারতে যাকে আধার কার্ড বলা হয়) তৈরি করেন। ধূর্ত এই নারী জঙ্গি বাংলাদেশি এক প্রবাসী নাগরিককে অনলাইনে বিয়েও করেন এবং বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পেতে জাল কাগজপত্রও তৈরি করেন। তার সঙ্গে অনলাইনে আরো অনেক নারীর যোগাযোগ রয়েছে এমন তথ্যও জানালেন গোয়েন্দা সূত্র। তাদেরও আটক করা হবে।
অপর দিকে ভারত সরকার গত বছর ২৪ মে জঙ্গি সংগঠন জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে। ১৯৬৭ সালের আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএপিএ) অনুযায়ী সহিংসতা ও নাশকতা ছাড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয় জেএমবি-কে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানসহ কয়েকটি বিস্ফোরণে জেএমবির জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্তত পাঁচটি সন্ত্রাসী ঘটনায় জেএমবির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে আসাম পুলিশ এবং এখন পর্যন্ত ভারতে অভিযুক্ত জেএমবি’র ৫৬ জঙ্গি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ঢাকায় গোয়েন্দা জালে ভারতীয় নারী জঙ্গি প্রজ্ঞা

আপডেট সময় : ০৪:৩৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০

 

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক : নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জমায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের নানা রকম সমাজবিরোধী কাজ করে আসছিলো একটি চক্র। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জড়িত অনেক জঙ্গি সদস্য আটক হয়েছে। বাংলাদেশে বড় ধরণের কোন হামলার সক্ষমতা হারিয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠী। সাধারণ মানুষও সচেতন হয়েছে। বিশেষ করে গুলশান হামলার পর বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযান সর্বমহলের প্রশংসা পায়। জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জঙ্গি সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ। জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িদ থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে। তারপর থেকে আত্মগোপনে থেকে অনলাইন ভিত্তিক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে বা হচ্ছে। এতকিছুর পরও যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জঙ্গি সংগঠনের কাজকর্ম একেবারে বন্ধ তা বলা যাবে না। মাঝে মাঝেই জেএমবির সদস্যদের আটক করার সংবাদ মিলছে।
সর্বশেষ নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত প্রজ্ঞা নামের এক ভারতীয় নারী জঙ্গিকে আটক করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। আটককৃত নারী ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুল ধারণ করে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কর্মকান্ডে উৎসাহিত হয়ে তিনি ধর্মান্তরিত হোন। পরে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে যাতায়ত শুরু করেন। তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে শিক্ষকতার আড়ালে তিনি অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রমে নারীদের রিক্রুটমেন্ট করতেন এমন বিস্ফোরক তথ্য জানালেন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার শেখ ইমরান হোসেন। জঙ্গি কাজের জন্য বিদেশ থেকে অর্থ পেতেন বলেও জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
১৭ জুলাই প্রজ্ঞাকে দুই দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, আয়েশা ভারতীয় নাগরিক। সনাতন ধর্মাবলম্বী এই নারী অনলাইনে জেএমবির কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হন। তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গোপনে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতার কাজ করছিলেন। জানানো হয়, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে জেএমবির নারী শাখার প্রধান আসমা গ্রেপ্তার হন। এই আসমার সঙ্গেই আয়েশা ওরফে প্রজ্ঞার প্রথম পরিচয় হয়। আসমা গ্রেপ্তার হলে নব্য জেএমবির নারী শাখার দায়িত্ব নেন আয়েশা। আয়েশা আত্মগোপনে থেকে অনলাইনে নারী ও পুরুষ সদস্যদের রিক্রুটের কাজ চালানোর অভিযোগ। এই প্রজ্ঞা কাছেই দেশ-বিদেশ থেকে নব্য জেএমবির ফান্ড আসত। যা দিয়ে প্রজ্ঞা নারী সদস্য সংগ্রহ ও তাদের মোটিভেশন পেছনে ব্যয় করতেন।
গোয়েন্দারা এও জানতে পারেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কেরানীগঞ্জ থেকে একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেন। যা দিয়ে জাল বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) (ভারতে যাকে আধার কার্ড বলা হয়) তৈরি করেন। ধূর্ত এই নারী জঙ্গি বাংলাদেশি এক প্রবাসী নাগরিককে অনলাইনে বিয়েও করেন এবং বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পেতে জাল কাগজপত্রও তৈরি করেন। তার সঙ্গে অনলাইনে আরো অনেক নারীর যোগাযোগ রয়েছে এমন তথ্যও জানালেন গোয়েন্দা সূত্র। তাদেরও আটক করা হবে।
অপর দিকে ভারত সরকার গত বছর ২৪ মে জঙ্গি সংগঠন জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে। ১৯৬৭ সালের আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএপিএ) অনুযায়ী সহিংসতা ও নাশকতা ছাড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয় জেএমবি-কে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানসহ কয়েকটি বিস্ফোরণে জেএমবির জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্তত পাঁচটি সন্ত্রাসী ঘটনায় জেএমবির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে আসাম পুলিশ এবং এখন পর্যন্ত ভারতে অভিযুক্ত জেএমবি’র ৫৬ জঙ্গি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।